হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের অবশিষ্ট সব ফেডারেল চুক্তিও বাতিলের পরিকল্পনা করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার ফেডারেল সংস্থাগুলোর কাছে পাঠানো এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ সেবা প্রশাসন (জিএসএ) থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের (ফেডারেল) সব সংস্থাকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাদের বিদ্যমান চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে সেগুলো বাতিল বা পুনর্বণ্টনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এসব চুক্তির মূল্য আনুমানিক ১০ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম ও অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডের পরিচালনার নীতি–কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন আনার দাবি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রিপাবলিকান সরকার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে। এর জেরে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক অবস্থান দুর্বল করতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, এটি সেসবের সর্বশেষ।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করল ট্রাম্প প্রশাসন৩ ঘণ্টা আগে

ট্রাম্প প্রশাসন এরই মধ্যে আইভি লিগভুক্ত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ফেডারেল গবেষণা অনুদান বাতিল করেছে। গত সপ্তাহে হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি প্রত্যাহারের পদক্ষেপও নিয়েছে তারা। হার্ভার্ডে বর্তমানে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার ৮০০, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৭ শতাংশ।

গত শুক্রবার বোস্টনের একজন ফেডারেল বিচারক যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির অনুমতি বাতিল করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। শুনানির আগপর্যন্ত আদালতের ওই আদেশ কার্যকর থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম ও অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডের পরিচালনা নীতি-কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন আনার দাবি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রিপাবলিকান সরকার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এর জেরে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়টির আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক অবস্থান দুর্বল করতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, এটি তার সর্বশেষ।

গতকাল মঙ্গলবার এক সংক্ষিপ্ত শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের এক কৌঁসুলি বলেছেন, প্রশাসন আদালতের ওই আদেশ মেনে চলছে এবং নিজেদের পরবর্তী পদক্ষেপ বিবেচনা করছে।

ইতিমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের বিদেশি দূতাবাসগুলোকে নতুন করে শিক্ষার্থী ভিসা ও বিনিময় কর্মসূচির ভিসার আবেদনকারীদের জন্য সাক্ষাৎকারের সময় নির্ধারণ না করার নির্দেশ দিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের তহবিল কাটছাঁটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন জানাতে গতকাল কয়েক শ বিক্ষোভকারী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েত হন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরাও ছিলেন।

আরও পড়ুনঅনুমোদনহীন চিঠি পাঠানোর পর আরও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়২০ এপ্রিল ২০২৫

জিএসএর চিঠিতে হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে এখনো বৈষম্যমূলক ভর্তিপ্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ক্যাম্পাসে বৈচিত্র্য বাড়াতে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর জাতিগত পরিচয়কে একটি বিবেচ্য মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ২০২৩ সালে উচ্চশিক্ষায় অ্যাফার্মেটিভ অ্যাকশন (সমতা প্রতিষ্ঠাব্যবস্থা) বিলোপের সিদ্ধান্ত দেয়।

এ বিষয়ে জানা আছে—এমন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেছেন, গতকাল সকালে ফেডারেল সংস্থাগুলোর কাছে জিএসএর ওই চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে সংস্থাগুলোকে আগামী ৬ জুনের মধ্যে বাতিল করা চুক্তির তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই হার্ভার্ড বিশ্বাস করে, দেশসেবাই তাদের মূল দায়িত্ব।অ্যালান গারবার, হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট

পাশাপাশি এ–ও বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ সেবা-সম্পর্কিত চুক্তিগুলো অন্য সরবরাহকারীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা একাধিক প্রক্রিয়াগত নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, পাঠ্যক্রম ও ভর্তিপ্রক্রিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকেও ক্ষুণ্ন করেছে।

আরও পড়ুনশিক্ষা দপ্তরকে কী লিখেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট, যাতে খেপেছেন ট্রাম্প১৫ এপ্রিল ২০২৫

হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওতে গতকাল দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কিছু সমস্যা রয়েছে, যার সমাধান করা প্রয়োজন। তবু ট্রাম্প প্রশাসনের গবেষণা অনুদান বাতিলের সিদ্ধান্তগুলো তাঁর কাছে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে মনে হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন তাদের বিদেশি দূতাবাসগুলোকে নতুন করে শিক্ষার্থী ভিসা ও বিনিময় কর্মসূচি ভিসার আবেদনকারীদের জন্য সাক্ষাৎকারের সময় নির্ধারণ না করার নির্দেশ দিয়েছে।

হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই হার্ভার্ড বিশ্বাস করে, দেশসেবাই তাদের মূল দায়িত্ব।’

আরও পড়ুনহার্ভার্ডের তহবিল আরও ৪৫ কোটি ডলার কাটছাঁট ট্রাম্প প্রশাসনের১৪ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক র য় সরক র র ব যবস থ পদক ষ প র জন য গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

হজযাত্রীদের যেসব স্বাস্থ্যসতর্কতা মেনে চলা উচিত

হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করা পরিশ্রমসাধ্য। পাশাপাশি ভৌগোলিক, জলবায়ু ও আবহাওয়াগত পরিবর্তন শুরুতে শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিপুল জনসমাগমে চাপ সামলে চলাও অনেক কঠিন। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হজযাত্রীদের বেশ অসুবিধায় পড়তে দেখা যায়। সব মিলিয়ে অনেকে নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েন।   
বিমান ভ্রমণে অনভ্যস্ততার কারণে হজযাত্রীরা বমি, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের সমস্যায় ভুগে থাকেন। জেদ্দা বিমানবন্দরে নামার পরপরই আবহাওয়ার বড় পরিবর্তনের মুখোমুখি হন তারা। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় আর্দ্রতা একটু বেশি। সৌদি আরবের তাপমাত্রা সাধারণত ৪০-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্প বা আর্দ্রতা কম থাকে।
অতিরিক্ত গরমে ডায়রিয়া, বমি ও মাত্রাতিরিক্ত ঘামে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। সরাসরি সূর্যের আলো গায়ে লাগায় এর ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মুখমণ্ডল, বাহু ও বুকের চামড়ায় সানবার্ন হতে পারে।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের জন্য পাকস্থলী ও অন্ত্রের নানা রকম সমস্যা হয়ে থাকে। বয়স্ক হজযাত্রীরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন বেশি। প্রয়োজনীয় পরিমাণে ফল ও শাকসবজি না খেয়ে কেবল প্যাকেটজাত খাবার গ্রহণ করায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি অতি সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা যায়।

হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। এ সময় জ্বর ও সাধারণ ব্যথা প্রায় সবাইকে কাবু করে ফেলে। এর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সঙ্গে রাখা ভালো। পাতলা পায়খানা ও আমাশয় হলে যাতে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ওরাল রিহাইড্রেশন স্যালাইন বা খাওয়ার স্যালাইন সঙ্গে রাখা উচিত।
হজের দিনগুলোতে সবচেয়ে কঠিন কাজগুলো করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক কিছু বিষয় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। সরাসরি সূর্যের আলো গায়ে না লাগানো, একটানা দীর্ঘক্ষণ না হেঁটে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে হাঁটা, অত্যধিক জনবহুল পরিবেশ এড়িয়ে চলা, প্রয়োজন অনুপাতে বিশ্রাম ও ঘুমানো। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে সতর্কতামূলক অতিরিক্ত আরও একটি সঙ্গে নেওয়া ভালো।

অসুস্থ ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য ইলেকট্রিক কার ও হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা
মক্কার মসজিদুল হারামে হজ ও ওমরাহর তাওয়াফ ও সাঈ করা অসুস্থ, বয়স্ক বা শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য কঠিন হতে পারে। তাদের কষ্ট লাঘব করতে মসজিদুল হারামে ইলেকট্রিক কার ও হুইলচেয়ারের বিশেষ সেবা চালু আছে। 
তাওয়াফ করার জন্য ভাড়া ৭০-১৫০ সৌদি রিয়াল। সাঈ করার জন্য ভাড়া ১০০-২০০ সৌদি রিয়াল। তবে এ ভাড়া পরিবর্তনশীল। মসজিদুল হারামের বিভিন্ন গেট– ফাহাদ গেট, কিং আবদুল আজিজ গেট ইত্যাদি ছাড়াও কর্মচারীদের কাছ থেকে এই সেবা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ