নবীজি (সা.) অনেক সময় সাধারণ অর্থে মতামত দিতেন, আদেশ হিসেবে নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হতো নবীজির (সা.)সুপারিশ। নবীজির (সা.)আদেশ ও সুপারিশের মধ্যে পার্থক্য ছিল। আদেশ হলো, যা কার্যকর করা অপরিহার্য এবং ব্যতিক্রম করার উপায় নেই। তবে সুপারিশ হলো, কোনো বিষয়ে নবীজির (সা.)আগ্রহ। সুপারিশকৃত বিষয় পালন না করার স্বাধীনতা ব্যক্তির আছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাহাবিগণ নবীজির(সা.

) সুপারিশও কবুল করে নিতেন।

উভয় অবস্থার উদাহরণ পেশ করছি:

ইবনে আবু হাদরাদের কাছে কা’ব ইবনে মালিকের কিছু পাওনা ছিল। মসজিদে তাদের দেখা হলে কা’ব তাঁর পাওনা দাবি করলেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে উভয়ের স্বর উঁচু হলো। নবীজি (সা.) ঘর থেকে তাদের কথা শুনলেন। তাঁর কক্ষের পর্দা উঠিয়ে ডাক দিলেন, ‘কা’ব।’ কা’ব (রা.) বললেন, ‘জ্বি, আল্লাহর রাসুল।’ নবীজি(সা.) বললেন, ‘তুমি তোমার পাওনা এইটুকু ছেড়ে দাও।’ ইশারা করে দেখালেন, অর্ধেক কমিয়ে দাও। কা’ব বললেন, ‘আমি তা-ই করছি, আল্লাহর রাসুল।’ এরপর নবীজি(সা.) ইবনে আবু হাদরাদকে বললেন, ‘যাও, এবার তার পাওনা আদায় করে দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৫৭; মুসলিম, হাদিস: ১,৫৫৮)

আরও পড়ুনমহানবী (সা.) এবং এক কুস্তিগিরের গল্প১০ এপ্রিল ২০২৫

কা’ব (রা.)-এর কাছে নবীজি (সা.)তার পাওনা অর্ধেক কমিয়ে দেওয়ার যে অনুরোধ করেছেন, তা মূলত সুপারিশ ছিল; আদেশ নয়। কা’ব যদিও তক্ষুনি তার অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন, তবে সাড়া না দেওয়ার অধিকারও তার ছিল। কিন্তু তিনি নবীজির সুপারিশ কবুল করে নিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত উদাহরণটি ঠিক এর বিপরীত।

বারিরা (রা.) ছিলেন দাসী। তাকে মুক্ত করে দিলেন তার মালিক। কিন্তু তার স্বামী তখনও দাস। দাসত্ব থেকে মুক্ত হলে স্ত্রীর অধিকার থাকে বিয়ে বহাল রাখা বা না রাখার। বারিরা (রা.) তার বিবাহ ভেঙে দিলেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘বারিরার স্বামীকে মুগিস নামে ডাকা হতো। সেই দৃশ্য যেন আমি এখনো দেখছি যে, সে বারিরার পেছনে ঘুরছে আর কান্নামাখা অশ্রু তার দাঁড়ি বেয়ে ঝরছে।’ নবীজি (সা.) আব্বাসকে বললেন, ‘আব্বাস, বারিরার প্রতি মুগিসের ভালোবাসা আর মুগিসের প্রতি বারিরার অবজ্ঞা দেখে তোমার অবাক লাগছে না?’ নবীজি(সা.) বারিরাকে বললেন, ‘যদি তুমি তাকে ফিরিয়ে নিতে!’ বারিরা বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আদেশ করছেন?’ নবীজি(সা.) বলেন, ‘আমি শুধু সুপারিশ করছি।’ বারিরা বলেন, ‘তাকে আমার কোনো দরকার নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,২৮৩)

বারিরা (রা.) কিন্তু নবীজির(সা.) সুপারিশ কবুল করেননি। কারণ স্বামীর প্রতি তিনি বীতশ্রদ্ধ ছিলেন এবং তার সঙ্গে তিনি জীবন কাটাতে চাইছিলেন না।

এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, সাহাবিদের অন্তরে নবীজির(সা.) আদেশ ও সুপারিশের মধ্যকার ব্যবধান কত স্পষ্ট ছিল। এমনকি দাস-দাসীদের কাছেও তা ছিল পরিষ্কার।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.) এবং এক ইহুদি ছেলের গল্প০৫ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন

তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের। 

দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত। 

আরো পড়ুন:

রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন

টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়

প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।

তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।

গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে। 

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। 

ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে। 

২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ