সেতুর অভাবে দুর্ভোগ তিন জেলার মানুষের
Published: 28th, April 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর দীঘিরপাড়ে পদ্মার শাখা নদীতে একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লাখো মানুষ। উপজেলার দীঘিরপাড় বাজার ও দীঘিরপাড় চরের সঙ্গে একটি সেতু নির্মাণ হলে টঙ্গিবাড়ীর বাসিন্দাদের পাশাপাশি উপকৃত হবে পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলার সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে, সেতু না থাকায় এসব এলাকার বাসিন্দাদের জন্য পদ্মার শাখা নদী পারাপারে ট্রলারই একমাত্র ভরসা। ট্রলারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষাসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের।
উপজেলার দীঘিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা আউয়াল মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, দীঘিরপাড় বাজারের পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী। এই নদীর ওপারে রয়েছে দীঘিরপাড় চর। নদী পারাপারে একমাত্র বাহন ট্রলার। একই শাখা নদী পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, কাঁচিকাটা, কুণ্ডেরচর ও কোরবি মনিরাবাদ ঘড়িশাল এবং চাঁদপুর জেলার হাইমচরের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। সহজ যোগাযোগের কারণে শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের এসব এলাকার বাসিন্দারা রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এ পথে যাতায়াত করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তারা মূল পদ্মা পাড়ি দিয়ে দীঘিরপাড় চরে আসেন। এর পর চর থেকে ট্রলারে পদ্মার শাখা নদী পার হয়ে দীঘিরপাড় বাজারে যান। সেখান থেকে সড়কপথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে তাদের সময় কম লাগে। মূল পদ্মা নদী ট্রলারে পাড়ি দিলেও দীঘিরপাড় বাজারের পদ্মার শাখা নদী পাড়ি দিতে ট্রলারের জন্য তাদের অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। আবার মোটরসাইকেল নিয়ে পারাপার হতে খরচ পড়ে যায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। রাতে ভাড়া বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অথচ এখানে প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু হলে তাদের দুর্ভোগ লাঘব হতো।
একটি সেতু তাদের জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কার্যক্রমও গতিশীল হবে। একই সঙ্গে পদ্মার শাখা নদী পারাপারে একমাত্র ট্রলারের ওপর ভরসা করতে হবে না। দীর্ঘ বছরের ভোগান্তি নিরসন হবে পদ্মাপারের মানুষের।
কথাগুলো বলছিলেন শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুদ জমাদ্দার। তাঁর মতো এই পথ দিয়ে প্রতিদিন চলাচলরত হাজার হাজার মানুষের একই মত বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা আলী আক্কাস।
শরীয়তপুরের কাঁচিকাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা ইয়াসিন ব্যাপারী বললেন, আমরা শরীয়তপুরের মানুষ হলেও আমাদের সব কাজকর্ম করতে মুন্সীগঞ্জেই সুবিধা। আমাদের হাট-বাজার করতে হয় দীঘিরপাড় বাজারে। ঢাকায় যাই এ পথ দিয়ে। রাতে ট্রলার পাওয়া যায় না। ট্রলার পেলেও ৫০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা গুনতে হয়। নদীপথে সময় লাগে বেশি। যদি দীঘিরপাড় বাজার এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ হতো, তাহলে আমাদের এত ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হতো না। খুব সহজে সড়কপথে ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ যেতে পারতাম।
সম্প্রতি দেখা যায়, পদ্মার শাখা নদীর পূর্বপার থেকে ট্রলারভর্তি মানুষ আসছে। ট্রলার থেকে নেমে মানুষ দীঘিরপাড় বাজার, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদ, মুন্সীগঞ্জ শহর ও রাজধানী ঢাকার দিকে ছুটছেন। একইভাবে ট্রলার ভর্তি করে নদীর পশ্চিম পারে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নদীর উত্তর এবং দক্ষিণ পাশ থেকে ট্রলার ভর্তি করে দীঘিরপাড় হাটে কেউ মালপত্র বিক্রি করতে আসছেন, কেউবা এ হাট থেকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গৃহস্থালির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে বাড়ি ফিরছেন। সবকিছুই হচ্ছে ট্রলারের ওপর ভরসা করে।
দীঘিরপাড় ইউনিয়নের মূলচর গ্রামের বাসিন্দা মাসুম জমাদ্দার বলেন, ‘রাতে ট্রলার পাওয়া যায় না। পেলেও ভাড়া দিতে হয় ১০ গুণ। আমাদের মুন্সীগঞ্জের দিকে যাতায়াত বেশি, কিন্তু এ নদী পার হতে প্রতিদিন নানা সমস্যায় পড়তে হয়।’
স্থানীয়দের ভাষ্য, পদ্মার শাখা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মিত হলে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর দীঘিরপাড়, কামারখাড়াসহ আশপাশ এলাকা, শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, চাঁদপুরের হাইমচরসহ সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষ উপকৃত হবেন।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শাহ মোয়াজ্জেম বলেন, দীঘিরপাড় বাজার লাগোয়া পদ্মার শাখা নদীর ওপর ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ এবং নদীর পশ্চিম পাশে ৪ কিলোমিটারের একটি আরসিসি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিক মাটি পরীক্ষা ও সার্ভে সম্পন্ন করেছে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল। নকশা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদ ম র শ খ র জন য আম দ র উপজ ল র একট র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?