ঢাকাইয়া আকবরকে খুনের মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের ভাই-ভাগনের রিমান্ড মঞ্জুর
Published: 1st, June 2025 GMT
চট্টগ্রামে ‘সন্ত্রাসী’ আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে খুনের মামলায় দুই আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাঁরা হলেন বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের ভাই ওসমান আলী ও ভাগনে মো. আলভিন। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান জিনিয়া শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
গত ২৬ মে রাতে নগরের পাঁচলাইশ এলাকা থেকে পৃথক অভিযানে ওই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র্যাব। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পতেঙ্গা থানার খুনের মামলায় দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
গত ২৩ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডারত অবস্থায় ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসারত অবস্থায় সেখানে ২৫ মে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আকবরের স্ত্রী রূপালী বেগম বাদী হয়ে ১১ জনের বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। গ্রেপ্তার ওসমান আলী ও আলভীন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
২০০০ সালে নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় আট ছাত্রলীগ নেতাকে খুনের মামলায় সাজা পেলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান সাজ্জাদ আলী। আট খুনের পর জামিনে বেরিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান তিনি। কিন্তু থেমে থাকেনি তাঁর সন্ত্রাসী কার্যক্রম। বিদেশে বসে নিজের বাহিনীদের মাধ্যমে নগরের বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে আসছেন।
সাজ্জাদ আলীর প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত বায়েজিদ এলাকায় ‘সন্ত্রাসী’ সারোয়ার হোসেন ও আকবর আলী। একসময় তাঁরা সাজ্জাদের হয়ে কাজ করলেও বছর দুয়েক আগে তাঁরা দল থেকে বেরিয়ে যান। সাজ্জাদ আলীর বাহিনীর এখন নেতৃত্বে রয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। ১৫ মার্চ সাজ্জাদ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। তাঁকে গ্রেপ্তারের জেরে গত ২৯ মার্চ নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোডে একটি প্রাইভেট কারে গুলি করে দুজনকে খুনের ঘটনা ঘটে। প্রাইভেট কারটিতে ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন থাকলেও তিনি বেঁচে যান। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার এক আসামি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, এলাকায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ছোট সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়াসহ পাঁচ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা সরোয়ারকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই গুলি করে ঢাকাইয়া আকবরকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স জ জ দ আল নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
পদ স্থগিত নেতার পক্ষে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিবৃতি, দ্রুত মুক্তি দাবি
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর লুটের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে উপজেলা বিএনপি। গতকাল সোমবার উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। কেন্দ্র থেকে পদ স্থগিত হওয়া একজন নেতার পক্ষে এমন বিবৃতি দেওয়ায় দলের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
গত শনিবার রাতে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। গত ১১ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিএনপি চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ দলীয় নীতি ও আদর্শবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করে।
গতকাল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সাহাব উদ্দিন বিগত স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রসৈনিক ও মিথ্যা মামলায় নির্যাতিত নেতা। তাঁকে সাদাপাথর লুটের মামলায় মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোয় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করা হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আকবরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সাহাব উদ্দিনের চাচাতো ভাই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি। আমরা তাঁকে ভালোভাবে চিনি। তিনি কোনো লুটপাটে ছিলেন না। বরং লুটপাটের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে আমরা মিছিল, মানববন্ধন করেছি। এ তথ্য আমরা মৌখিকভাবে জেলা বিএনপিকেও জানিয়েছি।’
উপজেলা বিএনপির বিবৃতিতে সাহাব উদ্দিনের বিষয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগে সদ্য পদ স্থগিত হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে জেলা বিএনপির অবস্থান ও কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এমন অবস্থায় উপজেলা বিএনপি কীভাবে ওই নেতার পক্ষে বিবৃতি দেয়, সেটা অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ব্যক্তির অপকর্মের দায় কেন সংগঠন নেবে? বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।
সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ মার্চ প্রথম আলোয় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৮ মার্চ সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০ একর জমি উদ্ধার করে এবং ১০০টি পাথর ভাঙার যন্ত্র উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়।
এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি জমি দখলের ঘটনায় ১৯ মার্চ সাহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা বিএনপি। পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গত ১০ এপ্রিল ভোলাগঞ্জে পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্বজনেরা জমি দখল ও লুটপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা সভাপতির নেতৃত্বে এমন অপরাধ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে ‘সাদাপাথর লুটপাটে অভিযুক্ত অন্যতম মূলহোতা’ হিসেবে উল্লেখ করে। সাদাপাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়।