কৈশোরে মাসিকের শুরু। সেই থেকেই প্রতি মাসের কয়েকটা দিন হয়ে ওঠে একটু আলাদা। যদিও তা সবার জন্যই স্বাভাবিক। তবু কিশোরী বয়স থেকে এই স্বাভাবিক বিষয়টিকে সামলে চলতে শিখতে হয়। মাসের কোনো না কোনো সময়ে চলমান রক্তক্ষরণের অস্বস্তি নিয়েই একে একে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম, কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ, সংসার এবং সন্তান পালনের দায়িত্ব সামলান নারী। কোনো একটি জায়গার পরিবেশ যদি নারীবান্ধব না হয়, তাহলে এই স্বাভাবিক বিষয়টাই হয়ে দাঁড়ায় আলাদা এক চ্যালেঞ্জ।

স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা.

ফারজানা রশীদ জানান, কৈশোর থেকেই মাসিকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। নইলে খুব সহজেই হতে পারে জীবাণু সংক্রমণ। দেখা দিতে পারে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাবসহ বিভিন্ন কষ্টদায়ক উপসর্গ। সংক্রমণ মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে প্রজননক্ষমতাও ঝুঁকিতে পড়ে। তাই মাসিকের সময়ের স্বাস্থ্যসচেতনতার কিছু দিকনির্দেশনাও দিলেন এই বিশেষজ্ঞ।

আরও পড়ুনপিরিয়ড অনিয়মিত হলে কী করবেন৩০ ডিসেম্বর ২০২২

মাসিক সম্পর্কে জানান

মাসিক যে নিতান্ত স্বাভাবিক একটি বিষয়, কৈশোরেই তা জানাতে হবে। অভিভাবক হিসেবে আপনার ছেলে ও মেয়ে দুজনকেই এ বিষয়ে জানান। সহজভাবে বিষয়টিকে গ্রহণ করতে শেখান। মাসিকের সময় খেলাধুলা বা শরীরচর্চায় কোনো বাধা নেই। কেবল প্রয়োজন নারীত্বের যত্ন। এ তো কেবল দেহের ভেতরে হরমোনের কিছু এদিক-সেদিক হওয়ার ব্যাপার। কিশোরীর অভিমানী মনের পেছনে যে হরমোনেরও খানিকটা দায় আছে, নিজেও তা উপলব্ধি করুন। কিশোরীর মনের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। স্নেহমমতায় বেড়ে উঠলে কৈশোরের উত্তাল মন একদিন ঠিকই দায়িত্বশীল হবে।

জীবাণু প্রতিরোধ

নারীত্বের বিশেষ দিনগুলোতে দরকার পড়ে বিশেষ কিছু অনুষঙ্গ। এখন স্যানিটারি ন্যাপকিন, ট্যাম্পুন, মেন্সট্রুয়াল কাপ কিংবা বিশেষায়িত অন্তর্বাস ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কাপড়ের তুলনায় এসব অনুষঙ্গ স্বাস্থ্যকর। তবে ব্যবহারবিধি জানতে হবে ঠিকঠাক। এসব অনুষঙ্গ ব্যবহারের আগে ও পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এসব অনুষঙ্গের কোনোটিই চব্বিশ ঘণ্টা ব্যবহার করা যাবে না। বদলানোর প্রয়োজন না হলেও এগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বদলে ফেলতে হবে। এসব অনুষঙ্গ সংরক্ষণও করতে হবে যত্নের সঙ্গে। আর ব্যবহারের পর ভালোভাবে মুড়িয়ে ফেলতে হবে যথাস্থানে। যেখানে সেখানে তো নয়ই, টয়লেটে বা জলাশয়েও নয়। ভ্রমণে গিয়ে যথাস্থানে ফেলার সুযোগ না পেলে মুড়িয়ে রেখে দিন নিজের ব্যাগের এক কোণে। পরে সুবিধামতো ফেলে দিলেই হলো।

আরও পড়ুনমেয়েকে মাসিক সম্পর্কে কীভাবে জানাবেন০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কোন অনুষঙ্গ কত সময়

একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন ছয় ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করা ঠিক না। খরচ বাঁচানোর প্রয়োজনে ন্যাপকিনটির ওপর বাড়তি তুলার স্তর বিছিয়ে নিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে ছয় ঘণ্টার মধ্যে কেবল তুলার স্তরটি বদলে ফেললেও চলে, যদি ন্যাপকিনটি না ভেজে। তবে টিস্যুপেপার কখনোই তুলার বিকল্প নয়।

একটি ট্যাম্পুন চার থেকে আট ঘণ্টার বেশি সময় রাখা যাবে না।

মেন্সট্রুয়াল কাপ কিংবা বিশেষায়িত অন্তর্বাস একটানা সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা ব্যবহার করা যায়। তবে এগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য। তাই ব্যবহারের পর নিয়মমতো পরিষ্কার করাটাও জরুরি। তা ছাড়া মাসিক শেষ হলে ওই মাসে ব্যবহৃত মেন্সট্রুয়াল কাপ ফুটন্ত পানিতে কয়েক মিনিটের জন্য ডুবিয়ে রাখা উচিত।

সুস্থতার চর্চা

মাসিকের সময় পর্যাপ্ত পানি এবং তরল খাবার খাওয়া আবশ্যক।

পাতলা ও নরম কাপড়ের অন্তর্বাস বেছে নেওয়া উচিত। পায়জামা বা প্যান্টও এমন হওয়া উচিত, যাতে সেটি ভেদ করে বাতাস চলাচল করতে পারে।

জরায়ুমুখ বা এর আশপাশ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিলেই পরিচ্ছন্ন থাকবে। এসব স্থানে সাবান দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাতে এসব স্থানের স্বাভাবিক সুরক্ষা নষ্ট হতে পারে। তা ছাড়া এসব স্থানে কখনোই কোনো সুগন্ধি উপকরণ, যেমন সুগন্ধি টিস্যু ব্যবহার না করা ভালো।

তলপেটে ব্যথা হলে উষ্ণ কিছু চেপে রাখা যেতে পারে।

হরমোনের প্রভাবে মাসের বিভিন্ন সময়ে মনের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তাই সব সময়ই মনের যত্ন নেওয়া জরুরি।

আরও পড়ুনপিরিয়ডের সময় যেসব যত্নের প্রয়োজন২৭ মে ২০২১

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ব যবহ র র র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

দিল্লির কথায় রাজপথ দখলের চেষ্টা করলে ১৮ কোটি জনতা ঠেকিয়ে দেবে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে দিল্লির কোনো প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) কাজ করবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেছেন, দিল্লির কথায় বাংলাদেশে কোনো দল যদি রাজপথ দখলের চেষ্টা করে, তাহলে ১৮ কোটি জনতা তাদের ঠেকিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকবে।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এসব কথা বলেন। এনসিপির প্রকৌশল উইংয়ের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ভারতীয় একজন বক্তব্য দিয়েছেন, ডিসেম্বরে নাকি বাংলাদেশে নির্বাচন হতে হবে। বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। সে বিষয়ে দিল্লির কোনো প্রেসক্রিপশন বাংলাদেশে কাজ করবে না। আর দিল্লির কথায় বাংলাদেশে কোনো দল যদি রাজপথ দখলের চেষ্টা করে, দিল্লির কোনো প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে যদি কোনো দল বা ব্যক্তি বাংলাদেশে কাজ শুরু করে,  তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনতা যেভাবে ৫ আগস্টে নেমে এসেছিল, (সেভাবে) তারা ভবিষ্যতে রাজপথে নেমে এসে দিল্লি এবং দিল্লির প্রেসক্রিপশনে যারা কাজ করছে, তাদের ঠেকিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকবে।’

কোনো রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন অফিসকে দলীয় অফিসে পরিণত করে সেখান থেকে তারা চট্টগ্রামের মেয়র নিল এবং ঢাকাতেও তারা এ ধরনের একটি গেজেট প্রকাশ করল। আমরা তাদের কাছে আহ্বান জানাব, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের কাঠামোগত জায়গায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলো নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন তাদের লিটমাস টেস্ট বা পরীক্ষায় ফেল করেছে। তারা যে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হয়েছে, সেটা আমরা ইশরাক হোসেনের গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে দেখলাম।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘তারা আইন-আদালতে গিয়ে জবরদস্তি করে আমাদের বিচারালয়কে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, তা–ও বাংলাদেশের ইতিহাসে লেখা থাকবে। আমরা গণ-অভ্যুত্থানের পরে কোনো বিভেদ চাই না। কিন্তু কেউ যদি গুন্ডামি-মাস্তানি করে, সন্ত্রাস করে, নগর ভবন দখল করে রাখে, নির্বাচন অফিসকে দলীয় অফিসে পরিণত করে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন দখল করে রাখে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দখল করে রাখে, এসব গুন্ডামি আর বাংলাদেশে চলবে না৷ যদি গুন্ডামি করতে হয়, তাহলে বাংলাদেশের বাইরে গিয়ে করুন।’

অনুষ্ঠানে এনসিপির প্রকৌশল উইংয়ের কমিটি ঘোষণা করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এই কমিটিতে শেখ মোহাম্মদ শাহ মঈনকে সমন্বয়ক করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল আমিন ছাড়াও প্রকৌশল উইংয়ের নেতারা বক্তব্য দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ