২৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় স্থানীয় সরকার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। এটি ছিল মূলত তাঁর মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারি কাজে তাঁর বাবার লাইসেন্স পাওয়া নিয়ে।

ওই সাক্ষাৎকারে তাঁকে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার সংস্থায় আদালতের রায় নিয়ে মেয়র পদে বসা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, ওই নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে এবং অ্যাকনলেজ (স্বীকৃতি দেওয়া) করা হচ্ছে। আমার মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর এই নির্বাচনগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা এবং অবৈধ নির্বাচন থেকে কোনো প্রাপ্তিস্বীকার না করার সততাটা থাকা উচিত।’

এর আগে জাতীয় সংসদের একাধিক নির্বাচনেও পরাজিত প্রার্থী আদালতে মামলা করে পক্ষে রায় পেয়েছেন। অনেক বিলম্বে। কখনো সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, কখনো আবেদনকারী মারা যাওয়ার পর।

চট্টগ্রামের বিএনপির দলীয় প্রার্থী শাহাদাত হোসেন মেয়াদের আগে রায় পাওয়ায় শপথ নিয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু ইশরাকের বেলায় দলের সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি। যদি দল শপথ নেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, তিনি সময় পাবেন আগামী ১৫ মে পর্যন্ত।

এ ঘটনায় আরেকটি কঠিন সত্য বেরিয়ে এল। নির্বাচনী অনিয়ম ও কারচুপির বিরুদ্ধে আদালতে যেসব মামলা হয়, সেগুলো ১৮০ দিন বা ছয় মাসের মধ্যেই রায় হওয়া উচিত। বছরের পর বছর এসব মামলা ঝুলে থাকলে আদালতের ন্যায়বিচারও বিচারপ্রার্থীর কোনো কাজে লাগে না।

আদালতের এই রায় ক্ষমতাসীনদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে, আশা করি। আদালত যখন কোনো প্রার্থীর পক্ষে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের দেওয়া রায় অবৈধ ঘোষণা করলেন, তখন সেই পদের বিপরীতে তিনি যে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, সেটাও ফেরত দেওয়া উচিত। তাহলে ভবিষ্যতে কেউ এই পথে যেতে সাহস পাবেন না।

নির্বাচন সংস্কার কমিশন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে অনেকগুলো সুপারিশ করেছে। যেসব সুপারিশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকারও কার্যকর করতে পারে।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী হিসেবে মেয়র ঘোষণা করা হয়। এ-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ৩ মার্চ তাপস, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ আটজনকে বিবাদী করে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। ইশরাক প্রয়াত বিএনপি নেতা ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে। ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল।

এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার তাঁকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে নয়জনকে বিবাদী করে মামলা করেন মেয়রপ্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে অপসারণ করে গত ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো.

তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার।

শাহাদাত হোসেন, ইশরাক হোসেন এবং সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র ব এনপ ইশর ক

এছাড়াও পড়ুন:

অবৈধ নির্বাচনের ‘বৈধ’ মেয়রগণ

২৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় স্থানীয় সরকার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। এটি ছিল মূলত তাঁর মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারি কাজে তাঁর বাবার লাইসেন্স পাওয়া নিয়ে।

ওই সাক্ষাৎকারে তাঁকে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার সংস্থায় আদালতের রায় নিয়ে মেয়র পদে বসা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, ওই নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে এবং অ্যাকনলেজ (স্বীকৃতি দেওয়া) করা হচ্ছে। আমার মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর এই নির্বাচনগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা এবং অবৈধ নির্বাচন থেকে কোনো প্রাপ্তিস্বীকার না করার সততাটা থাকা উচিত।’

এর আগে জাতীয় সংসদের একাধিক নির্বাচনেও পরাজিত প্রার্থী আদালতে মামলা করে পক্ষে রায় পেয়েছেন। অনেক বিলম্বে। কখনো সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, কখনো আবেদনকারী মারা যাওয়ার পর।

চট্টগ্রামের বিএনপির দলীয় প্রার্থী শাহাদাত হোসেন মেয়াদের আগে রায় পাওয়ায় শপথ নিয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু ইশরাকের বেলায় দলের সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি। যদি দল শপথ নেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, তিনি সময় পাবেন আগামী ১৫ মে পর্যন্ত।

এ ঘটনায় আরেকটি কঠিন সত্য বেরিয়ে এল। নির্বাচনী অনিয়ম ও কারচুপির বিরুদ্ধে আদালতে যেসব মামলা হয়, সেগুলো ১৮০ দিন বা ছয় মাসের মধ্যেই রায় হওয়া উচিত। বছরের পর বছর এসব মামলা ঝুলে থাকলে আদালতের ন্যায়বিচারও বিচারপ্রার্থীর কোনো কাজে লাগে না।

আদালতের এই রায় ক্ষমতাসীনদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে, আশা করি। আদালত যখন কোনো প্রার্থীর পক্ষে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের দেওয়া রায় অবৈধ ঘোষণা করলেন, তখন সেই পদের বিপরীতে তিনি যে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, সেটাও ফেরত দেওয়া উচিত। তাহলে ভবিষ্যতে কেউ এই পথে যেতে সাহস পাবেন না।

নির্বাচন সংস্কার কমিশন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে অনেকগুলো সুপারিশ করেছে। যেসব সুপারিশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকারও কার্যকর করতে পারে।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী হিসেবে মেয়র ঘোষণা করা হয়। এ-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ৩ মার্চ তাপস, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ আটজনকে বিবাদী করে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। ইশরাক প্রয়াত বিএনপি নেতা ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে। ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল।

এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার তাঁকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে নয়জনকে বিবাদী করে মামলা করেন মেয়রপ্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে অপসারণ করে গত ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার।

শাহাদাত হোসেন, ইশরাক হোসেন এবং সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম

সম্পর্কিত নিবন্ধ