দুই গোলের এগিয়ে থেকেও হতাশার ড্র বাংলাদেশের
Published: 9th, May 2025 GMT
প্রথমার্ধে দারুণ খেলে ২-০ গোলের লিড নিয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। মনে হচ্ছিল, যুব সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বড় এক জয় দিয়েই যাত্রা শুরু করবে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ছন্দপতন। এতে উদ্বোধনী ম্যাচের শুরুটা হয়েছে মালদ্বীপের বিপক্ষে হতাশাজনক ২-২ গোলের ড্র।
গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে বাংলাদেশ। ম্যাচের ১৩ মিনিটেই গোলের দেখা মেলে। প্রতিপক্ষের ভুল পাস কাড়েন অধিনায়ক নাজমুল হুদা ফয়সাল, এরপর বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শটে এগিয়ে দেন দলকে। ২৪ মিনিটে সুমন সোরেনের শট ঠেকিয়ে দেন মালদ্বীপের গোলরক্ষক, আর ২৫ মিনিটে একদম ফাঁকা পোস্ট পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন রিফাত কাজী। তবে প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। ৪৫ মিনিটে মিঠু চৌধুরীর লব পাস থেকে হেডে গোল করেন রিফাত কাজী। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন ইতালি প্রবাসী আব্দুল কাদির। কিন্তু নিজস্ব পজিশন উইংয়ের বদলে মিডফিল্ডে খেলানোয় সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেননি। বল পেয়েছেনও কম, যেগুলো পেয়েছেন সেগুলোর বেশিরভাগই জোর করে ছিনিয়ে নিতে হয়েছে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে। তাই ৭১ মিনিটে তাকে তুলে নেন কোচ ছোটন। তার আগেই মালদ্বীপ ঘুরে দাঁড়ায়। ৫৭ মিনিটে ইব্রাহিম নাসিরের ক্রস থেকে আনুফ আব্দুল্লাহর নিখুঁত শটে ব্যবধান কমায় তারা। আর ৭৩ মিনিটে অধিনায়ক আহজাম রাশিদের দারুণ পাস ধরে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান ইব্রাহিম জাকি।
শেষদিকে একেবারে নিশ্চিত গোল হজম করতে বসেছিল বাংলাদেশ। তবে গোলরক্ষক ইসমাইল হোসেন মাহিন চমৎকার সেভ করে দলকে রক্ষা করেন হার থেকে। ফলে পয়েন্ট ভাগাভাগিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ছোটনের দলকে। গ্রুপপর্বে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ আগামী ১১ মে, প্রতিপক্ষ ভুটান।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গাদের সিম দিতে চায় সরকার
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বৈধভাবে সিম পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে তাদের অনেকের কাছেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভিন্ন মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সিম রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা প্রশ্নে উদ্বেগ রয়েছে সরকারের। এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বৈধভাবে সিম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই রোহিঙ্গাদের সিম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে।
মিয়ানমারে অত্যাচারের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। দেশে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের সিম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে সেখানে অবৈধভাবে দুই দেশেরই সিম ব্যবহার হচ্ছে। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরকেন্দ্রিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অবৈধভাবে দেশি অপারেটরের সিম ব্যবহার করে এবং মিয়ানমারের সিম ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার চিন্তা করে তৎকালীন সরকার। সে সময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটক সিম ব্যবহারের আলোচনা হয়েছিল। যদিও পরে বিষয়টি আর এগোয়নি।
এখন অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে। গত সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) চার মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিটিআরসি ও অপারেটর সূত্রমতে, ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার কথা। ওই তারিখের মধ্যে প্রাথমিকভাবে কিছু সিম দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
যেভাবে সিম দেওয়ার ভাবনাসিম বিক্রির বিদম্যান নীতি অনুযায়ী, ব্যক্তিকে শনাক্তকারী পরিচয়পত্র ও বায়োমেট্রিক প্রয়োজন হয়। যেহেতু রোহিঙ্গাদের সে ধরনের পরিচয়পত্র নেই, তাই তাদের সিম দেওয়ার জন্য বিকল্প উপায় ভাবা হচ্ছে। অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনায় বলা হয়, মোবাইল অপারেটররা রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ভিন্ন নম্বর সিরিজ রাখবে। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) কাছে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন নম্বর রয়েছে। যেটাকে সাধারণত ‘প্রোগ্রেস আইডি’ বলা হয়। সে আইডির বিপরীতে ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা সিম পাবেন। ইউএনএইচসিআর সরাসরি এই সিমগুলো পাবে।
সরকারের সঙ্গে চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনএইচসিআরের এই ডেটাবেজ সংরক্ষিত থাকবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ডেটা সেন্টারে। কিন্তু এই ডেটাবেজ বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষ হতে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। সূত্র বলছে, যেহেতু সরকারের লক্ষ্য চলতি মাস, তাই সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের অধীনে রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম ধাপে ২৫ আগস্টের মধ্যে ১০ হাজার নম্বর বরাদ্দ দেওয়ার আলোচনা হয়েছে।
অপারেটররা তিন ধরনের প্যাকেজ অফার করবে। এই প্যাকেজের খরচ ও সিমের দাম দেবে ইউএনএইচসিআর বা সরকার। নতুন সিম দেওয়ার পর বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে যেসব অবৈধভাবে সিম চলছে, সেগুলো বন্ধ করে দেবে সরকার।
তবে এসবই আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের শনাক্তকরণ একটি বিষয়। এটা নিশ্চিত না হলে সিম সেখানে দেওয়া যাবে না। সরকারের দিক থেকে এই পরিচয় নিশ্চিতকরণের বিষয়টি নিয়ে কথা চলছে।
অপারেটররা যা বলছেরোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানান গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৈধভাবে সিম বিক্রয়ের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই, যা বহু মানুষকে বৈধ উপায়ে সিম ক্রয়ের সুযোগ করে দেবে।’
তবে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বললেন ভিন্ন কথা। তাঁর কথায়, ‘নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সিম কর বাবদ অপারেটররা ইতিমধ্যে বড় অঙ্কের যে বিনিয়োগ এ খাতে করেছে, সেটি অকার্যকর হয়ে পড়বে।’
রোহিঙ্গাদের জন্য সিমের নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি সহজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের সুযোগ প্রদান সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
রোহিঙ্গা শিবিরকে একটি বিশেষায়িত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন বলেন, এখানে মিয়ানমারের নেটওয়ার্কও সক্রিয়। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারকে বাইরের দেশের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণভাবে বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন সিম দেওয়ার আগে আগেরগুলো জব্দ ও নথিভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।