Samakal:
2025-06-02@07:47:31 GMT

দ্রুত সমাধান কাম্য

Published: 31st, May 2025 GMT

দ্রুত সমাধান কাম্য

রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টানা তৃতীয় দিনের ন্যায় চিকিৎসাসেবা বন্ধ হইয়া রহিয়াছে বলিয়া শনিবার সমকাল যে সংবাদ দিয়াছে উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রতিবেদন মতে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সহিত চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সংঘর্ষের পরিণামে গত বুধবার হইতে হাসপাতালটিতে এই অচলাবস্থা চলিতেছে। শুক্রবার ছুটির দিনেও জরুরি বিভাগসহ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা স্বাভাবিক চিকিৎসা পায় নাই। কবে নাগাদ এই সংকটের অবসান হইবে, তাহাও কেহ বলিতে পারিতেছে না। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নিছক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নহে। চক্ষু চিকিৎসার জন্য দেশের অন্যতম বিশেষায়িত একটি প্রতিষ্ঠানও বটে। অর্থাৎ এখানে শুধু সাধারণ চক্ষুরোগীরাই আসেন না, অন্যান্য চক্ষু হাসপাতাল হইতে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে ভিড় করেন। একই কারণে জুলাই আন্দোলনে গুলি ও অন্যান্য কারণে যাহারা চোখে আঘাত পাইয়াছেন তাহারাও এই হাসপাতাল হইতেই চিকিৎসা গ্রহণ করিয়াছেন। তাহাদের অনেকে অদ্যাবধি সেখানে ভর্তি রহিয়াছেন। চলমান অচলাবস্থার কারণে এই রোগীদের কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাইতে হইতেছে তাহা আমরা বুঝি। একই কারণে দেশের বহু সাধারণ মানুষও যে ক্ষতির মুখে পড়িয়াছেন তাহাও না বলিলেই নহে। ইহাও বলা প্রয়োজন যে, সরকারি হাসপাতাল হইবার কারণে সাধারণত চিকিৎসা ব্যয় এই হাসপাতালে বিশেষ বেসরকারি হাসপাতাল অপেক্ষা অনেক কম। ফলে এখানকার রোগীদের বাধ্য হইয়া বেসরকারি হাসপাতালে যাইতে হইলে তাহাদের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টিও কম হইবে না।

প্রতিবেদন অনুসারে, গত ২৫ মে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চার রোগী বিষপান করিলে প্রথম উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে। উহার ধারাবাহিকতায় বুধবার হাসপাতালে ভর্তি থাকা জুলাই আন্দোলনকারী, কর্মচারী এবং রোগীর স্বজনদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। ইহার মধ্যে একপক্ষ অপরপক্ষকে এমন ভাষায় আক্রমণ করিতেছে, যাহার কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল রূপ ধারণ করিতে পারে বলিয়া অনেকের আশঙ্কা। অথচ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘটনার শুরুতেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করিলে হয়তো বিষয়টি এতদূর গড়াইত না। প্রতিবেদন হইতে স্পষ্ট বোঝা যায়, জুলাই আন্দোলনকারীদের মধ্যে চিকিৎসাসহ যথাযথ পুনর্বাসন বিষয়ে প্রচুর ক্ষোভ-বিক্ষোভ কাজ করিতেছে, যাহার একটা প্রকাশ হিসাবে বুধবারের সংঘর্ষটি ঘটিয়া থাকিতে পারে। ইহা অনস্বীকার্য যে, আহত আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনেক জটিল রোগী রহিয়াছে, যাহাদের যথাযথ চিকিৎসা হয়তো আলোচ্য হাসপাতালে সম্ভবপর নহে। তাই এই সকল রোগীকে বিদেশের উন্নত হাসপাতালে পাঠাইবার দাবি দীর্ঘদিন যাবৎ শুনিয়া আসিতেছি। কিন্তু সমস্যা হইল, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই বিষয়ে অদ্যাবধি আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রহিয়াছেন। প্রত্যাশিত পুনর্বাসনের অভাবে কোনো কোনো জুলাই আন্দোলনকারী যে সুস্থ হইবার পরও হাসপাতালে অবস্থা করিতেছেন এবং এই কারণে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটিতেছে, উহাও সত্য। উহার দায়ও সংশ্লিষ্ট সরকারি নীতিনির্ধারকদেরই উপর বর্তায়। আবার জুলাই আন্দোলনকারীদের পক্ষ হইতে হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের অসংবেদনশীল আচরণের যে অভিযোগ উঠিয়াছে উহারও বাস্তবতা রহিয়াছে বলিয়া আমরা মনে করি। কারণ বিভিন্ন সময়ে দেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেও আমরা এহেন অভিযোগ উঠিতে দেখিয়াছি। এমনকি কখনও কখনও সেই সকল হাসপাতালে চিকিৎসক-কর্মচারীদের সহিত রোগী ও রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষও ঘটিয়াছে। অতএব, আলোচ্য সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের উক্ত অভিযোগটিও বিবেচনায় লইতে হইবে।

আমরা মনে করি, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে দ্রুত প্রাণ ফিরিয়া পাইতে হইবে। পরিস্থিতি আরও জটিল হইবার পূর্বেই এই লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ লইতে হইবে। তবে  সরকারকে এই বিষয়টিও ভাবিয়া দেখা প্রয়োজন, কেন 
জুলাই আন্দোলনে আহতদের প্রদত্ত তাহাদের প্রতিশ্রুতি নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়িত হইল না, যাহার খেসারত দিতে হইতেছে উক্ত ঘটনার সহিত ন্যূনতম সম্পর্কহীন সাধারণ রোগীদের।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক স ঘর ষ রহ য় ছ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিরল বালুচাটার সন্ধানে

১৪ বছর আগের কথা। বিরল ও দুর্লভ পাখির প্রজনন প্রতিবেশ নিয়ে গবেষণার কাজে পঞ্চগড় এসেছি। বোদা, আটোয়ারী, দেবীগঞ্জ ও পঞ্চগড় সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গাঙটিটি, হলুদ লতিকা হট্টিটিসহ বেশ কিছু প্রজাতির পাখি দেখলাম। সবশেষে ভারত সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়ার কাজীপাড়া এসে ওদের সঙ্গে যোগ হলো অতি বিরল শেখ ফরিদ বা কালো তিতির। কিন্তু এসব পাখির মা ক্ষণে ক্ষণেই খুঁজছিলাম চড়ুই আকারের অতি বিরল আরেকটি পাখিকে। তেঁতুলিয়া শহরের রাস্তার পাশে এই পাখিকে ২০১০ সালে বন্য প্রাণী আলোকচিত্রী প্রয়াত মুনির আহমেদ খান ও তাঁর স্ত্রী পক্ষী আলোকচিত্রী তানিয়া খান দেখেছিলেন। এর পর থেকেই পাখিটিকে দেখার ইচ্ছা। কিন্তু মাত্র এক বছর পর জায়গামতো বারবার গিয়েও পাখিটির দেখা পেলাম না।

এরপর ২০১৭ সাল পর্যন্ত আরও তিনবার তেঁতুলিয়া গেলাম। কিন্তু ফলাফল একই। অবশ্য ২০২০ সালে একজন আলোকচিত্রী রাজশাহীর পদ্মার চরে পাখিটির দেখা পান। এরপর ২০২৩ সালে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বেড়ামন গাঁও চরে বার কয়েক দেখা গেল। অনেকেই ছবি তুললেন। খবর পেয়ে ১১ নভেম্বর পাখিটির সন্ধানে পাখিপ্রেমী আমরা ১১ জন শীত শীত ভোরে ঢাকা থেকে রওনা হলাম। মাওয়ার পুরোনো ফেরিঘাটে নেমে জাকির মাঝির ইঞ্জিন নৌকায় চরের দিকে রওনা হলাম। পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে আমাদের নৌকা যাওয়ার সময় সেতুর সঙ্গে একটা ফটোসেশন হয়ে গেল।

ঠিক ৫০ মিনিট প্রমত্ত পদ্মার বুকে চলার পর নৌকা চরে ভিড়ল। চরের মাটিতে পা রাখতেই স্ত্রী পাখিটির দেখা পেয়ে গেলাম। যে পাখিকে দীর্ঘ সাত বছর ধরে খুঁজছি, আজ তাকে অতি সহজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লাম। স্ত্রী পাখিটির প্রথম ছবি তোলার ১১ মিনিট পর পুরুষটির দেখা পেলাম। কিন্তু ওর একটি ভালো ছবি তোলার জন্য প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হলো। পরে পাখিটিকে শেরপুরেও দেখা গেল।

এতক্ষণ বিরল যে পাখিটির গল্প বললাম, সেটি এ দেশের আবাসিক পাখি বালুচাটা বা ধুলচাটা। ইংরেজি নাম অ্যাশি-ক্রাউন্ড স্প্যারো-লার্ক বা ফিঞ্চ-লার্ক। অ্যালাইডিডি গোত্রের এই ভরত পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Eremopterix grisea। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাস করে।

বালুচাটা চড়ুই আকারের কীটপতঙ্গভুক পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ১২ থেকে ১৪ সেন্টিমিটার। ওজন ১৪ থেকে ২০ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষের চেহারায় ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষের মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পেছনটা ধূসর-বাদামি। চোখ বরাবর চওড়া কালো পট্টি। পিঠ বালু-বাদামি। ডানার পালক কালচে ছোপছাপে ভরা। গাল থেকে কান-ঢাকনি ও বুকের দুই পাশ ময়লা সাদা। গলার অর্ধেকটায় কালো রঙের ফিতে। বুক-পেট ও দেহের নিচ চকলেট কালো। অন্যদিকে স্ত্রী একবারেই সাদামাটা। পিঠ ও দেহতলের ওপরে কিছু সূক্ষ্ম লম্বালম্বি দাগসহ দেহ পুরোপুরি বালু-বাদামি। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে চঞ্চু খাটো ও ত্রিকোণাকার, রং হালকা, শিং-ধূসর। চোখ লালচে/হলদে-বাদামি। পা, পায়ের পাতা ও নখ মেটে-বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে অনেকটা মায়ের মতো।

এ পর্যন্ত এদেরকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং ও শেরপুরের চরাঞ্চলে দেখা গেছে। খোলামেলা শুষ্ক পাথুরে এলাকা, কণ্টকময় ঝোপঝাড় ও ঘাসে ঢাকা পরিত্যক্ত খেত, বালুময় নদীতট বা শুকনা জোয়ার–ভাটার কাদাচরে এরা বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট দলে বালুমাটিতে ঘোরাঘুরি বা ধূলিস্নান করতে দেখা যায়। তবে শীতে বড় দলে থাকতে পারে। মাটিতে হেঁটে হেঁটে শুকনা ধূলিময় ভূমি ঠুকরে বিভিন্ন ধরনের বিচি, শক্ত খোলসযুক্ত পোকামাকড়, পিঁপড়া ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ খায়। পুরুষ পাখি বৃত্তাকারে উড়ে উড়ে বাঁশির মতো ‘টুইল-ডিডল-ডিডল...’ স্বরে গান গায়।

বছরের যেকোনো সময় প্রজনন করতে পারে। মাটির প্রাকৃতিক খোদলে ঘাস, পালক ও চুল বিছিয়ে বাসা বানায়। বাসার চারদিকে নুড়ি পাথর দিয়ে বেষ্টনী দেয়। অল্প দূরত্বের মধ্যে একাধিক বাসা পাওয়া যায়। ডিম পাড়ে ২ থেকে ৩টি; রং ধূসর-সাদা বা ফিকে হলুদ, তাতে থাকে বেগুনি ও বাদামি ফুটকি ও ছোপ। ডিম ফোটে ১১ থেকে ১৪ দিনে। ১০ থেকে ১২ দিনে ছানারা উড়তে শেখে। মা-বাবা মিলেমিশে ডিমে তা দেওয়া এবং ছানাদের লালন পালন করে। আয়ুষ্কাল প্রায় চার বছর।

আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসাবিশেষজ্ঞ

সম্পর্কিত নিবন্ধ