দিল্লিতে ঝড়ে নিহত ৪, জনজীবন বিপর্যস্ত
Published: 2nd, May 2025 GMT
পূর্বাভাস ছিলই, তা মিলেও গেল আজ শুক্রবার ভোরে। ভারতের রাজধানী দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল বিপর্যস্ত হলো প্রচণ্ড ঝড়–বৃষ্টিতে। ঝড়ে গাছ উপড়ে মারা গেলেন এক পরিবারের চারজন। রাস্তায় রাস্তায় পানি জমে যায়। সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় বিমান পরিষেবা ও ট্রেন চলাচল। ঝড়–বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে আজকের দিনের শেষ দিকেও।
আজ ভোর পৌনে পাঁচটা থেকে শুরু হয় দমকা ঝড় ও প্রচণ্ড বৃষ্টি। স্থানভেদে ঝড়ের গতি ছিল ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। কোথাও কোথাও বজ্রপাতও হয়। দমকা ঝড়ে দিল্লি বিমানবন্দরের পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে দ্বারকা এলাকায় নজফগড় অঞ্চলে এক বাড়ির ওপর গাছ ভেঙে পড়লে তিন শিশুসহ মারা যান তাদের মা। পরিবারের পুরুষ কর্তা আহত হন।
ঝড়ের প্রকোপ এত তীব্র ছিল যে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য দিল্লি বিমানবন্দর অচল হয়ে পড়ে। বহু বিমানের অবতরণে প্রায় এক ঘণ্টা বিলম্ব ঘটে। বেশ কিছু বিমান দিল্লির বদলে জয়পুর, লক্ষ্ণৌ ও আহমেদাবাদে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অবতরণের জন্য। ফ্লাইটরেডার জানায়, বিমান ছাড়তে বিলম্ব হয় ২১ থেকে ৬১ মিনিট পর্যন্ত।
দিল্লি বিমানবন্দরের ৩ নম্বর টার্মিনালে একটি লোহার কাঠামো ভেঙে পড়ে। তবে ওই ঘটনায় কেউ আহত হননি।
দিল্লি বিমানবন্দরে বেশ কিছুদিন ধরেই নানা ধরনের অব্যবস্থার অভিযোগ উঠছে। আজকের ঝড়–বৃষ্টি তা আরও বাড়িয়ে দেয়।
এই ঝড়ে গাছ উপড়ে ট্রেন চলাচলও ভালো রকম ব্যাহত হয়। রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়, কোথাও রেললাইনের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে, কোথাও ওভারহেডের তার ছিঁড়ে যায়। ফলে ২০–২৫টি ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। কিছু ট্রেনের সময়সীমা বদলে দেওয়া হয়। ফলে কোনো কোনো ট্রেন ছাড়ে ঝড়–বৃষ্টি থামার পর।
এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দরুন রাজধানীর বহু এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইন্টারনেট পরিষেবাও। বহু এলাকায় পানি জমে যায়। অল্প সময়ে বেশি পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় জায়গায় জায়গায় নিকাশিব্যবস্থাও বানচাল হয়ে পড়ে। বহু স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। অফিসগামী যাত্রীদের পড়তে হয় যানজটে। এককথায়, জনজীবন বিপর্যস্ত।
অবশ্য ঘণ্টা তিনেকের এই ঝড়–বৃষ্টি দিল্লির তাপমাত্রা এক ধাক্কায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছিল ৪০ ডিগ্রির আশপাশে। আজ সকালে তা ঝুপ করে নেমে যায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মাঝবৈশাখে নেমে আসে ফাল্গুনের আমেজ।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ সারা দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝড়–বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। এমন পূর্বাভাস রয়েছে আগামীকাল শনিবারেও। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজধানী দিল্লি ও তার আশপাশে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আজ ভোরে কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়েছে ৮০ মিলিমিটার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঝড় ব ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
সাগরে এক ট্রলারে ৪০ লাখ টাকার ইলিশ
সাগরে এফবি সাফাওয়ান-৩ ট্রলারের জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ১৭০ মণ ইলিশ মাছ। দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের কুয়াকাটা থেকে ৬০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে এই ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সাইফ ফিশ আড়তে এই মাছ বিক্রির উদ্দেশ্যে ওঠানো হয়। মাছগুলো ডাকের মাধ্যমে বিক্রি হয় ৪০ লাখ টাকায়। ট্রলারটিতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় তাদেরই আরেকটি ট্রলার সাইফ-২ এ আরো কয়েক মণ ইলিশ তুলে দেওয়া হয়।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সূত্রে জানাগেছে, পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সাইফ কোম্পানির এফবি সাফওয়ান-৩ মাছ ধরার ট্রলার গত ২৯ অক্টোবর সকালে পাথরঘাটা থেকে ১৯ জন জেলে নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়।
ওই দিন বিকেলে কুয়াকাটা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে জাল ফেলার পরই রাতে মাছগুলো ধরা পড়ে। ট্রলারটিতে জায়গায় সংকুলান না হওয়ায় তাদেরই আরেকটি ট্রলার সাইফ-২ এ আরো কয়েক মণ তুলে দেওয়া হয়। জেলেরা বলছে, সব মিলিয়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে।
এফবি সাফাওয়ান-৩ ট্রলারের মাঝি রুবেল হোসেন বলেন, “আমরা ২৯ অক্টোবর সাগরে যাই। বিকেলে লম্বা জাল (ইলিশ জাল) ফেলার পর রাত আটটার দিকে জালের অবস্থা দেখে বুঝতে পারি প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। রাত আটটা থেকে জাল টানা শুরু করে পরদিন দুপুর দেড়টা পর্যন্ত জাল ট্রলারে উঠানো শেষ হয়।”
সাইফ ফিশিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক মনিরুল হক মাসুম জানান, অনেক দিন ধরে সাগরে খুব কম মাছ ধরা পড়ছিল। ইলিশ মৌসুমে কাঙ্খিত মাছ ধরা না পড়ায় আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছিল। সাগরে অবৈধ ট্রলিং বোট বন্ধ করা হলে জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার মোস্তফা আলম বলেন, “মাছগুলো আমার আড়তে বিক্রি হয়েছে। ইলিশের প্রকারভেদ ২৭ হাজার, ২২ হাজার, ১২ হাজার টাকায় মণ দরে সব মিলিয়ে ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় এই মাছ বিক্রি হয়।”
বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, “২২ দিনের অবরোধ শেষে জেলেরা সাগরে গিয়েই মাছ পেয়েছে- এটা খুশির খবর। তবে দীর্ঘদিন ধরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মেলেনি। হঠাৎ এক ট্রলারে ১৪০ মণ ইলিশ পাওয়ায় আমরাও খুশি।”
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন রাইজিংবিডিকে বলেন, “মা ইলিশ সংরক্ষণের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে।”
তিনি বলেন, “জেলেরা সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ মানলে এবং অবৈধ জাল বন্ধ তাদের জেলেদের সুদিন ফিরবে।”
ঢাকা/ইমরান/এস