মাসোহারায় মেলে টোকেন অবাধে চলে অবৈধ যান
Published: 26th, May 2025 GMT
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে অবৈধ যান চলাচলের অভিযোগ উঠেছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সাংকেতিক টোকেন দিয়ে নির্বিঘ্নে এসব যান চলার সুযোগ দিচ্ছে পুলিশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিটি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে কাঁচপুর এলাকার হারুন অর রশিদ ও শম্ভুপুরা ইউনিয়নের কাজিরগাঁও গ্রামের ঈসমাইল হোসেনের মাধ্যমে মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা আদায় করে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশ। অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা মহাসড়কে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য পুলিশ ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ ও ‘ঈদ মোবারক’ নামে সাংকেতিক টোকেন দেয়। টোকেন থাকা গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকায় অবাধে চলছে অবৈধ যান নছিমন, ভটভটি, ব্যাটারিচালিত রিকশা, রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশা। এগুলো কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে যাত্রামূড়া পর্যন্ত অবৈধ যান চলাচল করে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। কাঁচপুর থেকে মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত সাতটি স্থানে মহাসড়কের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
গত শনিবার মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখানে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা, নছিমন-করিমন-ভটভটিসহ অসংখ্য অবৈধ যানবাহন চলছে। মহাসড়কে হাইওয়ে ও থানা-পুলিশের একাধিক গাড়ি চললেও অবৈধ যান চলাচলে বাধা দিতে দেখা যায়নি। এসব যানবাহন উল্টো পথ ব্যবহার করছে সবচেয়ে বেশি। চালকদের নেই লাইসেন্স-প্রশিক্ষণ, নেই গাড়ির ফিটনেস।
অটোরিকশা চালকদের দাবি, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে হাইওয়ে পুলিশ মাসিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট টোকেন দিয়ে মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচলের সুযোগ দিয়েছে।
জানা যায়, ২০১৫ সালে মহাসড়কে অটোরিকশা, টেম্পোসহ সব ধরনের ধীরগতির যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এসব যানবাহনকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে উচ্চ আদালতও চলাচল বন্ধে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। নির্দেশনার পর পুলিশ প্রশাসন কিছুদিন এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিলেও এখন নিয়ন্ত্রণে তেমন উদ্যোগ নেই।
সূত্র জানায়, কাঁচপুর থেকে মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত অবৈধ যানবাহন চলাচল করায় কয়েক দিন পরপরই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ১৬ মাসে এ মহাসড়কে ছোট-বড় ৯৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৮৩ জন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
অটোরিকশা চালক ওমর ফারুক বলেন, তাঁর মালিকের ১০টি অটোরিকশার জন্য তিনি কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশকে হারুনের মাধ্যমে মাসে ১০ হাজার টাকা দিয়ে থাকেন।
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক খোরশেদ আলম বলেন, হাইওয়ে পুলিশকে মাসিক ভিত্তিতে প্রতি রিকশার জন্য ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এ টাকা সংগ্রহ করেন ঈসমাইল। তাদের এলাকার ২৭ জন রিকশাচালক এ টাকা দেন।
অভিযুক্ত ঈসমাইল হোসেন বলেন, হাইওয়ে পুলিশের আটক গাড়িগুলো তিনি পাহারা দিয়ে রাখেন। তবে টোকেন দিয়ে চালকদের কাছ থেকে তিনি টাকা নেন না। এর প্রমাণ নেই।
আরেক অভিযুক্ত হারুন অর রশিদ বলেন, টোকেনগুলো গত বছরের ৫ আগস্টের আগের। এখন আর টোকেন দেওয়া হয় না।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি কাজী ওয়াহিদ মোর্শেদ বলেন, দিন দিন অবৈধ যানের সংখ্যা বাড়ছে। এসব যানবাহন চলাচলে হাইওয়ে পুলিশ বাধা দিয়ে আসছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু অটোরিকশা মহাসড়ক দিয়ে চলছে। তবে টাকার বিনিময়ে অবৈধ যান চলাচলের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন এসব য ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?