জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটে সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। অথচ কিছুদিন ধরে  সুকৌশলে এমন একটি আবহ তৈরির অপচেষ্টা চলছে, যেন নির্বাচনের দাবি করাটাই অপরাধ। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এবি পার্টির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

জামায়াতে ইসলামী ছাড়া আওয়ামী লীগবিরোধী প্রায় সব দলের নেতারা ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। এবি পার্টি এবার আমন্ত্রণ জানায়নি জামায়াতকে। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের অনুষ্ঠানগুলোতেও আমন্ত্রণ করা হয়নি এবি পার্টিকে। ২০২০ সালে জামায়াত ছেড়ে আসা নেতারা প্রতিষ্ঠা করেন দলটি।

সংস্কার নিয়ে সরকার সময়ক্ষেপণ করছে বলে অভিযোগ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে। এর পরও সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কেন এত সময়ক্ষেপণ করছে? এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন বেড়েই চলছে।’ স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা পুনর্বাসিত হতে পারে দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্থানীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিতে পারে, তা হয়তো আপনারা বিবেচনায় নেননি।

আওয়ামী লীগের বিচারে সরকার কী করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। নির্বাচন নিয়ে অবজ্ঞাসূচক বক্তব্য পলাতক স্বৈরাচারকে আনন্দ দেয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে তারা তিনবার অবৈধ সরকার গঠন করেছিল। তাদের আগামী দিনের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, গণতন্ত্রকামী জনগণ তা জানতে চায়। দোষারোপের খেলায় দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার আগামী দিনে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। 

এতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন বিরোধপূর্ণ বিষয় নয়, বরং একটি আরেকটির পরিপূরক। গণঅভ্যুত্থানে  যে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, বাংলাদেশে তার রাজনীতির আর অধিকার নেই। জনগণ রক্ত দিয়ে ফয়সালা করে দিয়েছে। 

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ১২ দলীয় জোট নেতা এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল কাইয়ুম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড.

আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ এলডিপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম, আমজনতা দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শাহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাজনীতি ধোঁয়াশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার সময় পার করছে, আবার নতুন নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করছে। মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, মানবিক করিডোর নিয়ে হঠাৎ আলোচনা শুরু হয়েছে; কিন্তু এ বিষয়ে গোটা জাতিকে অন্ধকারে রাখা রহস্যজনক। আসন্ন নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ আয়োজন কিনা, সরকারকেই পরিষ্কার করতে হবে। জোনায়েদ সাকি বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে ন্যূনতম ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।

মামুনুল হক বলেন, এবি পার্টি অন্যতম মধ্যপন্থি দল, তারা সব দলের মধ্যে সেতুবন্ধনে ভূমিকা রাখতে পারে।  সাইফুল হক বলেন, বিচার ও সংস্কার কোন পর্যায়ে শেষ করবেন,  তা  প্রধান উপদেষ্টাকে পরিষ্কার করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অহেতুক দূরত্ব তৈরি করা উচিত হবে না।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। বেশির ভাগ দলই খুব ইতিবাচক চিন্তা পোষণ করেছে। এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, সেকেন্ড রিপাবলিক, পরিবারতন্ত্রের বাইরে রাজনীতির বয়ান এবি পার্টিই হাজির করেছে। 
এর আগে সকালে পতাকা উত্তোলন এবং কেক কেটে এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু হয়।  প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এ এফ এম সোলাইমান চৌধুরী, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান  মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, জাহাঙ্গীর কাসেম,  বিএম নাজমুল হক, লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিনসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন। 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন র রহম ন ম অন ষ ঠ ন র জন ত আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে: তারেক রহমান 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে।”

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আরো পড়ুন:

নির্বাচন ঘিরে সরগরম কেরাণীগঞ্জের রাজনীতি

হেভিওয়েটদের বিপক্ষে এনসিপির প্রার্থী হচ্ছেন যারা

তারেক রহমান বলেন, “সামনের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে। জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে বিএনপির পরিকল্পনা তুলে ধরতে হবে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। এই দেশ কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়-মানুষের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষাই আজ সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি।”

তারেক রহমান বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের ঘটনা ঘটেছে।”

তিনি বলেন, “শত শত মানুষ হত্যা, গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সাদা পোশাকে তুলে নেওয়া হয়েছে বহু মানুষকে। অনেকে ফিরে আসেনি। যারা ফিরেছে, তাদের শরীরে নির্যাতনের নির্মমতা লেগে রয়েছে।”

বিগত সরকারের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আইটি পার্ক ও অবকাঠামোর নামে যেসব প্রকল্প হয়েছে, তার অনেকগুলোই আজ অব্যবহৃত পড়ে আছে—সেখানে গরু-ছাগল চরে বেড়াচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরব। প্রয়োজনে এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধও করব।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা চাই না আর কোনো আবরার নির্মম হত্যার শিকার হোক। আমরা চাই না শহিদুল আলমের মতো কাউকে রাজনৈতিকভাবে নির্যাতনের মুখে পড়তে হোক। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জীবন ও সম্মান রক্ষাই আমাদের প্রথম কাজ।”

তারেক রহমান জানান, জাতীয়তাবাদী দর্শনই মানুষের সম্মান, নিরাপত্তা ও সমতার অধিকার নিশ্চিত করে। মানুষের মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠাই বিএনপির রাজনীতির মূল ভিত্তি।

নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনে জনগণ আমাদের পক্ষে রায় দিলে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালুর মাধ্যমে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করব। নারীসমাজকে শক্তিশালী না করলে দেশ এগোবে না।”

শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাষা শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে কর্মসংস্থানে সংকটে না পড়ে। দেশের ডাটাবেইস ধরে বিদেশে কর্মসংস্থানের পথও উন্মুক্ত করা হবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের খাল খনন করতে হবে, পরিবেশ রক্ষায় ২৫ কোটি গাছ লাগাতে হবে।”

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এতে আরো উপস্থিত ছিলেন হাবিব উন নবী খান সোহেল, ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার, আমিনুল হক, হাসান জাফির তুহিন, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, এস এম জিলানী প্রমুখ।

ঢাকা/আলী/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোটের মাঠে জোটের ভিড়ে জনপ্রত্যাশা কোথায় গেল 
  • পার্বত্য ৩ আসনে প্রার্থী না দিতে জাতীয় দলগুলোর প্রতি আহ্বান ইউপিড
  • শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান ইসলামী ফ্রন্টের
  • তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • ‘নির্বাচন সহজ হবে না, পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামতে হবে’
  • আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে পুরোপুরিভাবে জয়লাভ করতে হবে: নেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল
  • বাবুগঞ্জে এবি পার্টির ফুয়াদের বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল
  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরবে: গয়েশ্বর
  • যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে: তারেক রহমান