চার দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই লড়াইয়ে কেউ পুরোপুরি জয়ী হয়েছে কি না, তা বলা কঠিন। তবে সংঘাতে দুই পক্ষই নিজেদের ‘বিজয়’ দাবি করেছে।

গত ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। স্বল্প পরিচিত সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল। তবে ভারত দাবি করেছে, এই গোষ্ঠী পাকিস্তান–সমর্থিত। তবে পাকিস্তান এ অভিযোগ নাকচ করে দিলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেন।

এরপর দুই প্রতিবেশী দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি নানা কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে থাকে। এরপরই সেই উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে রূপ নেয়। ৭ মে সকালে পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের চারটি স্থানে ‘জঙ্গিঘাঁটি’তে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত।

এরপরের দিনগুলোতে দুই দেশই একে অপরের ভূখণ্ডে ড্রোন হামলা চালিয়েছে এবং একে অপরকে হামলার জন্য দায়ী করেছে। ১০ মে উভয় দেশ একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়।

ভারত শুরুতে পাকিস্তানের তিনটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়, যার একটি ছিল রাওয়ালপিন্ডি। এ শহরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান সদর দপ্তরের অবস্থান হওয়ায় একে সামরিক ঘাঁটির শহর (গ্যারিসন সিটি) হিসেবে গণ্য করা হয়। এরপর ভারত আরও কিছু পাকিস্তানি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।

যুদ্ধবিরতির পর উভয় দেশই সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের ‘জয়ী’ দাবি করে এবং নানা ‘প্রমাণ’ উপস্থাপন করে। গত সোমবার ভারত ও পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা ফোনে কথা বলেন এবং আগামী দিনগুলোতে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার অঙ্গীকার করেন।

অন্যদিকে পাকিস্তান ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা ভারতের অন্তত চারটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে।

পরিস্থিতি যখন পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে যাচ্ছিল, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন এবং দাবি করেন, এ যুদ্ধবিরতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হয়েছে। পাকিস্তান এ উদ্যোগের প্রশংসা করলেও ভারত বলেছে, বাইরের কারও হস্তক্ষেপ ছাড়াই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যেই হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির পর উভয় দেশই সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের ‘জয়’ দাবি করে এবং নানা ‘প্রমাণ’ উপস্থাপন করে। গত সোমবার ভারত ও পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা ফোনে কথা বলেন এবং আগামী দিনগুলোতে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার অঙ্গীকার করেন।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২২ এপ্রিলের ঘটনার পর কেউই পুরোপুরি নিজেদের সত্যিকারের জয়ী বলে দাবি করতে পারে না। বরং উভয় দেশই কিছু লাভ করলেও ক্ষতিও হয়েছে তাদের।

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদের প্রাঙ্গণে এক পাকিস্তানি সেনা। পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর, ৭ মে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উভয় দ শ

এছাড়াও পড়ুন:

উল্লাস করে, চরম বর্বরতা দেখিয়ে রূপলাল ও প্রদীপকে হত্যা করা হয়

রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে রূপলাল দাস ও প্রদীপ লালকে যখন বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ে আনা হয়, তখনো তাঁরা জীবিত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৫ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও তাঁদের বাঁচাতে পারেনি।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে একটি ভ্যানের ওপর রাখা হয়েছে রূপলাল ও প্রদীপকে। চারপাশে কয়েক শ মানুষ, প্রথম সারিতে তরুণ-যুবকেরা। পুলিশের চার সদস্য ভ্যানটি ঘিরে বাঁশিতে ফুঁ দিচ্ছিলেন এবং হাত তুলে জনতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন। এ সময় রূপলাল দাঁড়াতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শোয়া অবস্থায় খুলে যাওয়া লুঙ্গি ঠিক করছিলেন তিনি। পুলিশ ধাক্কা দিয়ে জনতাকে সরানোর চেষ্টা করলে তাঁরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। শোরগোল শুরু হলে পুলিশ পিটুনিতে অর্ধমৃত এই ব্যক্তিদের রেখে সরে যায়।

গত শনিবার রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জের সায়ার ইউনিয়নের বটতলা বুড়িরহাট এলাকায় দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই দুজন হলেন উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামের রূপলাল দাস (৪০) ও তাঁর আত্মীয় মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া গ্রামের প্রদীপ লাল (৩৫)। রূপলাল স্থানীয় বাজারে জুতা সেলাই করতেন ও প্রদীপ লাল ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ চলে যাওয়ার পর রূপলাল মাথা তুলতেই কালো গেঞ্জি পরা এক যুবক তাঁকে ঘুষি মারেন। এতে আবার লুটিয়ে পড়েন রূপলাল। এরপর ভ্যানের ওপর শোয়া অবস্থায় থাকা দুজনকে তরুণ-যুবকেরা যে যেভাবে পারেন কিল, ঘুষি, লাথি, লাঠি ও রড দিয়ে মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ভ্যানের ওপর থেকে মাটিতে পড়ে যান প্রদীপ লাল। এ দৃশ্য মুঠোফোনের আলো জ্বালিয়ে ভিডিও করছিলেন অনেকেই।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রদীপ লাল ভ্যান থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সেখানে তাঁকে অনবরত লাথি মারা হয়। রূপলালকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় ভ্যানসহ প্রদীপ লালের ওপর উল্টে দেওয়া হয়। এতে দুজনই ভ্যানের নিচে চাপা পড়েন। এরপর তাঁদের ওপরে থাকা ভ্যানে চাপ দিতে থাকেন তাঁরা। এ সময় বাঁশির শব্দ শোনা গেলেও কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এ মরে নাই এ্যালাও। দে দে চাপা দে। আরও দে।’

একপর্যায়ে ভ্যানটি কয়েকজন যুবক-তরুণ রূপলাল ও প্রদীপের ওপর থেকে সরিয়ে নেন। এরপর রশি, জুতা, গাছের ডাল, ভ্যানের প্যাডেল দিয়ে মারধর করতে থাকেন। তখন নিস্তেজ ছিলেন রূপলাল ও প্রদীপ। মৃত্যু নিশ্চিত করতে হলুদ, কালো, লাল গেঞ্জি পরা চার-পাঁচজন তরুণ-যুবক রূপলালের পিঠে লাথি মারতে থাকেন। হলুদ গেঞ্জি পরা দুই তরুণ দুই পায়ে পিঠ বরাবর একাধিকবার লাথি দেন। এ সময় পাশে থাকে কয়েকজন বলতে থাকেন, ‘দে দে, আরও দে।’ প্রদীপ লালকে দেখিয়ে আঙুল উঁচিয়ে একজন বলতে থাকেন, ‘এ ওইটাকও দে। মার। নড়ি পা** ঢুকি দেও’ বলে উল্লাস করতে থাকেন। এ কথা শুনে এক হলুদ গেঞ্জি পরা তরুণ গাছের ডাল দিয়ে আরও মারতে থাকেন। ছাইরঙা গেঞ্জি পরা এক যুবক রূপলালের মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলায় পা তুলে দেন। আশপাশের কেউ কেউ তখন বলছিলেন, ‘পুলিশ পালাইছে।’

পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও তাঁদের বাঁচাতে পারেনি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিপিএলের প্রথম ম্যাচে ব্যাটে-বলে ব্যর্থ সাকিব, হারে শুরু অ্যান্টি
  • জিৎ যেভাবে সিনেমায় এলেন
  • এঁচোড় গোশতের রেসিপি
  • সম্পর্ক অস্বীকার, ‘বাচ্চা চোর’ অপবাদ দিয়ে নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন
  • গৃহকর্তাকে থাপ্পড় দিয়ে ডাকাত বলে, ‘বসতঘরে সিসি ক্যামেরা কেন লাগিয়েছিস’
  • চোট কাটিয়ে ফেরার পথে মেসি, মায়ামি ভক্তদের আশার আলো
  • এবার অর্পিতাদের সাফ মিশন, অভিজ্ঞরাই ভরসা
  • চট্টগ্রামে অটোরিকশা জব্দ করায় পুলিশ বক্স ভাঙচুর, আটক দুই
  • উল্লাস করে, চরম বর্বরতা দেখিয়ে রূপলাল ও প্রদীপকে হত্যা করা হয়
  • দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে জীবনসংগ্রামে নামা সেই বাবা পেলেন রিকশা