মায়াভরা চেহারার এই কিশোরের নাম ফারাতুল মাহমুদ হাসান। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র সে। ফারাতুল ভীষণ অসুস্থ। সারা দিন অসহনীয় যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে সে। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস, ই-বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর এবং ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত সে। প্রতি মাসে ফারাতুলের জন্য প্রয়োজন হয় পাঁচ ব্যাগ রক্ত, প্রতিদিন চলে তিন হাজার টাকার ওষুধ।

ফারাতুলের বাবা মো.

সাদেকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভারত ও বাংলাদেশে গত সাত বছরে ছেলের চিকিৎসায় দুই কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। তাঁর ব্যবসার প্রায় সর্বস্ব পুঁজি ব্যয় করে এখন আর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারছেন না তিনি। স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, দ্রুত ফারাতুলের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন (বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট) করতে হবে। চিকিৎসকদের বরাতে সাদেকুল বলেন, এ জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫০ লাখ টাকা।

ছেলে ফারাতুলের জীবন বাঁচাতে সমাজের সহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন সাদেকুল ইসলাম। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: মো. সাদেকুল ইসলাম, ইসলামী ব্যাংক, রামপুরা শাখা, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর: ২০৫০২২৬০২০১২৫১১০৮; ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, রামপুরা শাখা, সঞ্চয়ী হিসাব নং: ১৭৮,১৫১,১১০৬০৫; প্রাইম ব্যাংক, বনশ্রী শাখা, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর: ১৯২২১০৭০০১০৪৪০। সাহায্য পাঠানো যাবে মুঠোফোন নম্বরেও (বিকাশ/নগদ) ০১৮৬৪-২৯১৩২৭, ০১৮৬৪-২৯১৩২৮।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

একদিকে মানবতা অন্যদিকে সংক্রমণ ঝুঁকি, এইচআইভি আক্রান্ত প্রসূতির অস্ত্রোপচার নিয়ে দ্বিধা

যশোর জেনারেল হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত এক প্রসূতির সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। একদিকে প্রসূতি নারীর চিকিৎসা দেওয়া মানবিক চাহিদা; অন্যদিকে রোগী থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণ ঝুঁকি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী রোববার তাঁর অস্ত্রোপচার নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, মাস তিনেক আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই নারীর শরীরে এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তখন তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এখন তাঁর অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। কিন্তু এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর অস্ত্রোপচার হাসপাতালে করা হলে পরবর্তী তিন দিন অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এ নিয়ে অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে। অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের দাবি, একজন রোগীর জন্য হাসপাতালের অন্য রোগীর সমস্যা হবে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া কর্তৃপক্ষের উচিত হবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন প্রসূতি নারী সন্তানের জন্ম দেন। এ ছাড়া অন্যান্য সার্জারি হয় আরও অন্তত ২০টি। এ অবস্থায় হাসপাতালে তিন দিন অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকলে রোগীরা কোথায় যাবেন? এমতাবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসকসহ একাংশের দাবি, এইচআইভি আক্রান্ত প্রসূতিকে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করে উন্নত সেবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ঢাকায় সে ধরনের হাসপাতাল আছে।

হাসপাতালের প্রশাসনিক ও প্রসূতি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যশোরের গর্ভবতী ওই নারীর শরীরে এইচআইভি শনাক্তের পর থেকে তাঁকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সন্তান জন্মদানের সময় হয়ে আসায় হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ইয়াসমিন আক্তার ২৮ মে ওই নারীর অস্ত্রোপচারের দিন নির্ধারণ করেন। কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার অভাবে তিনি করতে পারেননি। পরে আগামী রোববার নতুন দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে অস্ত্রোপচার নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নারীর সেবাদান নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে পড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রসূতি চিকিৎসক বলেন, রোগীর অস্ত্রোপচার কোনো বিষয় না। বিষয়টি হচ্ছে শরীর থেকে বের হওয়া রক্ত ও তরল নিয়ে ব্যবস্থাপনা কী হবে। সে বিষয়ে হাসপাতালে নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই। শতভাগ প্রস্তুতি ছাড়া এমন রোগীর অস্ত্রোপচার করা হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া অন্য প্রসূতিরাও আতঙ্কে থাকবেন।

জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) বজলুর রশিদ বলেন, অস্ত্রোপচারটি বিশেষায়িত হাসপাতালে করতে পারলে বেশি ভালো হতো। কিন্তু প্রসূতি নারী আর্থিকভাবে দরিদ্র। তাঁর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার সামর্থ্য নেই। যে কারণে মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা ছাড়া হাসপাতালে আগে এমন একজন রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে। হাসপাতালে সেই ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে। বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা রোগীকে ২৮ মে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। কিন্তু কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এই অস্ত্রোপচার নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এখন প্রসূতি বিভাগই সিদ্ধান্ত নেবে তারা অস্ত্রোপচার করবে নাকি স্থানান্তর করবে।

প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ইয়াসমিন আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো রোগী চিকিৎসকের কাছে এলে তাঁর চিকিৎসা করা চিকিৎসকের দায়িত্ব। আর সেই রোগীকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। প্রসূতি বিভাগ আগামী রোববার ওই রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাকিটা নিশ্চিত করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’

এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন মাসুদ রানা বলেন, এইডসে আক্রান্ত রোগীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ঢাকার চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একদিকে মানবতা অন্যদিকে সংক্রমণ ঝুঁকি, এইচআইভি আক্রান্ত প্রসূতির অস্ত্রোপচার নিয়ে দ্বিধা