নতুন ‘নাগরিক সেবা’ কী, কীভাবে পাওয়া যাবে
Published: 28th, May 2025 GMT
পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন, জিডি (সাধারণ ডায়েরি) ও ভূমি সেবাসহ সরকারি বিভিন্ন সেবা নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে কয়েকটি সেবা নিয়ে নাগরিক সেবাকেন্দ্রের পাইলট কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।
বর্তমানে এসব কেন্দ্রে সরকারি সেবার ক্ষেত্রে শুধু আবেদনপ্রক্রিয়া–সংক্রান্ত সেবা পাওয়া যাবে। সরকারের লক্ষ্য হলো—সব সেবাকে পারস্পরিক কার্যক্রম সুবিধার (ইন্টার-অপারেবিলিটি) মাধ্যমে একটি গেটওয়ে করা এবং এসব কেন্দ্র থেকেই পুরো সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা করা। গেটওয়ে হলো নেটওয়ার্ক যন্ত্র, যা একাধিক নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে তথ্য আদান-প্রদান নিশ্চিত করে।
‘এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা’ স্লোগান নিয়ে ২৬ মে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘নাগরিক সেবা’ নামের এ ধরনের কেন্দ্রের পাইলট কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের তত্ত্বাবধানে এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানানো হয়, পাইলট প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর গুলশান, উত্তরা ও নীলক্ষেত এলাকায় নাগরিক সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। গুলশান ও উত্তরার কেন্দ্রে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। নীলক্ষেত কেন্দ্রে শিগগির কাজ শুরু হবে।
৩০ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে ‘নাগরিক সেবা’ নিয়ে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, এক ঠিকানায় সরকারি সব নাগরিক সেবা পাওয়া যাবে এই প্ল্যাটফর্মে। এ উদ্যোগের জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা যা নাগরিক সেবাকেন্দ্রে এখনই নেওয়া যাবে, তার তালিকা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
‘নাগরিক সেবা’র উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে, হয়রানি রোধে ও ভোগান্তিমুক্ত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।
নাগরিক সেবাকেন্দ্র কীভাবে কাজ করবে
২৭ মে দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে গুলশান সেবাকেন্দ্রে দেখা যায়, কেন্দ্র গোছানোর কাজ এখনো কিছুটা বাকি আছে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত উদ্যোক্তারা বলেন, এখনই কেউ সেবা নিতে এলে তা দেওয়া যাবে।
গুলশান-১ এ বিটিসিএলের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কার্যালয়ের দুটি কক্ষে শুরু হয়েছে নাগরিক সেবাকেন্দ্র। পাইলট প্রকল্পের আওতায় সরকারি উদ্যোগেই এই কেন্দ্র তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এই কেন্দ্রে উদ্যোক্তা হিসেবে আছেন মো.
মো. জাহিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিক সেবা দেওয়ার জন্য তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট, খাজনা, মিউটেশন এবং অনলাইন জিডির আবেদনপ্রক্রিয়ায় গ্রাহকদের সহায়তা করবেন তাঁরা। এই কাজের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে তাঁরা সরকার নির্ধারিত ফি নেবেন। কোন সেবার ফি কত তা তালিকা আকারে কেন্দ্রে টাঙানো থাকবে।
প্রথম দিন সেবা নিতে কোনো গ্রাহক এসেছেন কি না—জানতে চাইলে উদ্যোক্তা জাহিদ বলেন, সকালের দিকে একজন গ্রাহক জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের বিষয়ে তথ্য জেনে গেছেন।
‘নাগরিক সেবা’ প্ল্যাটফর্মের জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা হলে এবং কার্যক্রম ঠিকঠাক মতো চললে পরের ধাপে পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারীসেবাকেন্দ্রে আসা গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে উদ্যোক্তা বশিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকেরা তথ্য প্রকাশ না করার চুক্তির (নন–ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট) আওতায় আসবেন। উদ্যোক্তারা যেসব সংস্থার সেবা দেবেন, সেসব সংস্থা থেকেও তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
‘নাগরিক সেবা’ প্ল্যাটফর্ম কীভাবে কাজ করবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের সব জেলায় একটি করে এ ধরনের সেবাকেন্দ্র থাকবে। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত ১৭ হাজারের বেশি নিবন্ধন করেছেন। এর বাইরে কওমি উদ্যোক্তা, নারীদের উই নেটওয়ার্ক এবং পোস্টাল উদ্যোক্তারাও যুক্ত হবেন। তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শেষে পরীক্ষা নেওয়া হবে। উত্তীর্ণদের উদ্যোক্তা হিসেবে সনদ দেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজের এক পোস্টে বলা হয়েছে, নাগরিক সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং, নির্ধারিত পোশাক, পরিচয়পত্র ও সরকারি সনদ থাকবে। এসব কেন্দ্রে উচ্চগতি ও মানের ইন্টারনেট–সেবা দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হবে। এ ধরনের একটি সেবাকেন্দ্র স্থাপনে ঋণসহায়তার জন্যও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার আলোচনা করবে। সরকারি, আধা-সরকারি অফিস, পোস্ট অফিস, বিটিসিএলের মতো অফিসে কেন্দ্রের জন্য জায়গা বিবেচনা করা হবে।
আরও যেসব সেবা যুক্ত হতে পারে
‘নাগরিক সেবা’ সম্পর্কে ৩ মে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এসব কেন্দ্র আবেদন ছাড়াও পূর্ণাঙ্গ সেবা পেতে সহায়তা করবে।
অর্থাৎ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাসপোর্ট সেবার জন্য একজন নাগরিক এসব কেন্দ্রে গেলে আবেদনের পর সেখানে আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশ দেওয়া, ছবি তোলার কাজও সম্পন্ন করতে পারবেন। কেন্দ্রের সরকারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সনদধারী উদ্যোক্তারা সেবাকেন্দ্র থেকেই গ্রাহকের এসব আবেদনসংশ্লিষ্ট সেবাদাতা কার্যালয়ে পাঠাবেন। আবেদনের জন্য নাগরিককে ওই কার্যালয়ে আর যেতে হবে না।
২৭ মে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাগরিক সেবা’ প্ল্যাটফর্মের জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা হলে এবং কার্যক্রম ঠিকঠাক মতো চললে পরের ধাপে পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া ট্রেড লাইসেন্স, ট্রেড মার্ক, বিভিন্ন সরকারি আবেদনসহ জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কাজ সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে এজেন্ট ব্যাংকিংও চালু করা হবে।
আরও পড়ুনমোবাইল অপারেটররা ইন্টারনেটের দাম না কমালে সরকার কঠোর হবে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব১৫ মে ২০২৫এজেন্ট ব্যাংকিং হলো, শাখা না খুলে একটি বৈধ এজেন্সি চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা এজেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা দেওয়া। এজেন্টরা ব্যাংকের পক্ষ হয়ে তাদের সেবাকেন্দ্র থেকে ব্যাংকের গ্রাহকদের সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং সেবা দেবে।
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী জানান, উদ্যোক্তারা শুধু ‘নাগরিক সেবা’র সফটওয়্যারে ইনপুট দিতে পারবেন। এই প্ল্যাটফর্মের জন্য এখনো সরকারের কোনো বাজেট নেই। আইসিটি বিভাগের নিজস্ব প্রোগ্রামাররা প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করছে। উদ্যোক্তারা নিজেদের খরচে এই কেন্দ্রের অবকাঠামো গড়ে তুলবেন। তবে নাগরিক সেবার সরকারি ব্র্যান্ডিং ব্যবহার করতে হবে। নিকটস্থ সেবাকেন্দ্রের অবস্থান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানা যাবে। ওয়েবসাইটে উদ্যোক্তাদের র্যাঙ্কিং থাকবে এবং অভিযোগও জানানো যাবে।
ফয়েজ আহমদ আরও বলেন, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কাছে দুটি করে সেবা চাওয়া হয়েছে, যা এই নাগরিক সেবার আওতায় আনা যায়। মন্ত্রণালয় তথ্য দেওয়া শুরু করেছে।
আরও পড়ুনএক ব্যক্তির নামে ১০টির বেশি মুঠােফোন সিম দেওয়া হবে না২৫ মে ২০২৫ইউডিসি থাকতে ‘নাগরিক সেবা’ কেন
‘নাগরিক সেবা’ যে ধরনের কাঠামো ও উদ্দেশ্য নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে, প্রায় একই রকম সেবা বিদ্যমান ব্যবস্থায় আছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) প্ল্যাটফর্মও প্রায় একই আদলে গড়ে তোলা হয়েছিল।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এটুআইয়ের উদ্যোগে সারা দেশে ইউডিসি গড়ে তোলে। এটুআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে ৮ হাজার ৮০৫টি ইউডিসিতে সাড়ে ১৬ হাজারের মতো উদ্যোক্তা আছে। এখান থেকে ৩ তিন শতাধিক সেবা দেওয়া হয়। ইউডিসিও চলে উদ্যোক্তা মডেলে। অর্থাৎ উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আবেদনের পর সরকারের প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁরা সেবা দেন। অনলাইনে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবার আবেদন, ভর্তির আবেদন, সরকারি বিভিন্ন ভাতার আবেদন, ভূমি সেবা, টেলিমেডিসিন সেবা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, মোবাইল ব্যাংকিং, ভিসার আবেদন, চাকরির আবেদনের মতো বিভিন্ন সেবা ইউডিসি থেকে দেওয়া হয় বলে এটুআইয়ের ওয়েবসাইটে বলা আছে।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাসপোর্ট সেবার জন্য একজন নাগরিক এসব কেন্দ্রে গেলে আবেদনের পর সেখানে আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশ দেওয়া, ছবি তোলার কাজও সম্পন্ন করতে পারবেন।ইউডিসি প্রসঙ্গে ৩ মে ফয়েজ আহমদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, অনেক ইউডিসি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় কার্যক্রম ঠিকভাবে চলে না। প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পোস্টে এ ব্যাপারে বলা হয়েছিল, ইউডিসিগুলোকে নাগরিক সেবার প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হবে। ইউডিসির উদ্যোক্তাদের নাগরিক প্ল্যাটফর্মে আবেদন করে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সনদ নিয়ে তাঁরাও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সেবা দিতে পারবেন।
ইউডিসিকে উন্নীত করে একই কাজ করা যেত কি না—জানতে চাইলে ২৭ মে ফয়েজ আহমদ বলেন, ইউডিসি ইন্টার-অপারেবল নয়, এখানে শুধু ব্যক্তি উদ্যোগে আবেদন হয়। কিন্তু নাগরিক সেবা প্ল্যাটফর্মে সরকারের সব সেবাদাতা সংস্থা যুক্ত থাকবে। যেকোনো সংস্থার সেবার জন্য এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় তা চলে যাবে।
ফয়েজ আহমদ আরও বলেন, এ জন্য তাঁরা ইন্টার-অপারেবিলিটি ও ডেটা গভর্ন্যান্স আইন করতে যাচ্ছেন, যা দিয়ে এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে আদান-প্রদান হওয়া নাগরিকের তথ্যও সুরক্ষিত থাকবে।
আরও পড়ুনসাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫: উন্নততর, তবে দ্বৈততা তৈরি করবে কিছু ধারা২৩ মে ২০২৫নাগরিক সেবা দেওয়ার জন্য এই কেন্দ্রে আছেন সরকারি প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম র এসব ক ন দ র প রথম আল ক এই ক ন দ র র ব যবস থ সরক র র প গ র হকদ র ফ সব ক প ইন ট র ন র পর গ র হক প রব ন অন য য় প ইলট ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
ড. ফরিদ আহমদ সোবহানীকে সংবর্ধনা দিল গ্রীন এইচ আর প্রফেশনালস
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) হিসেবে অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী নিয়োগ পাওয়ায় তাকে সংবর্ধনা জানিয়েছে পেশাদার মানবসম্পদ উন্নয়নভিত্তিক সংগঠন ‘গ্রীন এইচআর প্রফেশনালস বাংলাদেশ’।
সংগঠনটির ৩০৯তম পাঠচক্র শেষে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ড. সোবহানীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রীন এইচআর প্রফেশনালস বাংলাদেশের সদস্য, উপদেষ্টা এবং কর্পোরেট ও শিক্ষাজগতের বিভিন্ন পেশাজীবী।
অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষাবিদ ও গবেষক। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কিম্বারলেতে অবস্থিত সোল প্লাতজে ইউনিভার্সিটির ইকোনমিক্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস অনুষদের ভিজিটিং প্রফেসর, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব বিজনেস লিডারশিপের একজন রিসার্চ ফেলো এবং মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি এমএআরএ এর অ্যাকাউন্টিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটেরও ভিজিটিং প্রফেসর।তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের নিয়োগ বোর্ডে এক্সটারনাল মেম্বার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক সোবহানীর শিক্ষা জীবনের শুরু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, যেখানে তিনি অ্যাকাউন্টিংয়ে মেজরসহ বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দ্বিতীয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি সায়েন্স মালয়েশিয়া থেকে এইচআর অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেন।তিনি দেশে-বিদেশে সম্মানিত জার্নাল ও ম্যাগাজিনে প্রায় ১০০টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে একাডেমিক জগতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গ্রীন এইচআর প্রফেশনালস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. রওশন আলী বুলবুল। তিনি বলেন, “ড. সোবহানী আমাদের সংগঠনের অ্যাডভাইজার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে জ্ঞান ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন। আমরা গর্বিত যে তিনি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এটি আমাদের সবার জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা।”
তিনি আরো জানান, গ্রীন এইচআর প্রফেশনালস বাংলাদেশ দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গ্রিন এইচআর ধারণা ছড়িয়ে দিতে এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সংগঠনটি ইতোমধ্যে ৫৫টিরও বেশি বই পাঠের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে ৩০৯টি পাঠচক্র সম্পন্ন করেছে, যেখানে সফট স্কিল, পাওয়ার বিআই, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং সমসাময়িক উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৮টি ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রাম এবং তিনটি ট্রেইনার অব ট্রেইনার্স (টিওটি) প্রোগ্রাম সম্পন্ন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে “গ্রীন এইচআর ফাউন্ডেশন” গঠনের মাধ্যমে আরো সুসংগঠিত কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনাও রয়েছে।
সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির চিফ অ্যাডভাইজার ড. মোশাররফ হোসেন, মো. নুরুল ইসলাম (সাবেক হেড অব এইচআর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ), এস এম জাহিদ হাসান (সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, ওয়ালটন গ্রুপ), রানা চক্রবর্তী (সিওও, বাংলাদেশ স্পেশালিস্ট হসপিটাল), মোহাম্মদ ইকরাম হোসেন, সৈয়দ আকরাম হোসেন, সৈয়দ মো. আসিফ রহমান, সাইফুল আমিন হাসানাত, প্রণব চন্দ্র, এমরান হোসেন, তৌহিদ হোসেনসহ কোর মেম্বাররা।
সংবর্ধনায় অংশ নেওয়া সদস্যরা জানান, “গ্রীন এইচআর প্রফেশনালস বাংলাদেশ শুধু পেশাগত উন্নয়নের প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একে অপরকে শেখার ও সহমর্মিতার বন্ধনে আবদ্ধ করার একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।”
ঢাকা/এসবি