তিন দফা দাবিতে এখনো রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, দাবি বাস্তবায়ন ছাড়া তাঁরা শাহবাগ ছাড়বেন না, ঘরে ফিরবেন না।

আজ রোববার বেলা আড়াইটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আহত ব্যক্তিরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে একই মঞ্চে অবস্থান করছেন আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হলো—আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করা। জুলাইয়ের সনদ ঘোষণা করা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহ, আমরা শাহবাগে উপস্থিত আছি, আপনাকে শাহবাগে আসতে হবে, আমাদের দাবি পূরণ করতে হবে।’

সাকিব হোসেন নামের আরেক আহত ব্যক্তি বলেন, গতকাল বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু তাঁদের দাবি, আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, যাঁরা জুলাই আন্দোলনে আহত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। আর তৃতীয় দাবি হচ্ছে, জুলাই সনদ প্রদান করা। এই তিনটি দাবি বাস্তবায়ন হওয়া ছাড়া তাঁরা ঘরে ফিরবেন না।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার জান্নাত বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও তাদের পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানের নয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো জুলাই সনদ দেওয়া হয়নি। তাঁরা দ্রুত জুলাই সনদ ঘোষণা দাবি জানান।

আরও পড়ুনশাহবাগ ছাড়েননি জুলাইয়ে আহতরা, সুচিকিৎসাসহ তিন দফা দাবি২ ঘণ্টা আগে

অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। অনেক যাত্রীকে যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে তিন দিন ধরে টানা কর্মসূচি পালন করছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ছাত্র-জনতা। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার রাতে জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত এই বিশেষ সভা হয়। পরে যমুনার সামনে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সভার সিদ্ধান্ত জানান আইনবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

আরও পড়ুনআওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর শাহবাগে উল্লাস১৫ ঘণ্টা আগে

লিখিত বক্তব্যে আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, এর অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবেন। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। এর পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গৃহীত হয়েছে।

এই ঘোষণা আসার পর গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার পরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীরা শাহবাগ ছাড়েন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরাও তাঁদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিলেন। তবে তাঁরা শাহবাগ ছাড়েননি। তাঁদের সঙ্গে একই মঞ্চে অবস্থান নেন আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হব গ ছ ড় ন ষ দ ধ কর অবস থ ন উপদ ষ ট ত হয় ছ আওয় ম ন করছ

এছাড়াও পড়ুন:

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: আরও ৪০ জনের জামিন

পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় আরও ৪০ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ সোমবার সংশ্লিষ্ট আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত ৮ মে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে জামিন শুনানি ও মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) জায়েদী। পরে ৪০ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিন মঞ্জুর করেন তিনি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন।

জামিন পাওয়া আসামিরা হলেন- রেজাউল করিম, শাজাহান, রফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, রেজাউল করিম, মো. শামীম, ওয়ালি উল্লাহ, হাবিবুর রহমান, তারিকুল ইসলাম, বনি আমিন চৌধুরী, মো. এ বারিক, ইমতিয়াজ আহমেদ নবীন, মোয়াজ্জেম হোসেন, মিজানুর রহমান, সিদ্দিকুর জামান জোয়ার্দার ওরফে লিটন, মো. এ মোনাফ, আকিদুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, মিজানুর রহমান, কৌতুক কুমার সরকার, মো. সালাউদ্দিন, সোহরাব হোসেন, কামাল হোসেন, মো. ইশহাক, দারুল ইসলাম, শ্রী সুমন চক্রবর্তী, আবু সাঈদ, সেজান মাহমুদ, মো. সেলিম, বিধান কুমার সাহা, মাসুম হাসান, ফিরোজ মিয়া, শ্রী তাপস কুমার বিশ্বাস, রফিকুল ইসলাম, কামাল মিয়া, নূর-এ-আলম মিয়া, এনামুল হক, শফিকুল ইসলাম, রবিউল আলম এবং আল আমিন।

তার আগে গত ১৯ জানুয়ারি নিম্ন আদালতে খালাসপ্রাপ্ত ১৭৮ বিডিআর সদস্যের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল না থাকায় একই আদালত তাদের জামিনের আদেশ দেন।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর বর্তমানে বিজিবি সদরদপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহের নামে হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ