লাশ আটকে সম্পত্তির ভাগবাঁটোয়ারা স্ত্রী-সন্তানদের, ২৪ ঘণ্টা পর দাফন
Published: 29th, April 2025 GMT
উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার এক ব্যক্তির মরদেহ দাফনের আগে ২৪ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। গতকাল সোমবার উপজেলার সুন্দরপুর ইউপির বড় মরাপাগলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত ব্যক্তির নাম মাজেদ বিশ্বাস (৫০)। তাঁর দুই পুলিশ সদস্য ছেলের বিরুদ্ধে সৎমা ও বোনদের বঞ্চিত করে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে এ ঘটনা ঘটে। পরে গ্রাম্য সালিসে সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে বাড়িতে লাশ আনার ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে দাফন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান।
ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাজেদ বিশ্বাসের প্রথম স্ত্রীর ১০টি সন্তান ছিল। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। জীবিত সাত সন্তানের মধ্যে চার মেয়ে ও তিন ছেলে। বছর বিশেক আগে স্ত্রী মারা গেলে হামফুল বেগম নামের এক নারীকে বিয়ে করেন তিনি। এ সংসারে কোনো সন্তান হয়নি। হামফুল মাজেদের ছোট শিশুসন্তানদের আদরযত্নে বড় করেন। মাজেদের দুই ছেলে লতিফুর রহমান ও আবদুল জাব্বার পুলিশে চাকরি করেন। মাস ছয়েক আগে মাজেদ বিশ্বাস অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হলে লতিফুর ও জাব্বার চিকিৎসার কথা বলে বাবাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যান এবং বাবার সম্পত্তি নিজেদের ও এক ভাতিজার নামে লিখিয়ে নেন। এর মধ্যে ১৬ এপ্রিল মাজেদ বিশ্বাসের নামে একটি তালাকনামা উকিল নোটিশের মাধ্যমে হামফুল বেগমের কাছে পাঠানো হয়। হামফুল সেটি গ্রহণ করেননি। এ নিয়ে হামফুল বেগম স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিলে আগামী ৫ মে গ্রাম্য সালিসের দিন নির্ধারণ হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় লোকজন বলেন, এর মধ্যে মাজেদ বিশ্বাস আবার অসুস্থ হলে লতিফুর ও জাব্বার তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। লাশ দাফনের জন্য তাঁর দুই ছেলে গ্রামের বাড়ি নিয়ে এলে মাজেদের স্ত্রী হামফুল বেগম স্বজন ও এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে দাফনে বাধা দেন। সোমবার সকাল ও বিকেলে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দুই দফা গ্রাম্য সালিসে বসেন তিনজন ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। শেষে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে সিদ্ধান্ত হয়, অংশীদারদের মধ্যে সম্পত্তির বণ্টন হবে। এরপর দাফন হয়। এই পুরো সময় লাশ ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে ছিল।
এ বিষয়ে জানতে মাজেদ বিশ্বাসের ছেলে পুলিশের উপপরিদর্শক লতিফুর রহমানের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, ‘ঘটনা শুনে পুলিশ টিম পাঠিয়েছিলাম। সালিসে মীমাংসা হয়ে লাশ দাফনের কথা জেনেছি।’ অভিযুক্ত দুই ছেলের পুলিশে চাকরির কথা নিশ্চিত করেছেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?