দুই বছর পর মামলা, আসামি আওয়ামী লীগের নেতা, সাংবাদিকসহ ১৫৮ জন
Published: 1st, May 2025 GMT
বরগুনা জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনার দুই বছর পর বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১৫৮ জনের নামে মামলা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে। এমনকি আসামির তালিকায় আছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাও। এই মামলা নিয়ে খোদ বিএনপি নেতাদের মধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
পুলিশ বলছে, গত ৩০ এপ্রিল এস এম নইমুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মামলাটি করেন। তিনি বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত এস এম নজরুল ইসলামের ছেলে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের পাশাপাশি এই মামলায় বিস্ফোরক আইনের ধারাও সংযোজন করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এরই মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপিতে নইমুল ইসলামের কোনো পদ-পদবি নেই। মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের বরগুনা সদর উপজেলা শাখার ৮ নম্বর সদর ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব সোহাগ মৃধাকেও আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁকে জেলা যুবলীগের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া শহরের দুজন ব্যবসায়ীকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বরগুনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে। এ ছাড়া আসামির তালিকায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.
আসামিদের মধ্যে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও জাহাঙ্গীর কবির বর্তমানে কারাগারে। এ মামলায় আক্তারুজ্জামান নামে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি গত বুধবার অন্য একটি মামলায় জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
বরগুনা জেলা বিএনপির অন্তত সাতজন নেতা-কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে জানান, বরগুনায় বিএনপির কোনো জেলা কমিটি নেই। এই মামলা করার বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করা হয়নি। মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন নেতার নামও যুক্ত করা হয়েছে, যা বিস্ময়কর।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আসামিরা একটি মিছিল বের করে বরগুনা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালান। হামলার সময় তাঁরা অফিস কক্ষ তছনছ করেন, আসবাব, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জাম ভাঙচুর করেন এবং সেগুলো সড়কে স্তূপ করে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া একাধিক হাতবোমা কার্যালয়ের ভেতর ও বাইরে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
মামলার বাদী এস এম নইমুল ইসলাম বলেন, ওই সময় তাঁরা প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার পাননি। বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে করা মামলা। বিএনপির নেতা-কর্মীরাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ মামলা নিয়ে নানা সমালোচনা করছেন। এতেই বোঝা যায়, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা।’
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, ইতিমধ্যে মামলার একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম ব এনপ র বরগ ন সদস য উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সেই মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মিনহাজ মান্নান
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমনের আপিল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. যাবিদ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
এ রায়ের ফলে ওই মামলা থেকে মিনহাজ মান্নান অব্যাহতি পেলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী মঈন ফিরোজী।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ওই মামলায় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মিনহাজ মান্নান ইমনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। পলাতক অপর চার আসামি হলেন সুইডেনপ্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরিপ্রবাসী সামিউল ইসলাম খান ওরফে স্যাম ওরফে জুলকার নাইন, আশিক ইমরান ও ওয়াহিদুন নবী।
দিদারুল ইসলাম ও মিনহাজ মান্নান নারাজি আবেদন দিলে তা নামঞ্জুর হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে মিনহাজ মান্নান একই বছর হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে মিনহাজ মান্নানের ক্ষেত্রে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে মিনহাজ মান্নানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মঈন ফিরোজী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ তুলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় ১১ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৫ মে মামলাটি করা হয়। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। এতে কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল ইসলামকে আসামি করা হয় এবং আটজনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন১০ মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন কার্টুনিস্ট কিশোর০৪ মার্চ ২০২১এ মামলায় কারাবন্দী মুশতাক আহমেদ ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এ কারণে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, অভিযোগ গঠনের সময় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির ছিলেন দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান। তাঁরা নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান। সেদিন কার্টুনিস্ট কিশোর আদালতে হাজির না থাকায় তাঁর জামিন বাতিল করা হয়।
আরও পড়ুনআজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত লেখক মুশতাক২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১