‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ চলছে।

সোমবার (২৬ মে) সকাল ১১টা থেকে সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ ফেলে রাস্তায় নেমে আসেন। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর, মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সভাপতি (অন্য অংশ) মো.

নূরুল ইসলাম এবং মুজাহিদুল ইসলাম।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধের জন্য শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করার বিধান রেখে যে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছে, তা স্বেচ্ছাচারিতা এবং কর্মচারীবিরোধী। তাদের ভাষায়, এটি একটি ‘অবৈধ কালো আইন’।

আরো পড়ুন:

আজও সচিবালয়ে বিক্ষোভ

সচিবালয়ের নিরাপত্তায় বসছে এআই নজরদারি

‘আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে’
সচিবালয়র কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা প্রথমে গিয়েছিলাম লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিবের কাছে। তিনি বলেছেন, এটা করেছে জনপ্রশাসন সচিব। জনপ্রশাসন সচিব বলেছেন, এটি করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, এটি ইনিশিয়েট করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করলে তিনিও বলেন, আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না।”

তিনি আরো বলেন, “কারা এই অধ্যাদেশের মূল পরিকল্পনাকারী, তা আমরা জানি। তারা নিজেদের আড়াল করতে চাইছেন, কিন্তু প্রশাসনের কর্মচারীরা আর বিভ্রান্ত হবে না।”

সচিবালয়ের ফটকে তালা
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভরত কর্মচারীরা সচিবালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং অন্যান্য প্রবেশপথও বন্ধ করে দেন। প্রায় ৪০ মিনিট বন্ধ থাকার পর দুপুর ১টা ৫ মিনিটে প্রধান ফটক খুলে দেওয়া হয়।

জ্বলে উঠেছে কর্মচারীদের রক্ত
বিক্ষোভকারীরা যেসব শ্লোগান দেন তা হলো-‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘অবৈধ কালো আইন, বাতিল কর, করতে হবে’, ‘মানি না মানবো না, অবৈধ কালো আইন’, ‘সচিবালয়ের কর্মচারী, এক হও এক হও’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা নিচে নেমে এসে মিছিলে যোগ দেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে সচিবালয় চত্বর ঘুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনের নিচে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তারা।

‘মোখলেস উর রহমান এই ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ড’
সমাবেশে একজন কর্মচারী নেতা বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান এই কালো অধ্যাদেশের মাস্টারমাইন্ড। তিনি উপদেষ্টা পরিষদকে বিভ্রান্ত করেছেন। আজ বিকেল ৪টার মধ্যে অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।’

এই বক্তব্যের পর উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা শ্লোগানে ফেটে পড়েন: ‘মোখলেস, মোখলেস! ভুয়া, ভুয়া!!’

আরও একজন কর্মচারী নেতা বলেন, ‘কোনো সচিব বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কর্মচারীদের হুমকি দেন, তাহলে কর্মচারীরাও পাল্টা হুমকি দেবেন।’ তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) উপদেষ্টা পরিষদের সভা পর্যন্ত প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি চলবে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বিতর্কিত অধ্যাদেশ
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এ বলা হয়েছে, চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় তদন্ত ছাড়াই, কেবল কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েই কোনো সরকারি কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা যাবে। এই অধ্যাদেশ রবিবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি জারি করেন। এর আগে, ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় খসড়াটি অনুমোদিত হয়।

এরপর থেকেই সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন অধ্যাদেশটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে। তারা জানিয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং প্রয়োজনে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ঢাকা/এএএম/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত উপদ ষ ট ল ইসল ম মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ