আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ‘কয়েকটি কথা’
Published: 9th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়ে আছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা–কর্মীরা। আজ শুক্রবার বাদ জুমা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পূর্ব পাশে ফোয়ারার সামনে বড় জমায়েতেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে মঞ্চ তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। এসব তৎপরতার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো.
‘কয়েকটি কথা’ শিরোনামে এই পোস্টে মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘একটি দলের এক্টিভিস্টরা বারবার লীগ নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ছাত্ররা রাজি ছিল না, এটা বলে বেড়াচ্ছেন। মিথ্যা কথা। ক্যাবিনেটে প্রথম মিটিং ছিল আমার। আমি স্পষ্টভাবে এ আইনের অনেকগুলো ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম।
নাহিদ-আসিফও আমার পক্ষে ছিল স্বভাবতই। দল হিসাবে বিচারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হলে একজন উপদেষ্টার জবাব ছিল ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মত পশ্চাতপদ উদাহরণ আমরা আমলে নিতে পারি কিনা। এ যুক্তি যিনি দিয়েছিলেন, একটি দলের এক্টিভিস্টরা আজ সমানে তার পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রদের কুপোকাত করতে। অথচ, উনার সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। মিছে বিরোধ লাগানোর অপচেষ্টা করে কোন লাভ নেই।’
মাহফুজ আলম তাঁর পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘বলে রাখা ভালো, দুজন আইন ব্যাকগ্রাউন্ডের উপদেষ্টা (একজন ইতোমধ্যে মারা গিয়েছেন) ও আমাদের বক্তব্যের পক্ষে ছিলেন। সংস্কৃতি উপদেষ্টাও পক্ষে ছিলেন। গতকাল বিকালে কথা হয়েছে। দল হিসাবে লীগের বিচারের প্রভিশন অচিরেই যুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন উক্ত উপদেষ্টা। উনাকে ধন্যবাদ।’
মাহফুজ আলমের পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘মিথ্যা বলা বন্ধ করুন। ঘোষণাপত্র নিয়ে আপনাদের দুই মাস টালবাহানা নিয়ে আমরা বলব। ছাত্রদের দল ঘোষণার প্রাক্কালে আপনারা দলীয় বয়ানের একটি ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন। সমস্যা নেই, আমরাও চাই সবাই স্বীকৃত হোক। কিন্তু, এখন সেটাও হতে দিবেন না। দোষ আমাদেরও কম না। আমরা আপনাদের দলীয় প্রধানের আশ্বাসে আস্থা রেখেছিলাম।
পুনশ্চ: আমরা নির্বাচন পেছাতে চাই না। ডিসেম্বর টু জুনের মধ্যে নির্ব্বাচন হবেই।’
পোস্টে মাহফুজের বক্তব্য, ‘আপনারা যদি মনে করেন, ছাত্ররা নিজেদের আদর্শ ও পরিকল্পনা নিতে পারে না বরং এখান থেকে ওখান থেকে অহি আসলে আমরা কিছু করি, তাহলে আপনারা হয় ছাত্রদের খাটো করে দেখছেন, নয়তো ছাত্রদের ডিলেজিটিমাইজ করার পরিকল্পনায় আছেন। সেই আগস্ট থেকেই আমরা জাতির জন্য যা ভালো মনে করেছি, সবার পরামর্শ নিয়েই করেছি। বরং, উক্ত দলকেই আমরা বেশি ভরসা করেছি। সবার আগে উনাদের সাথেই পরামর্শ করেছি। ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব। সব দোষ এখন ছাত্র উপদেষ্টা নন্দঘোষ!’
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘আমরা উক্ত দলকে বিশ্বাস করতে চাই। উক্ত দলের প্রধানকে বিশ্বাস করতে চাই। উনি আমাদের বিশ্বাসের মূল্য দিয়ে লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে ও ঘোষণাপত্র প্রকাশে দেশপ্রেমিক ও প্রাগমাটিক ভূমিকা রাখবেন বলেই আস্থা রাখি। উক্ত দলকে নিয়ে কে কি বলবে জানি না কিন্তু আমরা চাই উক্ত দল ছাত্রদের সাথে নিয়ে দেশের পক্ষে, অভ্যুত্থানের শত্রুদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐকমত্যের নেতৃত্ব দিক। দেশপ্রেমিক ও সার্বভৌমত্বের পক্ষের শক্তি হিসাবে নেতৃত্ব দিলে ছাত্ররা
রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় উনাদের সাথে চলবেন।
ঐক্যবদ্ধ হোন। নেতৃত্ব দিন। এ প্রজন্মকে হতাশ করবেন না। এ প্রজন্ম এ দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে তালা দিলেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা
হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করার অভিযোগ তুলে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে তালা দিয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আধা ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল দলের সদস্যরা গেটের তালা খুলে দেন।
বাসভবনে তালা দিয়েছেন বুলবুল রহমান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও উর্দু বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
বুলবুল রহমানের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে ২০২৫ সালের নতুন সার্কুলারে উর্দু বিভাগে ৩ জন নিয়োগের কথা উল্লেখ করে ৬ জনকে নিয়োগ দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রেখেছে। সোমবার সিন্ডিকেট সভায় সেই নতুন নিয়োগকে অনুমোদন দেওয়া হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি উপাচার্য ভবনের ফটকে তালা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ছাত্রদল নেতা বুলবুল রহমান বলেন, ‘উর্দু বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে তিনজনের কথা বলা হলেও লিখিত পরীক্ষায় ছয়জনকে উত্তীর্ণ করে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছে। ২০২৩ সালের বিজ্ঞপ্তিটিই ২০২৫ সালে পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছে এবং বিভাগে কোনো পদ শূন্য নেই। এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলাম। তিনি বিষয়টিকে গোপনীয় বলে এড়িয়ে যান। এর প্রতিবাদেই উপাচার্যের বাসভবনে তালা দিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ২০২৩ এবং ২০২৫ সালের পৃথক দুটি বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে ছয়জনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদালতের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনেই নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। উপাচার্য বাসভবনে সোমবার সিন্ডিকেট সভা বসবে। সেখানে বেশ কিছু বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হবে। সেই সভাকে বাধা দেওয়ার জন্য তিনি (বুলবুল রহমান) উপাচার্যের বাসভবনে তালা মেরেছেন। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর এ ধরনের কাজ করা মোটেও সমীচীন হয়নি।’
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। কয়েকটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়ার কথা রয়েছে।