বহির্বিভাগে লম্বা লাইন। শিশু-বৃদ্ধ সব বয়সের রোগী এসেছেন চিকিৎসা নিতে। কোনো চিকিৎসক নেই। দুইজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) সারা হেমব্রম ও রিপন রায় রোগী দেখছেন। কক্ষের ভেতরও রোগীর ভিড়। জরুরি বিভাগও সামলাচ্ছেন একজন সহকারী সার্জন।
এ চিত্র দেখা গেছে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতালটিতে জনবল সংকট ছাড়াও রয়েছে নানা সমস্যা। রয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব। পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডা. আব্দুল জব্বার। স্যাকমো দিয়ে সেবা দেওয়ার বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, ৫০ শয্যার হাসপাতাল ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। বহির্বিভাগে রোগীর চাপ, ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বেশি; পরিস্থিতি সামাল দিতে স্যাকমো দিয়ে রোগী দেখতে বাধ্য হচ্ছেন।
ব্যাপক জনবল সংকট: ২০১০ সালে হাসপাতালটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালট্যান্টসহ চিকিৎসক পদ রয়েছে ৩২টি। বিপরীতে কর্মরত আছেন ৩ জন। হাসপাতালে চিকিৎসকসহ মোট পদের সংখ্যা ২১২। এর মধ্যে ৬২টি পদ শূন্য। জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি, শিশু, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিওলজি, চক্ষু, ইএনটি, আরএমওসহ ২৯টি পদ শূন্য দীর্ঘদিন ধরে। মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন একজন চিকিৎসক। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে রোগী দেখেন সহকারী সার্জন ডা. আব্দুর রহমান সোহান ও দুই জন স্যাকমো।
স্থানীয় বাসিন্দা বুলবুল আহাম্মেদ বলেন, ‘২৩ এপ্রিল স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। জরুরি বা বহির্বিভাগ কোথাও চিকিৎসক ছিল না। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ফোন করলে চিকিৎসক পাঠাচ্ছেন বলে জানান। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও চিকিৎসক না আসায় অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।’
হাসপাতালের স্যাকমো সারা হেমব্রম ও রিপন রায় বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই রোগী সেবা দিচ্ছেন। বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।
বেহাল চিকিৎসা সরঞ্জাম: এক্স–রে মেশিন খারাপ থাকায় ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর টেকনোলজিস্ট আব্দশ শুকুরকে রাজশাহী মেডিকেলে বদলি করা হয়। একই সঙ্গে সেখানকার টেকনোলজিস্ট আব্দুর রাজ্জাককে পীরগঞ্জে এনে ফের ডেপুটেশনে রাজশাহীতে পাঠানো হয়। ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল এক্স-রে মেশিন সরবরাহ করে কর্তৃপক্ষ। টেকনোলজিস্ট না থাকায় সেটি চালু করা যায়নি। আব্দুর রাজ্জাকের ডেপুটেশন বাতিল করে পীরগঞ্জে ফিরিয়ে আনতে কয়েকবার কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অজ্ঞাত কারণে তাঁর ডেপুটেশন বাতিল হয়নি। ওই পদে কাউকে পদায়নও করা হয়নি।
ইসিজি এবং আলট্রাসোনোগ্রাম মেশিন অকেজো। গাইনি চিকিৎসক ও অবেদনবিদ না থাকায় ছয় বছর ধরে সিজার বন্ধ।
তিন বছরের অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন ভাকুড়া গ্রামের বাবুল ইসলাম। চিকিৎসক বেশ কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন। পরীক্ষাগুলো বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করতে বলা হয়েছে। হতদরিদ্র বাবুল এখন খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
সক্রিয় দালালচক্র: রোগীকে বিভিন্ন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভাগিয়ে নিতে এক ডজনেরও বেশি দালালচক্র সক্রিয় হাসপাতাল চত্বরে। তারা কাজ করছেন হাসপাতাল ঘিরে গড়ে ওঠা চার–পাঁচটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হয়ে। কম খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে নিয়মিত রোগী ভাগিয়ে নেন তাঁরা। এ কাজে পিছিয়ে নেই হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। ছোট ইনজুরি ও অচেতন কোনো রোগী ইমার্জেন্সিতে এলেও তারা ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও রংপুর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ: হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে রোগীর ভিড়। ওয়ার্ডগুলোর শয্যা অপরিচ্ছন্ন। একজন রোগী জানালেন বৃহস্পতিবার ভর্তি হয়েছেন। রাতেই বাড়ি ফিরবেন। কারণ, সেবা দেওয়ার মতো লোকবল নেই। টাকা না দিলে ওয়ার্ডবয়রা রোগীর শরীরে হাত দিতে চান না। ৫০-১০০ টাকা দিলেই সেবা মেলে। ওয়ার্ডের অবস্থা আরও খারাপ। হাসপাতালের বেডে বিড়াল শুয়ে আছে– এমন ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই রোগী।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত চ ক ৎসক স য কম
এছাড়াও পড়ুন:
মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে নতুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আরো পড়ুন:
নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা
১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের আগে একটা মানবাধিকার কমিশন ছিল, কিন্তু সেটি কার্যত দন্তহীন একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। নিয়োগ পদ্ধতিতে ত্রুটি, এখতিয়ারে ঘাটতি এবং নেতৃত্বের দুর্বলতায় প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এবার সেটিকে সত্যিকারের এখতিয়ারসম্পন্ন, ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।”
তিনি জানান, নতুন অধ্যাদেশে মানবাধিকার কমিশনের কাঠামো, এখতিয়ার ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। কমিশন একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সার্বক্ষণিক সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নিশ্চিত করতে আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন আহ্বান করা হবে এবং প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বাছাই কমিটি সুপারিশ করবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নিয়োগ পদ্ধতিটা এমনভাবে করেছি যাতে অভিজ্ঞ, যোগ্য ও মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় মানুষরা কমিশনে জায়গা পান।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ কর্তৃক অনুসমর্থিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি এবং প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত মানবাধিকারগুলোকেও এই কমিশনের এখতিয়ারে আনা হয়েছে। এর ফলে কমিশন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী কাজ করতে পারবে।”
অধ্যাদেশে কমিশনের এখতিয়ার বহুলাংশে বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে শৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাতেও কমিশন তদন্ত করতে পারবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “আগের কমিশনের এখতিয়ারে গুরুতর সীমাবদ্ধতা ছিল, বিশেষ করে শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে। এবার সেই সীমাবদ্ধতা দূর করা হয়েছে।”
এছাড়া, গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা আইনসহ মানবাধিকার সংরক্ষণমূলক যেকোনো আইনের বাস্তবায়নের দায়িত্ব মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আলাদা করে ‘গুম কমিশন’ গঠনের প্রয়োজন হবে না বলে তিনি জানান।
অধ্যাদেশে কমিশনের আদেশ প্রতিপালনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “এখন থেকে কমিশনের সুপারিশ বা নির্দেশ উপেক্ষা করা যাবে না। এর বাধ্যবাধকতা আইনি কাঠামোয় যুক্ত করা হয়েছে।”
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসসের।
ঢাকা/এসবি