Samakal:
2025-06-16@08:50:27 GMT

গরুর হাট বসাতে শ্মশান ভরাট

Published: 27th, April 2025 GMT

গরুর হাট বসাতে শ্মশান ভরাট

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নে দেড়শ বছরের পুরোনো শ্মশানে বালু ভরাট করে গরুর হাট তৈরির কাজ চলছে। ইউএনও এরশাদুল আহমেদের নির্দেশে এমনটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের। এ ঘটনায় ইউএনওর বিচার ও অপসারণ দাবিতে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন।
রোববার দুপুরে ঘণ্টাখানেক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে দু’পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষুব্ধরা। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউএনওর অপসারণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন শ্রীশ্রী করুণাময়ী কালীবাড়ি মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক অলক ঘোষ ছোটন, রাজিপুর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জনি দে, ঈশ্বরগঞ্জ মহাশ্মশানের সাধারণ সম্পাদক পিন্টু চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব গৌড়, উচাখিলা ইউনিয়নের সার্বজনীন শ্মশান কালীমন্দির কমিটির সভাপতি পরেশ চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক রাজীব সাহা রাজু প্রমুখ।
তাদের ভাষ্য, দেড়শ বছরের পুরোনো শ্মশানে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মানুষের শেষকৃত্য হয়ে আসছে। সেখানে তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের শেষকৃত্য হয়েছে। প্রতিবছর তাদের স্মরণে এখানে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। তাদের এই স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিতে ইউএনও যে পরিকল্পনা করেছেন, জীবন থাকতে তা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। বিক্ষুব্ধ লোকজন বলেন– দফা এক দাবি এক, ইউএনওর পদত্যাগ। দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউএনওকে অপসারণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এর আগে শনিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, উচাখিলা ইউনিয়নের বাজারের পাশেই কাঁচামাটিয়া নদী। নদীপাড় ঘেঁষে শ্মশানের অবস্থান। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের ফেলা বালুর নিচে চাপা পড়ে গেছে শ্মশানের নির্মাণাধীন কালীমন্দির। শ্মশানের দাহকার্য সম্পন্ন করার স্থানটির পাশের পিলারও ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার এই শ্মশানে শেষবারের মতো একজনের দাহকার্য সম্পন্ন হয়। চুল্লির পাশে মাটির কলসে সেই চিহ্ন পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৬ শতক জমি প্রায় দেড়শ বছর আগে শ্মশানের নামে দান করেন একজন। এর পর ১৯৪৭ সালের সিএস এবং ১৯৬২ সালের আরওআর শ্মশানের নামেই হয়। তবে ১৯৮৪-৮৫ সালের বিআরএসে শ্মশানের নাম না এসে সেটি সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানে উঠে যায়। ওই অবস্থায়ও শ্মশানে দাহকার্য হতো। এক পর্যায়ে চারপাশের বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে যায়। এর পর গত বছরের নভেম্বরে সাবেক ইউএনও সারমিনা সাত্তার এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইনসহ সেটি উদ্ধার করে শ্মশান কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেন। এর পর শ্মশানের নিজস্ব অর্থায়নে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ শুরু হয়, যা চলমান। এ অবস্থায় দেড়শ বছরের পুরোনো শ্মশানে গরুর হাট বসানোর জন্য বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে।
উচাখিলা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আবেদীন খান সেলিম বলেন, ‘শ্মশানটি পুরোনো। আমি চাই শ্মশানের জায়গায় শ্মশান থাকুক। সেটি উচ্ছেদ না হোক। গরুর হাটের জায়গায় গরুর হাট থাকুক। ইতোমধ্যে গরুর হাটের জন্য অনেকটা খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও উদ্ধার করা হোক। তবুও শ্মশান স্থানান্তর না হোক। 
এদিকে মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ওসি ওবায়দুর রহমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানান, শ্মশানের বিষয়টি নিয়ে শনিবার রাতেই ইউএনও শ্মশান-সংশ্লিষ্টসহ স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে আসেন। ওই আলোচনায় রোববার যারা মানববন্ধন, বিক্ষোভ করছেন তারা ছিলেন না। সেটাই তাদের আক্ষেপ। কারণ তাদের ছাড়াই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের আশ্বস্ত করে বলেছি, আপনারা একটা তারিখ এবং তালিকা দেন। আপনাদের সঙ্গেও বসা হবে। এর পর আপনারা যে সিদ্ধান্ত দেন, সেটাই মানা হবে।’
জানতে চাইলে ইউএনও এরশাদুল আহমেদ বলেন, শ্মশানের কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া হয়নি। এটা নিয়ে এক ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। উচাখিলা বাজারের গরুর হাটের ইজারা হচ্ছিল না। সরকারের রাজস্ব আয়ের স্বার্থে উদ্ধারকৃত (শ্মশানের পাশেই) সরকারি খাসজমি বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। বালু ভরাটের সময় নির্মাণাধীন মন্দিরের ৩টি পিলার ভেঙে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে শনিবার রাতেই শ্মশান-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আপাতত কাজ বন্ধ রেখে সোমবার (আজ) পরিদর্শন করে শ্মশান, মন্দির, স্নানঘর অক্ষত রেখে একটি স্থায়ী উদ্যোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরও একটি পক্ষ ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে বিক্ষোভ করেছে। তাদের সঙ্গেও আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর র হ ট মন দ র অবর ধ বছর র সহক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

৬ মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে ৩১টি পরিবার

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার খেজুরবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে উচ্ছেদ হওয়ায় ৩১টি পরিবার ছয় মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। বৈধ দলিল ছাড়া বসবাসের অভিযোগে গত বছর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। 

গত ৩১ ডিসেম্বর ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. বায়েজিদুর রহমান সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের খেজুরবাড়ী আবাসনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পূর্ব ঘোষণা বা লিখিত নোটিশ ছাড়া তাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেয় উপজেলা প্রশাসন। কোথাও ঠাঁই না পাওয়ায় গত ছয় মাস তারা আশ্রয়ণের তালাবদ্ধ ঘরের সামনে পলি-খড় দিয়ে বেড়া দিয়ে অস্থায়ীভাবে থাকছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদের পর এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, উচ্ছেদের সময় ইউএনও তাদের জানিয়েছিলেন, যাদের কাছে বৈধ দলিল নেই, কিন্তু যাওয়ারও কোনো জায়গা নেই, তাদেরকে তদন্ত করে দ্রুত পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে। আর যাদের অন্যত্র জমি বা ঘর আছে, তারা পুনর্বাসনের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন না। তবে সেই কথা আর বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি। অবিলম্বে স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উচ্ছেদের শিকার কিছু পরিবার সেখানে এক যুগের বেশি সময় ধরে বসবাস করছে। তখন হতদরিদ্র এসব পরিবারের বাড়িঘর সন্ধ্যা নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় খেজুরবাড়ী আশ্রয়ণে কিছু ঘর খালি থাকায় তৎকালীন ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যান তাদের সেখানে থাকতে দেন। 

ইউএনও বায়েজিদুর রহমান জানান, আবাসনের ওই ৩১টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বৈধ দলিল ছাড়াই সরকারি ঘরগুলো দখল করে বসবাস করেছে। তারা যে মালিকানা দাবি করে দলিল দেখাচ্ছে, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগেও তাদের একাধিকবার ঘর ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা তা মানেনি। উপজেলা প্রশাসন বাধ্য হয়ে সরকারি ঘর থেকে তাদের উচ্ছেদ করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৬ মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে ৩১টি পরিবার