একসঙ্গে তিন লাল কার্ড, ম্যাচ শেষে গোলমাল, কিংসের কাছে হেরে আবাহনীর সর্বনাশ
Published: 2nd, May 2025 GMT
তিন দিন আগেই ফেডারেশন কাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে বসুন্ধরা কিংসের কাছে হেরেছে আবাহনী লিমিটেড। অনেক আশা নিয়েও ফেডারেশন কাপ ঘরে তুলতে পারেনি তারা। নানা সংকটে থাকলেও ফেডারেশন কাপের শিরোপা ধরে রেখে কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে কিংস। তারই ধারাবাহিকতায় আজ গুরুত্বপূর্ণ লিগ লড়াইয়ে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের জোড়া গোলে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছে কিংস।
তবে ম্যাচের শেষটা সুখকর ছিল না। একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে মাঠে। আবাহনীর অভিযোগ, তাদের খেলোয়াড় ডিফেন্ডার শহীন আহমেদকে মেরেছেন কিংসের দুই খেলোয়াড় সাদ উদ্দিন ও সোহেল রানা। শাহীনও পাল্টা মারধরে অংশ নেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রেফারি ভুবন মোহন তরফদার একসঙ্গে তিনজনকেই লাল কার্ড দেখান।
কিংসের সিনিয়র সোহেল রানা ও সাদ উদ্দিনের সঙ্গে রেফারি লাল কার্ড দেখান আবাহনীর শাহীনকেও। ম্যাচ শেষ হতে তখন মিনিটখানেক বাকি। কিংস ৯ জনের দল, আবাহনী ১০ জনের।
শেষ বাঁশির পর দুই পক্ষে লেগে যায় তুমুল গোলমাল। আবাহনীর অভিযোগ, কিংস তাদের ঘরের মাঠে গায়ের জোর দেখাচ্ছে। কিংস শিবির থেকে দুটি ছেলে আবাহনীর খেলোয়াড়দের সঙ্গে মারামারিতে জড়ান। ওই দুজনের অবশ্য দাবি, তাঁদের কর্মকর্তাকে গালি দিয়েছে আবাহনী। এ নিয়েই দুই পক্ষ অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। আবাহনীর দু–একজন সমর্থক চেয়ার ছুড়ে মারেন গ্যালারির দিকে। অবস্থা বেগতিক দেখে আবাহনীর খেলোয়াড়দের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। আবাহনীর সহকারী ম্যানেজার নজরুল ইসলাম ও কিংসের সহকারী কোচ মাহবুব হোসেন রক্সিকে বেশ উত্তেজিত দেখা যায় এই সময়।
গোলমালের এই ম্যাচ জিতে কিংসের যতটা লাভ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি লাভ হয়েছে মোহামেডানের। ১৩ ম্যাচ শেষে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর চেয়ে ৭ পয়েন্ট এগিয়ে গেছে মোহামডান। হাতে আছে পাঁচটি ম্যাচ। বড় কোনো অঘটন না হলে এবারের প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা এখন উজ্জ্বল।
কিংসের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা কাগজে–কলমে হয়তো আছে। তবে বাস্তবে আসলে নেই। কারণ, শীর্ষে থাকা মোহামেডানের চেয়ে তারা এখনো ১১ পয়েন্ট পেছনে আছে। আজ আবাহনীকে হারিয়ে কিংসের পয়েন্ট হলো ১৩ ম্যাচ ২৪, সমান ম্যাচে আবাহনীর ২৭, মোহামেডানের ৩৪।
নিজেদের মাঠে কিংস আজ জিতেছে সুযোগ কাজে লাগিয়ে। ১৬ মিনিটে বক্সের একটু ভেতর থেকে দারুণ শটে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম করেন ১-০। ৫০ মিনিটে ফাহিমের প্লেসিং গোলকিপার মিতুল মারমার উচিত ছিল আটকানো; কিন্তু তিনি বলে হাত লাগালেও বলটা আটকাতে পারেননি। মিতুল তাঁর সেরা ছন্দে ছিলেন না আজ। ফলে আবাহনীকে হার নিয়েই ছাড়তে হয়েছে মাঠ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।
আরো পড়ুন:
নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”
খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”
প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”
তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”
গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী