বিদেশি ভাষা শেখার মাধ্যমে বিদেশে কর্মসংস্থান ও রেমিটেন্স উপার্জনে একুশের অনবদ্য ভূমিকা
Published: 4th, June 2025 GMT
বিদেশে সম্মানজনক কর্মসংস্থানের স্বপ্ন প্রতিনিয়ত লালন করেন লাখো বাংলাদেশি। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এক যুগান্তকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘একুশ’ আন্তর্জাতিক ভাষা ও বিদেশি চাকরি কেন্দ্র। ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি আজ বাংলাদেশের বৃহত্তম বেসরকারি বহুভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং একটি জাতীয় আশার প্রতীক। এই স্বপ্নের বুনন শুরু ১৯৮৪ সালে, নূরুল ইসলাম রোজেন নামের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও মেধাবী এক ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রের হৃদয়ে। যে স্বপ্নটি উদ্ভব হয়েছিল ভাষাবিদ ড.
ইতোমধ্যে একুশ—১৫টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ভাষায় প্রায় পঞ্চাশ হাজার বেকার লোককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যারা এখন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, ইউএসএ, ইউকে, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে দক্ষভাবে কাজ করছেন এবং সর্বাধিক রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্ব নাগরিক গড়ে তোলা
একুশের মূল মিশন: বাংলাদেশের মানব সম্পদকে ভাষার মাধ্যমে ক্ষমতায়ন। জাপানি, ইতালিয়ান, আরবি, কোরিয়ান, স্প্যানিশ, জার্মান—প্রতিটি কোর্সই বাজারের প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী সাজানো। শুধু শেখানো নয়, শিক্ষার্থীদের বিদেশে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সাংস্কৃতিক সচেতনতা, পেশাগত নৈতিকতা ও কাজের প্রস্তুতিও নিশ্চিত করে একুশ। এছাড়াও, একুশ নৈতিকভাবে কর্মী নিয়োগের পক্ষে সচেতনতা গড়ে তুলছে, এবং প্রতারণাপূর্ণ দালালদের বিকল্প হিসেবে একটি সুরক্ষিত ও স্বচ্ছ পথ প্রদান করছে।
একুশের বহুভাষা শিক্ষার বিষয়ে উৎসাহমূলক পদক্ষেপ ও কার্যক্রম সমূহ-
১। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, টিভি চ্যানেল, দেয়াল লিখন, বিলবোর্ড, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন, গাড়ির বহর, মাঠ সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও বিভিন্ন উৎসাহমূলক স্লোগানের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করেছে। যেমন:-
“কোটি টাকা কামাতে চান? কোরিয়া যান,” “৬০ হাজার টাকা খরচ করে, ১ কোটি টাকা আয় করুন,” “জমি জামা বিক্রি করে বিদেশে যাওয়া দিন শেষ।” “বিদেশি ভাষা না শিখে বিদেশে যাবেন না, নইলে বিদেশেও না খেয়ে থাকতে হবে,” “ভাষা শিখে বিদেশ যান আয় বাড়ান,” “আমরাই প্রায় সবগুলো বিদেশি ভাষাকে বাংলাদেশে জনপ্রিয় করেছি।”
২। বিভিন্ন দেশের প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও এক্সপার্টদের দ্বারা শিক্ষা প্রদান ও নিয়মিত মনিটরিং, কাউন্সিলিং ও উৎসাহ প্রদান করছেন।
৩। একুশ ফ্রিল্যান্স ভাষা সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে অ্যাপোলো হসপিটাল (বর্তমানে এভার কেয়ার) আন্তর্জাতিক এনজিও অক্সফাম, ইতালিয়ান বায়িং হাউস টিটানুস এবং হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি শিল্প কারখানা, শিল্পগ্রুপ, বায়িং হাউস, গার্মেন্টস, ম্যানপাওয়ার এজেন্সি, হাসপাতাল, এনজিও, ট্যুর অপারেটর, সরকারি বেসরকারি এজেন্সি, জাতীয় সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এবং তাদেরকে সেবা প্রদান করছে।
রেমিট্যান্স যা দেশ গড়ে
একুশের অর্থনৈতিক প্রভাব অভাবনীয়। এর শিক্ষার্থীরা দেশে প্রেরণ করেছেন ১১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার—যা দিয়ে পাঁচটি পদ্মা সেতুর সমমূল্যের অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব। যারা একসময় বেকার ছিলেন, তারা আজ উদ্যোক্তা, বহু মানুষের কর্মসংস্থানকারী, পাকাবাড়ি-গাড়ি ও সম্পদের মালিক—সবই ভাষা শেখার সেই প্রথম ধাপের ভিত্তিতে।
সকলের জন্য খোলা প্ল্যাটফর্ম—ডিগ্রি নয়, ইচ্ছাই মূল শক্তি
যেখানে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব অনেকের জন্য বাধা, একুশ সেখানে উল্টো চিত্র তুলে ধরে। এসএসসি/এইচএসসি নেই? ডিগ্রি নেই? সমস্যা নেই। একুশ সবার জন্য উন্মুক্ত, বিশেষ করে যেখানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ডিগ্রী ব্যতিত কাউকে ভাষা শিক্ষার সুযোগ প্রদান করছে না। সেখানে একুশ স্বল্প শিক্ষাদারি ব্যক্তিদের ভাষা শিক্ষার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, স্পেনের মতো ইউরোপীয় দেশগুলোতে গমনরত প্রবাসীদের সিংহভাগ এই শিক্ষা শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত এবং দুর্ভাগ্যবশত তারা ভাষা শিক্ষার বিষয়ে এসব উচ্চ শিক্ষালয়ে সুযোগ পায় না। অথচ একুশ উক্ত বিশাল সংখ্যক রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অনলাইনে বা অফলাইনে ভাষা শিক্ষায় ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে।
একুশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: ডিজিটালাইজেশন, জেলা-ভিত্তিক এবং বিকেন্দ্রীকরণ
তৃতীয় দশকে পদার্পণ করে একুশ এবার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বৃহৎ আকারে চালু করতে যাচ্ছে—যার মাধ্যমে অনলাইন প্রশিক্ষণ এবং ভার্চুয়াল চাকরি সংস্থান পরিষেবা চালু হবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন হাব স্থাপন এবং জনসচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে অনৈতিক রিক্রুটমেন্টের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকবে।
একটি উদ্যোগ যা সব ভাষায় উন্নয়নের গল্প বলে
একুশের প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও কর্মীবৃন্দ, হাজার হাজার সাফল্যের গল্প, ও বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক অর্জন—‘একুশ’ আন্তর্জাতিক ভাষা ও বিদেশি চাকরি কেন্দ্র শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি জাতীয় আন্দোলন। এটি প্রমাণ করে যে, স্বপ্ন, নিষ্ঠা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে, একটি শিশুর স্বপ্নও জাতির ভবিষ্যত বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে। যখন সারা বিশ্বে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে, তখন একুশ নিশ্চিত করছে, বাংলাদেশের কোনো সম্ভাবনাময় তরুণ পিছিয়ে না পড়ে—ভাষাকে করছে জীবিকার সোপান, স্বপ্নকে দিচ্ছে সাফল্যের ঠিকানা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব শ বব দ য র জন য এক শ র
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?