রাতের আকাশে বিশাল গোলাকার চাঁদ নিয়ে আমাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, আমরা হাজার বছর ধরে শুধু চাঁদের এক পাশের ছবি দেখে আসছি। আর তাই অনেকেরই মনে প্রশ্ন, পৃথিবী থেকে চাঁদের পেছনে থাকা অন্য অংশ দেখা যায় না কেন। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, চাঁদ তার নিজ অক্ষের চারপাশে একবার ঘুরতে প্রায় ২৭ দশমিক ৩ দিন সময় নেয়। একই সময়ে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতেও চাঁদের প্রায় একই সময় প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ দুটি ঘূর্ণনের সময়কাল প্রায় মিলে যাওয়ার কারণেই পৃথিবী থেকে চাঁদের শুধু এক পাশের ছবি দেখা যায়।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, কোটি কোটি বছর আগে চাঁদের বয়স যখন কম ছিল, তখন এটি দ্রুতগতিতে নিজের অক্ষের চারপাশে ঘুরত। পৃথিবী তখন শক্তিশালী মহাকর্ষীয় টানের মাধ্যমে চাঁদের ওপর জোয়ার-ভাটার প্রভাব সৃষ্টি করত। পৃথিবীর মহাকর্ষণ শক্তি চাঁদের কঠিন অংশে তেমন প্রভাব ফেলতে না পারলেও তরল ম্যাগমা বা আংশিক গলিত অংশে প্রবল আলোড়ন তৈরি করত। এই জোয়ার-ভাটার ঘর্ষণের ফলে চাঁদের ঘূর্ণনের গতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। পরে চাঁদের ঘূর্ণনের গতি কমে প্রদক্ষিণ গতির সঙ্গে মিলে যায়। এ কারণেই চাঁদের এক পাশ সব সময় পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে। আর তাই বলা যায়, চাঁদের অন্য পাশ চিরদিনই আমাদের দৃষ্টির আড়ালে থেকে যাবে।

আরও পড়ুনচাঁদ আসলে কী২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

১৯৬০ সালে লুনা–৩ মহাকাশযান প্রথম পৃথিবীর বিপরীত দিকে থাকা চাঁদের ছবি তুলতে সক্ষম হয়। স্থানটি চাঁদের অন্ধকার দিক নামে পরিচিত। ছবিতে দেখা যায়, সেখানে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত ও উঁচু পর্বতমালা রয়েছে। পৃথিবী থেকে পাঠানো কোনো তরঙ্গ চাঁদের সেই অংশে পৌঁছাতে পারে না।

আরও পড়ুন চাঁদে কি সত্যিই মানুষের পা পড়েছে২০ জুন ২০২৪

পৃথিবী থেকে চাঁদের যে অংশ দেখা যায়, সেখানে মারিয়া নামের বৃহৎ ও অন্ধকার সমভূমির প্রাধান্য রয়েছে, যা প্রাচীন আগ্নেয়গিরির মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। এই সমভূমি নিকটবর্তী অংশের পৃষ্ঠের প্রায় ৩১ শতাংশজুড়ে বিস্তৃত ও ব্যাসাল্টিক উপাদানে সমৃদ্ধ। অন্যদিকে পেছনের অংশে প্রচুর পরিমাণে গর্ত রয়েছে।

সূত্র: সিএনএন ও স্পেস ডটকম

আরও পড়ুনপৃথিবীর আকাশে দেখা যাবে দ্বিতীয় চাঁদ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র অন

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ