আবাসন, বৃত্তি, প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদনসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাতে কাকরাইলে রাস্তা অবরোধ করে তারা এ ঘোষণা দেন। পুলিশের হামলার বিচার ও তিন দফা দাবিতে রাতভর রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কাকরাইল মোড়ে অন্তত অর্ধশত আন্দোলনকারীকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। 

সেখানে তাদের অবস্থানের কারণে কাকরাইল মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে তৈরি হয়েছে যানজট। রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল কাদির বলেন, কাকরাইল মোড়ে অন্তত অর্ধশত আন্দোলনকারী আছেন। তারা রাতভর এখানে অবস্থান করেছেন। কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে এখানকার সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখানে তৈরি হয়েছে যানজট। দাবি পূরণ না হাওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে সরবেন না বলে জানিয়েছেন।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার উদ্দেশে জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লংমার্চ কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ। বুধবার দুপুর ১২টার পর কাকরাইল মসজিদ এলাকায় লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, পুলিশসহ শতাধিক আহত হন। রাত ২টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করছিলেন। এর আগে বিকেলে আটটি বাসে কয়েকশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক মো.

রেজাউল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীনও।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। তবে আন্দোলনকারীরা সড়ক থেকে সরে যাননি। এর আগে তিনি জানান, যমুনার সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীরা কাকরাইলে পুলিশের ব্যারিকেডের ওপাশে অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে রওনা হন। প্রথমে গুলিস্তান মাজার গেটে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তারা। ব্যারিকেড ভেঙে তারা মৎস্য ভবনের দিকে যেতে থাকেন। সেখানে পৌঁছলে দ্বিতীয় দফা বাধা দেয় পুলিশ। এবারও তারা বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে থাকেন। তবে লংমার্চ কাকরাইল মসজিদ এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ কঠোর অবস্থানে যায়। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড সরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান। এ সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গরম পানি নিক্ষেপ করতে শুরু করে পুলিশ। এতে আন্দোলনকারীরা কিছু সময়ের জন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে তারা আবারও কাকরাইল মোড়ে জড়ো হন। আহতদের নেওয়া হয় বিভিন্ন হাসপাতালে।

আহতদের অন্তত ৩৮ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন– বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমন, ঢাকা ট্রিবিউনের জবি প্রতিনিধি সোহান ফরাজি, দৈনিক সংবাদের জবি প্রতিনিধি মেহেদী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন রেদোওয়ান, আসিফ, রহমান, আকিব, আরিফ, রফিক, শফিক, ওমর ফারুক, মেহেদী, অর্থিব, আপেল, মুজাহিদ, রায়হান, ফারুক, আবু বক্কর, নিউটন, হানিফ, জীবন, শহীদ, রাসেল, জিসান, মাহতাব, শহীদ, রাসেল, গৌরব ও আব্দুল মান্নান। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মাহতাব লিমন ও পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সুবর্ণ আস সাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বাকি ৩৬ জন বাসায় ফিরেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচরণ করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কাকরাইল মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। হামলাকারী পুলিশের বিচার করতে হবে।

জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, সরকারের এ কর্মকাণ্ডে আমরা মর্মাহত। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত। বিকেলে কর্মসূচির স্থানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন, ব্যবসায় অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শেদ। 

প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সহকারী সচিব সাব্বির আহমদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি দল সমস্যা নিরসনে আলোচনা করছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল ইউজিসিতে যান। সেখান থেকে আশানুরূপ ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।

আন্দোলনকারীদের তিন দাবি হলো– আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।

রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা: দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন জবি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পক্ষে জবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব সামসুল আরেফিন এ কথা বলেন। রাত ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাজনৈতিক সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম ‘জবি ঐক্যে’র মতামতের ভিত্তিতে তিনি এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, সেই দায় সরকারকে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর রক্তচক্ষু দিয়ে তাকাবেন না। মাহফুজ আলমের সঙ্গে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, এই দায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। এর আগে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বিতর্কিত করতে কে বা কারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বোতল নিক্ষেপ করেছে। এ ঘটনার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র ওপর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নিতে হবে বহুমাত্রিক কৌশল

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের নগরমুখী স্রোত থামাতে উপকূলে উপযুক্ত কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। নগরে আশ্রয় নেওয়া জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও সাশ্রয়ী পুনর্বাসন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা দিতে নাগরিক সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রাপ্তি সহজ করতে হবে। পাশাপাশি জাতীয়ভাবে প্রয়োজন একটি বহুমাত্রিক কৌশল।

গতকাল জার্মান কো–অপারেশন ও কারিতাস জার্মানির সহযোগিতায় কারিতাস বাংলাদেশ ও প্রথম আলো আয়োজিত ‘নগরমুখী জলবায়ু উদ্বাস্তু: সামাজিক নিরাপত্তা ও অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বক্তারা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ত্রাণ কর্মসূচি) সেখ ফরিদ আহমদ বলেন, সরকার চায় তার প্রত্যেকটা নাগরিক তার যে অধিকার, সেটা পাক। নগর অভিবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নে নীতিকৌশল গ্রহণ করতে হবে। এটা করতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য–উপাত্তের প্রয়োজন বলে অভিমত দেন তিনি।

সেখ ফরিদ বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে তাঁদের বিভিন্ন সেবায় প্রবেশগম্যতা নেই। তাঁরা এ দেশের মানুষ। এসব সেবা পাওয়ার অধিকার তাঁদের আছে।

বহুমাত্রিক কৌশল ও সমন্বিত নীতি গ্রহণের সময় সেখ ফরিদ শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, সারা দেশ নিয়ে ভাবার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সেখ ফরিদ বলেন, যে যে জায়গা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছেন, সে জায়গার নিকটবর্তী কোনো স্থানে তাঁকে যদি পুনর্বাসন করা যায়, তাহলে তাঁর আত্মপরিচয় ও আত্মসম্মানের সঙ্গে তিনি বেঁচে থাকতে পারবেন।

জাতিসংঘের উন্নয়নমূলক সংস্থা ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক বলেন, ‘সরকার মনে করে, শহরে যদি আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শক্তিশালী করি, তাহলে নগরমুখী স্রোত বেড়ে যাবে। গ্রামে যেমন কর্মসংস্থান করতে হবে, তেমনি শহরে এসে যারা জীবন–জীবিকা নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, সেটা কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে পথ বের করতে হবে।’

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে নারী ও শিশুদের। বাস্তুচ্যুতি ঘটলে তাঁদের এ সংকট আরও গভীর হয়।

যাঁরা উদ্বাস্তু হন না, তাঁদের প্রজননস্বাস্থ্যসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগতে হয়। লবণাক্ততা এড়াতে মাসিক ঋতুচক্র বিলম্বিত করতে উপকূলের নারীরা জন্মনিরোধক ব্যবহার করেন জানিয়ে কবিতা বোস বলেন, উদ্বাস্তু হওয়া ঠেকাতে গ্রামে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামে থেকে যদি টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে মানুষ আর নগরমুখী হবেন না।

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কান্ট্রি ডিরেক্টর শেহনাজ ওজমাদার প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

শেহনাজ ওজদামার বলেন, লিগ্যাল ডকুমেন্ট (জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিকত্ব সনদ) না থাকায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সেবা পেতে বিঘ্ন ঘটছে। এতে তাঁদের ঝুঁকি আরও বাড়ছে। তিনি তুরস্কের ভূমিকম্পে জাতীয় তথ্যভান্ডার দুর্যোগ–পীড়িত ব্যক্তিদের সহায়তায় কীভাবে কাজে লেগেছে, সে অভিজ্ঞতার কথা বলেন।

গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. ইসমাঈল হোসেন।

প্রবন্ধে মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, বিশ্বে জলবায়ু উদ্বাস্তু বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। একজন মানুষ যখন তাঁর বসতভিটা হারিয়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নেন, তখন তাঁর মানসিক অভিঘাত হয় গভীর। এর বাইরে তাঁদের প্রথম সংকট হয় আবাসনসংকট। এরপর থাকে বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুতের সংকট। এগুলো অবৈধভাবে ব্যবস্থা করে নিতে হয় তাঁদের।

বাস্তুচ্যুতি হলে নাগরিকত্ব সনদ, জন্মনিবন্ধন—এগুলো সংগ্রহ করা যায় না জানিয়ে মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, এসব কাগজপত্র না থাকায় নাগরিক সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হন। তিনি জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য এসব আইনি কাগজপত্র পেতে প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানান।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামছুন নাহার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। এর চ্যালেঞ্জগুলো বহুমাত্রিক। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সংকট মোকাবিলায় একটা সমন্বিত ও টেকসই কর্মপন্থার ওপর জোর দেন তিনি।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার জাতীয় প্রকল্প কর্মকর্তা মো. সৈয়দ শাহরিয়ার শাবাব বলেন, জীবিকার সংকট বাস্তুচ্যুতির পেছনে একটা বড় সংকট। তাই উপকূলে টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, ‘যারা উদ্বাস্তু হচ্ছে, তারা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের জন্য একটা বহুমাত্রিক কৌশল নিতে হবে।’

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ পরিচালক (অপারেশনস) চন্দন গোমেজ জলবায়ু উদ্বাস্তুদের নিয়ে একটি তথ্যভান্ডার করার পরামর্শ দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ও ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন, জলবায়ু নীতির মধ্যে যে ফারাক আছে, সেগুলোকে চিহ্নিত করে সমন্বিত ও সামষ্টিকভাবে এ সংকট মোকাবিলা করতে হবে।

অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (রামরু) সদস্য ড. রাশেদ আলম ভূইয়া বলেন, গ্রাম ও নগর—এ দুই জায়গাতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকশন অ্যান্ড রেজিলিয়েন্সের পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত কাকে বলব, সেটার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে এবং সেভাবে সাপোর্ট সিস্টেম প্রস্তুত করতে হবে।’

কারিতাস বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রধান আলেক্সান্ডার ত্রিপুরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে জরুরি সেবা প্রদানে তহবিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

কারিতাসের কর্মসূচি পরিচালক দাউদ জীবন দাস বলেন, প্রতিদিন দুই হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু ঢাকা নগরীতে যোগ হচ্ছেন, বছরে যা সাত লাখ।

কারিতাস বাংলাদেশের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার (অ্যাডভোকেসি) জামিল আহমেদ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে একটা ওয়ার্কিং গ্রুপ করার পরামর্শ দেন।

গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ