হ্যাভ এ রিল্যাক্স…!

বাক্যটা হারিয়েই গেল। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দোষ বা গুণ তো এটাই। আজ আছে তো কাল নেই। আসলে আজকালের বিষষও নয়। এখন আছে, একটু পরই নেই; এটা বলাই ভালো। তাই এক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ‘হ্যাভ এ রিল্যাক্স’ শব্দবন্ধ এখন বলতে গেলে হারিয়েই গেছে, এসেছে নতুন কিছু!

খুব আরামে থাকলে বা চাপমুক্ত থাকলে একসময় বাক্যটি ব্যবহার করা হতো। ইংরেজি এই বাক্য হারিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি তো আর হারাতে পারে না। কেউ না কেউ তো ফুরফুরে মেজাজে, আরামে থাকেই। এই জিম্বাবুয়ে দলটার কথাই ধরুন না!

কী ফুরফুরে, চাপমুক্ত একটা দলের দেখাই না মিলল আজ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে! যেন এক সুখী পরিবার, যেখানে কোনো টেনশন নেই, নেই কোনো চাপটাপ বলে কিছু! সুখী তো বটেই।

জিম্বাবুয়েরে এই দলটার বাংলাদেশ সিরিজে প্রত্যাশা কী ছিল? সিরিজ জয়টয়ের কথা তো মুখেও আনেনি। টানা ১০ টেস্টে হারা দলটির এই সিরিজে একটা টেস্ট জয়ই অনেক বড় অর্জন। আর সেটা তারা সিলেটেই পেয়ে গেছে।

২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি তাদের হারার আর কোনো সুযোগই নেই। বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টে জিতলেও ট্রফি হবে ভাগাভাগি। জিম্বাবুয়ের আর টেনশন কিসের! এসবের ছাপই দেখা গেছে দলটির আজকের অনুশীলনে।

বাঁহাতি স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার ওয়েলিংটন মাসাকাদজা যেন জিম্বাবুয়ের সুখী পরিবারের সবচেয়ে সুখী মানুষ। প্রথম টেস্টে ৫ উইকেট নেওয়া এই স্পিনারকে আজ নতুন এক রূপেই দেখা গেছে।

এত দিন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, আজ কেন যেন তাঁর উড়ন্ত মনের ইচ্ছা জাগল সাক্ষাৎকার নেওয়ার! তাই তো বনে গিয়েছিলেন টিভি সাংবাদিক। সাক্ষাৎকার নিলেন সতীর্থ লেগ স্পিনার ভিনসেন্ট মাসেকেসার।

কিন্তু টিভি সাংবাদিকের তো হাতে একটা বুম অন্তত লাগবে! সেই বুম তিনি কোথায় পাবেন? ওই যে একটা কথা আছে না—ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়! আর এটা যেহেতু মনের আনন্দে সাজানো সাংবাদিকতা, তাই প্রয়োজনটাও মাসাকাদজা মিটিয়েছেন মিছেমিছি বুম দিয়ে।

হাতের ব্যাটটাকে উল্টোভাবে ধরে ব্যাটের হ্যান্ডলকেই বানালেন বুম। প্রয়োজনের তো শেষ নেই! এখন লাগবে ক্যামেরাম্যান…সেই ভূমিকায় ছিলেন দলটির মিডিয়া ম্যানেজার ডার্লিংটন। তিনি মোবাইল দিয়েই ভিডিও করার কাজটা সেরেছেন।

অনুশীলন দেখতে দেখতে চোখ গেল প্রথম টেস্টের ম্যাচসেরা ব্লেসিং মুজারাবানির দিকে। তিনি তো এদিন ছিলেন আরও রিল্যাক্স মুডে। পুরো দিনে একটা বলও পুরো রানআপ নিয়ে করেছেন কি না, সন্দেহ! জায়গায় দাঁড়িয়ে হাত ঘুরিয়ে কিছু বল করেছেন। ভাবখানা যেন এ রকম—অনুশীলন করে কাজ কী! তাঁরও আজ এক অন্য পরিচয়ের দেখা মিলেছে।

প্রথম টেস্টে ৯ উইকেট নেওয়া মুজারাবানি যেন হয়ে গিয়েছিলেন বোলিং কোচ। বাংলাদেশের নেট বোলারদের অনেকক্ষণ পরামর্শ দিয়েছেন ফ্রিতেই। অভিজ্ঞতা তো তাঁর কম হয়নি! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ২০০ উইকেটের মালিক। সর্বশেষ ৩ টেস্টের প্রতিটিতেই কোনো না কোনো ইনিংসে ৫টির বেশি উইকেট পেয়েছেন। পিএসএল, সিপিএল, ভাইটালিটি ব্লাস্ট—খেলেছেন সবখানে। চট্টগ্রামে নেট বোলারদের মাঝে হয়তো সেসব অভিজ্ঞতাই শেয়ার করেছেন মুজারাবানি।

বাংলাদেশের অনুশীলনের চেহারা ছিল একেবারেই উল্টো। ম্যাচের আগের দিন কিসের ঢিলেঢালা ভাব, দলের সবাই আজ ছিলেন বড্ড সিরিয়াস। নাজমুলের দলের বাড়তি গুরুত্ব দেখেও আবার জিম্বাবুয়ের অনুশীলনের আবহকে একটু বেশি হালকা লাগতে পারে!

সংবাদ সম্মেলনে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। আজ চট্টগ্রামে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দলট র উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ