এমন আবহ তৈরি করা হচ্ছে, নির্বাচন চাওয়া যেন অপরাধ
Published: 3rd, May 2025 GMT
জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটে সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। অথচ কিছুদিন ধরে সুকৌশলে এমন একটি আবহ তৈরির অপচেষ্টা চলছে, যেন নির্বাচনের দাবি করাটাই অপরাধ। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এবি পার্টির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামী ছাড়া আওয়ামী লীগবিরোধী প্রায় সব দলের নেতারা ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। এবি পার্টি এবার আমন্ত্রণ জানায়নি জামায়াতকে। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের অনুষ্ঠানগুলোতেও আমন্ত্রণ করা হয়নি এবি পার্টিকে। ২০২০ সালে জামায়াত ছেড়ে আসা নেতারা প্রতিষ্ঠা করেন দলটি।
সংস্কার নিয়ে সরকার সময়ক্ষেপণ করছে বলে অভিযোগ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে। এর পরও সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কেন এত সময়ক্ষেপণ করছে? এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন বেড়েই চলছে।’ স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা পুনর্বাসিত হতে পারে দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্থানীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিতে পারে, তা হয়তো আপনারা বিবেচনায় নেননি।
আওয়ামী লীগের বিচারে সরকার কী করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। নির্বাচন নিয়ে অবজ্ঞাসূচক বক্তব্য পলাতক স্বৈরাচারকে আনন্দ দেয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে তারা তিনবার অবৈধ সরকার গঠন করেছিল। তাদের আগামী দিনের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, গণতন্ত্রকামী জনগণ তা জানতে চায়। দোষারোপের খেলায় দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার আগামী দিনে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
এতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন বিরোধপূর্ণ বিষয় নয়, বরং একটি আরেকটির পরিপূরক। গণঅভ্যুত্থানে যে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, বাংলাদেশে তার রাজনীতির আর অধিকার নেই। জনগণ রক্ত দিয়ে ফয়সালা করে দিয়েছে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ১২ দলীয় জোট নেতা এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল কাইয়ুম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড.
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাজনীতি ধোঁয়াশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার সময় পার করছে, আবার নতুন নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করছে। মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, মানবিক করিডোর নিয়ে হঠাৎ আলোচনা শুরু হয়েছে; কিন্তু এ বিষয়ে গোটা জাতিকে অন্ধকারে রাখা রহস্যজনক। আসন্ন নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ আয়োজন কিনা, সরকারকেই পরিষ্কার করতে হবে। জোনায়েদ সাকি বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে ন্যূনতম ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
মামুনুল হক বলেন, এবি পার্টি অন্যতম মধ্যপন্থি দল, তারা সব দলের মধ্যে সেতুবন্ধনে ভূমিকা রাখতে পারে। সাইফুল হক বলেন, বিচার ও সংস্কার কোন পর্যায়ে শেষ করবেন, তা প্রধান উপদেষ্টাকে পরিষ্কার করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অহেতুক দূরত্ব তৈরি করা উচিত হবে না।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। বেশির ভাগ দলই খুব ইতিবাচক চিন্তা পোষণ করেছে। এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, সেকেন্ড রিপাবলিক, পরিবারতন্ত্রের বাইরে রাজনীতির বয়ান এবি পার্টিই হাজির করেছে।
এর আগে সকালে পতাকা উত্তোলন এবং কেক কেটে এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এ এফ এম সোলাইমান চৌধুরী, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, জাহাঙ্গীর কাসেম, বিএম নাজমুল হক, লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিনসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন র রহম ন ম অন ষ ঠ ন র জন ত আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণের ঐক্য থাকলে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকে কবর দিতে পারব: সাকি
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘যদি জনগণের ঐক্য থাকে, তাহলে এই দেশে ফ্যাসিবাদ যেমন পালিয়েছে, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকেও আমরা কবর দিতে পারব। আর যে লুটপাটের রাজত্ব, দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম হয়েছে, সেটাকেও আমরা কবর দিতে পারব।’
আজ শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জোনায়েদ সাকি। সমাবেশের আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ জুলফিকার আহমেদ শাকিলের মা আয়েশা বেগম সমাবেশ উদ্বোধন করেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘লুটপাট, দুর্নীতি আমরা বন্ধ করতে না পারলে দেশে নতুন ক্ষমতাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে না। শহীদদের স্বপ্নপূরণে নতুন রাজনৈতিক এবং ক্ষমতাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ক্ষমতা দিয়ে টাকাপয়সা ধনসম্পদ আহরণ করা বাংলাদেশে গুম–খুন, অত্যাচার, ত্রাসের রাজত্বের ভিত্তি ছিল ফ্যাসিবাদী শাসন। ক্ষমতা দিয়ে টাকাপয়সা, ধনসম্পদ আহরণ করতে গিয়ে ব্যাংক, বিমা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সব উন্নয়ন প্রকল্প—সব খেয়ে ফেলেছিল তারা।
এ সময় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের দায়িত্ব নিতে অন্তর্বর্তী সরকার কেন ব্যর্থ হয়েছে, তার ব্যাখ্যা ৫ আগস্টের মধ্যে জানানোর দাবি জানিয়েছেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক লক্ষণ দেখছি, যেন পুরোনো ব্যবস্থাই আবার আমাদের মধ্যে জায়গা করে নিচ্ছে। আমরা দেখলাম শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা এখনো হয়নি। আহতদের চিকিৎসা এখনো হয়নি।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। আজ শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে