মাসিক নিয়ে ভাবনা কি কেবল নারীরই একা?
Published: 28th, May 2025 GMT
কৈশোরে মাসিকের শুরু। সেই থেকেই প্রতি মাসের কয়েকটা দিন হয়ে ওঠে একটু আলাদা। যদিও তা সবার জন্যই স্বাভাবিক। তবু কিশোরী বয়স থেকে এই স্বাভাবিক বিষয়টিকে সামলে চলতে শিখতে হয়। মাসের কোনো না কোনো সময়ে চলমান রক্তক্ষরণের অস্বস্তি নিয়েই একে একে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম, কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ, সংসার এবং সন্তান পালনের দায়িত্ব সামলান নারী। কোনো একটি জায়গার পরিবেশ যদি নারীবান্ধব না হয়, তাহলে এই স্বাভাবিক বিষয়টাই হয়ে দাঁড়ায় আলাদা এক চ্যালেঞ্জ।
স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা.
মাসিক সম্পর্কে জানান
মাসিক যে নিতান্ত স্বাভাবিক একটি বিষয়, কৈশোরেই তা জানাতে হবে। অভিভাবক হিসেবে আপনার ছেলে ও মেয়ে দুজনকেই এ বিষয়ে জানান। সহজভাবে বিষয়টিকে গ্রহণ করতে শেখান। মাসিকের সময় খেলাধুলা বা শরীরচর্চায় কোনো বাধা নেই। কেবল প্রয়োজন নারীত্বের যত্ন। এ তো কেবল দেহের ভেতরে হরমোনের কিছু এদিক-সেদিক হওয়ার ব্যাপার। কিশোরীর অভিমানী মনের পেছনে যে হরমোনেরও খানিকটা দায় আছে, নিজেও তা উপলব্ধি করুন। কিশোরীর মনের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। স্নেহমমতায় বেড়ে উঠলে কৈশোরের উত্তাল মন একদিন ঠিকই দায়িত্বশীল হবে।
জীবাণু প্রতিরোধ
নারীত্বের বিশেষ দিনগুলোতে দরকার পড়ে বিশেষ কিছু অনুষঙ্গ। এখন স্যানিটারি ন্যাপকিন, ট্যাম্পুন, মেন্সট্রুয়াল কাপ কিংবা বিশেষায়িত অন্তর্বাস ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কাপড়ের তুলনায় এসব অনুষঙ্গ স্বাস্থ্যকর। তবে ব্যবহারবিধি জানতে হবে ঠিকঠাক। এসব অনুষঙ্গ ব্যবহারের আগে ও পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এসব অনুষঙ্গের কোনোটিই চব্বিশ ঘণ্টা ব্যবহার করা যাবে না। বদলানোর প্রয়োজন না হলেও এগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বদলে ফেলতে হবে। এসব অনুষঙ্গ সংরক্ষণও করতে হবে যত্নের সঙ্গে। আর ব্যবহারের পর ভালোভাবে মুড়িয়ে ফেলতে হবে যথাস্থানে। যেখানে সেখানে তো নয়ই, টয়লেটে বা জলাশয়েও নয়। ভ্রমণে গিয়ে যথাস্থানে ফেলার সুযোগ না পেলে মুড়িয়ে রেখে দিন নিজের ব্যাগের এক কোণে। পরে সুবিধামতো ফেলে দিলেই হলো।
আরও পড়ুনমেয়েকে মাসিক সম্পর্কে কীভাবে জানাবেন০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩কোন অনুষঙ্গ কত সময়
একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন ছয় ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করা ঠিক না। খরচ বাঁচানোর প্রয়োজনে ন্যাপকিনটির ওপর বাড়তি তুলার স্তর বিছিয়ে নিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে ছয় ঘণ্টার মধ্যে কেবল তুলার স্তরটি বদলে ফেললেও চলে, যদি ন্যাপকিনটি না ভেজে। তবে টিস্যুপেপার কখনোই তুলার বিকল্প নয়।
একটি ট্যাম্পুন চার থেকে আট ঘণ্টার বেশি সময় রাখা যাবে না।
মেন্সট্রুয়াল কাপ কিংবা বিশেষায়িত অন্তর্বাস একটানা সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা ব্যবহার করা যায়। তবে এগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য। তাই ব্যবহারের পর নিয়মমতো পরিষ্কার করাটাও জরুরি। তা ছাড়া মাসিক শেষ হলে ওই মাসে ব্যবহৃত মেন্সট্রুয়াল কাপ ফুটন্ত পানিতে কয়েক মিনিটের জন্য ডুবিয়ে রাখা উচিত।
সুস্থতার চর্চা
মাসিকের সময় পর্যাপ্ত পানি এবং তরল খাবার খাওয়া আবশ্যক।
পাতলা ও নরম কাপড়ের অন্তর্বাস বেছে নেওয়া উচিত। পায়জামা বা প্যান্টও এমন হওয়া উচিত, যাতে সেটি ভেদ করে বাতাস চলাচল করতে পারে।
জরায়ুমুখ বা এর আশপাশ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিলেই পরিচ্ছন্ন থাকবে। এসব স্থানে সাবান দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাতে এসব স্থানের স্বাভাবিক সুরক্ষা নষ্ট হতে পারে। তা ছাড়া এসব স্থানে কখনোই কোনো সুগন্ধি উপকরণ, যেমন সুগন্ধি টিস্যু ব্যবহার না করা ভালো।
তলপেটে ব্যথা হলে উষ্ণ কিছু চেপে রাখা যেতে পারে।
হরমোনের প্রভাবে মাসের বিভিন্ন সময়ে মনের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তাই সব সময়ই মনের যত্ন নেওয়া জরুরি।
আরও পড়ুনপিরিয়ডের সময় যেসব যত্নের প্রয়োজন২৭ মে ২০২১উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ব যবহ র র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টা শুল্কের কারণে ক্রয়াদেশ কম
তৃতীয় দফা আনুষ্ঠানিক আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় আজ শুক্রবার থেকে বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। বাড়তি শুল্কহার শেষ পর্যন্ত কত শতাংশে স্থির হয় সেটি ফয়সালা না হওয়ায় মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আগামী মৌসুমে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ ২০ শতাংশ পর্যন্ত কম দিচ্ছে। আবার কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত ক্রয়াদেশ না দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
পাল্টা শুল্ক কার্যকরের সময় চলে এলেও তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা আগের মতো উদ্বিগ্ন নন। কারণ, দুই-তিন দিন ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও মার্কিন বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে যে ইঙ্গিত পাচ্ছেন তাতে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ভিয়েতনামের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। এ ছাড়া প্রতিযোগী দেশ ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, বর্তমানে বসন্ত ও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ আসার মৌসুম। তবে পাল্টা শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়বে। তাতে তৈরি পোশাকের বিক্রি কমবে। সেটি অনুমান করে মার্কিন বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিশ্রুতির চেয়ে ১০-২০ শতাংশ কম ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত ক্রয়াদেশ দিতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার কথা জানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার কাছাকাছি নামিয়ে আনা গেলে বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনা তৈরি হবে। তার কারণ চীন থেকে ব্যাপক হারে ক্রয়াদেশ সরবে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক নিয়ে আমরা খুব বেশি ভয় পাচ্ছি না এখন। তবে বাড়তি শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের চাহিদা কমবে। তাতে স্বাভাবিকভাবেই ক্রয়াদেশও কিছুটা কমতে পারে। বাড়তি শুল্ক কার্যকর ও শুল্কহার নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলে আগামী ৩-৪ মাস হয়তো ক্রয়াদেশ কম থাকতে পারে। শেষ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক ভিয়েতনামের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে পারলে ক্রয়াদেশ বাড়বে।’
যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের ৫৭টি দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। তখন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক ছিল ৩৭ শতাংশ। তিন মাসের জন্য এ সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ৮ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক হবে ৩৫ শতাংশ, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা বর্তমানে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করেন। নতুন হার কার্যকর হলে তা ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্কহার কমাতে তৃতীয় দফার আলোচনা করতে বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। এই দলটি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষ করেছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
দেশের তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ইভিন্স গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তাদের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ২৫ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
জানতে চাইলে ইভিন্স গ্রুপের পরিচালক শাহ রাঈদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ আসার গতি বর্তমানে কিছুটা ধীর। পাল্টা শুল্ক শেষ পর্যন্ত কত দাঁড়ায় তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে বাড়তি এই শুল্ক শেষ পর্যন্ত মার্কিন ক্রেতাদের দিতে হবে। ফলে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে দেশটিতে বেসিক বা নিত্য ব্যবহার্য তৈরি পোশাকের বিক্রি কমবে। আমরা এসব সস্তা পোশাকই বেশি রপ্তানি করি। ফলে আমাদের রপ্তানি কমতে পারে।’
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে রপ্তানি করে ৩০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তার একটি বড় অংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।
স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম বলেন, ‘মার্কিন বড় ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক সোর্সিং অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিশ্রুত ক্রয়াদেশ ১০-২০ শতাংশ কমিয়ে দিচ্ছে। এপ্রিলে আমরা যেসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে ৫ শতাংশের মতো মূল্যছাড় দিয়েছিলাম, সেটি বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুম পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করছে।’
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক শীর্ষ বড় বাজার। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। এ ছাড়া মাথার টুপি বা ক্যাপ, চামড়ার জুতা, হোম টেক্সটাইল, পরচুলা ইত্যাদি বেশি রপ্তানি হয়।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় বর্তমানে ক্রয়াদেশ কিছুটা কম। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশের পণ্যে শুল্ক কত দাঁড়াচ্ছে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এ ছাড়া আমাদের পাল্টা শুল্ক কমবে বলে আমরা আশাবাদী।’