মাদারীপুরে বাড়তি টাকা গুনে দালাল ধরলে সব ‘ঠিক’, না হলে ‘ভুল’ থাকে
Published: 6th, May 2025 GMT
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মাঝকান্দি এলাকার বাসিন্দা বায়েজিদ মুনশি (১৮)। উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে যাওয়ার জন্য এই তরুণ ১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। এটা সরকার নির্ধারিত ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। তবে তিনি দালালকে দিয়েছেন সাড়ে ৯ হাজার টাকা। অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুনেছি দালাল ছাড়া নাকি কাজ সহজে হয় না। আমি ফুল প্যাকেজে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে সাড়ে ৯ হাজার টাকা কন্ট্রাক্টে আবেদন জমা দিয়েছি। কোনো সমস্যা বা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় নাই।’
মাদারীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে দালালের দৌরাত্ম্য বেশি থাকায় বায়েজিদ মুনশির মতো সেবাপ্রত্যাশীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। দালালের খপ্পরে পড়ে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও গুনতে হয় প্রায় দ্বিগুণ টাকা। সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, দালাল ছাড়া পাসপোর্টের আবেদন জমা দিলে বেশির ভাগ সময়ই ‘ভুল হয়েছে’ বলে আবেদন প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আর কর্তৃপক্ষের দাবি, গত ৫ আগস্টের পর থেকে পাসপোর্ট কার্যালয় সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মাদারীপুর পাসপোর্ট কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, সেবাপ্রত্যাশীরা ফাইল হাতে নিয়ে মূল ফটকে আনসার সদস্যদের কাছে তাঁদের পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকছেন। তবে স্থানীয় দালালেরা কোনো পরিচয় ছাড়াই ভেতরে ঢুকতে পারছেন। কার্যালয়ের ভেতরে পাসপোর্টের আবেদন জমা দেওয়ার জন্য সেবাপ্রত্যাশীদের জটলা। সীমিত কয়েকজন আবেদনকারীর সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন দালালকে দেখা যায়। তাঁরা আবেদনটি সরাসরি কাউন্টারে জমা দিতে পারছেন। যাঁরা দালাল ছাড়া, তাঁরা কিছুটা ভোগান্তি নিয়ে তাঁদের আবেদন জমা দিচ্ছেন।
দালাল ছাড়া যাঁরা আবেদন জমা দিচ্ছেন, তাঁদের যদি কারও জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি, অনলাইনের কপি সত্যায়িত না থাকে, তাহলে তাঁদের আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যাঁদের পাসপোর্টের নাম-পরিচয়সহ কয়েকটি বিষয় সংশোধন করতে আবেদন করেছেন, তাঁদের আবেদন অনেক ক্ষেত্রে জমা নিলেও বেশির ভাগ সময়ই সেই আবেদন ফরমে ভুল হয়েছে উল্লেখ করে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মাদারীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘তুমি কি মুসলিম’ বলেই নিউইয়র্কের সাবওয়েতে নারীর ওপর হামলা
নিউইয়র্ক নগরের সাবওয়েতে ৫৫ বছর বয়সী নারী হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ওই নারী বলেন, ‘তুমি কি মুসলিম’ প্রশ্ন করার পরই তাঁকে মারধর করেছেন হামলাকারী।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউএবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংবাদমাধ্যমটি ওই নারীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছে।
গত বুধবার ভোরে নিউইয়র্ক নগরের কুইন্স এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই নারী যখন সাবওয়েতে ট্রেনে উঠছিলেন, তখন ৩৪ বছর বয়সী নাভেদ দুরানি নামের ওই হামলাকারী তাঁর খুব কাছাকাছি চলে আসেন।
ওই নারী বলেন, ‘তিনি (হামলাকারী) আমাকে বললেন, তুমি কোথা থেকে এসেছ? তুমি কি মুসলিম?’
হামলার শিকার নারী বলেন, ‘আমি বললাম, হ্যাঁ। তখনই ওই ব্যক্তি আমাকে লাথি–ঘুষি মারতে শুরু করেন, সবদিক থেকে আঘাত করেন।’
ডব্লিউএবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রেনের দরজা বন্ধ হওয়ার পরপরই হামলা শুরু হয়। পরবর্তী স্টেশনে যাওয়া পর্যন্ত হামলা চলে। পরের স্টেশনে ট্রেন থামার পর নাভেদ দুরানি পালিয়ে যান।
ওই নারী বলেন, ‘আমি শুধু বলছিলাম, থামুন থামুন। কিন্তু হামলাকারী থামেননি। আমি বুঝতেই পারিনি, কী হচ্ছে।’
নিউইয়র্ক নগর পুলিশ বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, নাভেদ দুরানি মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। তিনি ওই নারীর মুখ, মাথা ও ঘাড়ে ঘুষি ও লাথি মেরেছেন।
ডব্লিউএবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ জানিয়েছে, দুরানি ওই নারীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি মুসলিম কি না। পরে তাঁকে মারধর করে পালিয়ে যান। দুজন নারী যাত্রী ও সাবওয়ে কন্ডাক্টরের সহায়তায় পুলিশ দুরানিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
নিউইয়র্ক নগর পুলিশ বিভাগ ইনডিপেনডেন্টকে জানিয়েছে, ঘৃণা ছড়ানোর অপরাধ ও আক্রমণের অভিযোগে দুরানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডব্লিউএবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্ত নারী মাথায় চোট পেয়েছেন। হামলায় তাঁর নাক ভেঙে গেছে এবং তিনি সারা শরীরে আঘাত পেয়েছেন।
ওই নারী বলেন, ‘এই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আগে কখনো এমন কিছু ঘটেনি। আমি কীভাবে তাঁর (হামলাকারীর) মুখ ভুলতে পারি?’
ওই নারীর চিকিৎসা, মানসিক সহায়তা, বাসাভাড়া ও খাবার কেনার মতো জরুরি খরচ মেটাতে ‘গো ফান্ড মি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তা নিজেকে ওই নারীর সন্তান উল্লেখ করে পেজে লিখেছেন, ‘তিনি (ওই নারী) শুধু নিজের ও তাঁর পরিবারের দুজন সদস্যের ভরণপোষণের চেষ্টা করছিলেন। একজন ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি মুসলিম কি না। তিনি শান্তভাবে ‘‘হ্যাঁ’’ বলার পরপরই লোকটি আচমকা তাঁকে হিংস্রভাবে আঘাত করেন।’
ওই নারী ‘শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করছেন’ বলে জানিয়েছেন তহবিল সংগ্রহকারী। তিনি বলেন, সন্দেহভাজন হামলাকারীকে আটক করা হলেও ‘শুধু ন্যায়বিচার পেলেই মানসিক আঘাত দূর হয় না, চিকিৎসার খরচও কমানো সম্ভব নয়।’
তহবিল সংগ্রাহক আরও বলেন, ‘জরুরি চিকিৎসা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানো, ওষুধ এবং পরীক্ষা–নিরীক্ষার খরচ অনেক বেশি। তার চেয়েও খারাপ কথা হলো, মাথায় আঘাতের লক্ষণ এখনো যাচ্ছে না। এর ফলে তিনি কাজে ফিরতে পারছেন না। এ জন্য নিজের ও পরিবারের সদস্যদের খরচ জোগাড় করতে পারছেন না। বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ ও ন্যূনতম জীবনযাত্রার খরচ মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন।’