নবীগঞ্জ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ফলাফল বিপর্যয়ের নেপথ্যে.........
Published: 30th, April 2025 GMT
বন্দরের নবীগঞ্জ গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের সুনাম নষ্টে একের পর এক অপকর্ম করে চলেছে নবগঠিত এডহক কমিটির বিতর্কিত সদস্য ফেরদৌস ওয়াহিদ সুমন।
নিয়ম বহির্ভূতভাবে এসএসসি ফেল সন্তানের অভিভাবক হিসেবে সদস্য হওয়ার পর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে এই সুমন। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের সুনাম নষ্ট করার লক্ষ্যে একের পর অপপ্রচার করে চলেছে সে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার আগে টেস্ট পরীক্ষায় ১০ম শ্রেণী ৬৮ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে ফেল করে বা অকৃতকার্য হয়। যার প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সায়মা খানম ঐ শিক্ষার্থীদেরকে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহনে বাধা প্রদান করেন।
তখন তিনি বলেছিলেন, তোমরা আরও ভালো করে পরীক্ষার প্রিপারেশন নিয়ে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিও। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীণ সভাপতি ও বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলও এই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহন করার অনুমতি দেননি। যার ফলশ্রুতিতে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষও তাদেরকে অনুমতি প্রদান করেননি।
কিন্তু, বর্তমান এডহক কমিটির বিতর্কিত সদস্য এবং বিগত কমিটিরও সদস্য ফেরদৌস ওয়াহিদ সুমন অনেকটা জোরপূর্বকভাবে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও অধ্যক্ষ্যের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে ৬৮ শিক্ষার্থীকে নিজ জিম্মায় পরীক্ষায় অংশগ্রহনের অনুমতি দেন।
যার সুস্পষ্ট প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। সুমনের একগুয়ে সিদ্ধান্তের কারণে ঐ ৬৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৭ জন শিক্ষার্থীই ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষা ফেল করে, যেখানে সুমনের নিজের সন্তানও রয়েছে।
তবে, বিতর্কিত এই সুমন পুনরায় এডহক কমিটির সদস্য হওয়ার পর থেকে এখন নিজেকে সাধু প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এক ব্যক্তির স্ট্যাটাসে নবীগঞ্জ গার্লস স্কুলের খারাপ রেজাল্টের দায় প্রধান শিক্ষক তথা অধ্যক্ষের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করে সে।
ফেরদৌস ওয়াহিদ সুমন তার ফেসবুক আইডি থেকে ঐ স্ট্যাটাসে যে কমেন্ট করেছেন তা তুলে ধরা হলো, সুমন লিখেছেন, বন্দর থানায় ২৩ টি বিদ্যালয় রয়েছে তার মধ্যে ২০ তম হয়েছে নবীগঞ্জ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। তার কারণ অযোগ্য প্রধান শিক্ষিকা, অশিক্ষিত সভাপতির কারণে দিন দিন বিদ্যালয়টি ধংশ হয়ে যাচ্ছে। আরো একটি কমেন্টে একটি ছবি পোষ্ট করে সেখানে বিদ্যালয়ের ২০তম হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে সে।
এদিকে, সুমনের এমন কান্ডে অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পুরো বন্দর উপজেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবকরা বলছেন, চোরের মায়ের বড় গলা। টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেয়া সুমন এখন নিজে সাধু সাজার চেষ্টা করছে। এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষিকা ও সাবেক সভাপতির উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।
অভিভাবকরা আরও বলছে, নিজের দোষ ঢাকতে সুমন এমন চতুরতার আশ্রয় নিচ্ছে। মূলত বিদ্যালয়ের পাশের হার কম হওয়ার পিছনে সুমনই দায়ী। যা এই বিদ্যালয়ের বিগত ৫ বছরের এসএসসি পরীক্ষার পাশের হারের দিকে তাকালেই দেখা যায়। যেখানে অন্যান্য বছর ৮০ থেকে ৯৮ পারসেন্ট ছিলো পাশের হার, সেখানে সুমনের একগুয়ে সিদ্ধান্তের কারণে ২০২৪ সালে পাশের হার নেমে আসে ৬৫ পারসেন্টে।
কিভাবে এই এডহক কমিটির সদস্য হলেন তা জানতে চাইলে অভিযুক্ত সুমন বলেন, ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে একটি গেজেট প্রকাশিত হয়েছে যেখানে বলা আছে, ইউএনও চাইলে যে কাউকে এডহক কমিটিতে সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করতে পারেন।
গত বছরের ফেল করা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলো ১১ জন, আমি একা কিভাবে করবো? সেখানে আপনার স্বাক্ষর আছে উল্লেখ করা হলে সুমন আমতা আমতা করেন। পরবর্তীতে তিনি বলেন, আমার স্বাক্ষর নকল করা হয়েছে।
সেই কমিটির সভাপতি ছিলো সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, তাকে বাইলট করে আমি কিভাবে সুযোগ দিতে পারি? কিন্তু পরীক্ষায় অংশগ্রহনের অনুমতি পত্রে সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল এবং প্রধান শিক্ষিকার কোনো স্বাক্ষর ছিলো না এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে, জানালে তিনি ফোন কেটে দেন।
অপরদিকে, ফেরদৌস ওয়াহিদ সুমন কিভাবে এডহক কমিটির সদস্য হলো এমন প্রশ্ন করা হলে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। যদি নিয়মবহির্ভূত কিছু হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, শুরু থেকেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে নবীগঞ্জ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের এডহক কমিটি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চার সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেয়। এই এডহক কমিটিতে অভিভাবক সদস্য হিসেবে ফেরদৌস ওয়াহিদ সুমন নামের একজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ফেরদৌস ওয়াহিদ সুমন নামের ওই ব্যক্তি ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করা এক শিক্ষার্থীর বাবা। অকৃতকার্য শিক্ষার্থী হিসেবে তার সন্তান এ বছর আবারও এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। একাধিক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিদ্যালয়ের নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে কিভাবে একজন দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবককে এডহক কমিটির সদস্য করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এখানে পুরোপুরি অযৌক্তিকভাবে এবং আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ফেরদৌস ওয়াহিদ সুমনকে সদস্য করা হয়েছে। তার উপর সেই শিক্ষার্থী গত বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। অভিভাবকদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং অবিলম্বে তারা এই বিতর্কিত কমিটি ভেঙ্গে দিতে শিক্ষা অফিসার, ইউএনও, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) এবং জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স ল র এসএসস পর ক ষ য় অ শ ২০২৪ স ল সদস য হ স মন র ফ ল কর র অন ম উপজ ল গ রহন হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।