রংপুরের জিপিআই পণ্য ‘হাঁড়িভাঙা’ আম। দেশজুড়ে এর সুখ্যাতি। প্রতি বছর জুনের মাঝামাঝি বাজারে আসে হাঁড়িভাঙা। তখনই সম্পূর্ণ পরিপক্ব হয়। এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে অপরিপক্ব হাঁড়িভাঙা। কৃত্রিমভাবে এসব আম পাকিয়ে বাজারজাত করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন ক্রেতারা। 

হাঁড়িভাঙা আমের উৎপাদন এলাকা মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ও ময়েনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, হাঁড়িভাঙা আম বাজারজাত করা হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের ক্যারেটে ভরা হচ্ছে। পরে সেগুলো ট্রাকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। 

গত মঙ্গলবার রাতে ময়েনপুর ইউনিয়নের কদমতলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ হাঁড়িভাঙা আম স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পাশেই সড়কে দাঁড়ানো একটি ট্রাক। ক্যারেটে ভরা হচ্ছে আম। সেগুলো ট্রাকে লোড করা হচ্ছে। দেখা গেল একটি প্লাস্টিকের বোতলে পানি সদৃশ্য কিছু আমের ওপর স্প্রে করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানালেন, হাঁড়িভাঙা আমে এখনও পরিপক্বতা আসেনি। তাই ফরমালিন স্প্রে করা হচ্ছে।

কদমতলা বাজারে যেখানে আম ট্রাকে লোড করা হচ্ছে, তার আশপাশে অনেক মানুষের জটলা। স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল মিয়া বলেন, এখনও আম পরিপক্ব হয়নি। তার পরও অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি লাভের আশায় বাগান থেকে আম পেড়ে বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছেন।

শফিউল ইসলাম নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, আম পাকাতে বিষ (ফরমালিন) মেশানো হচ্ছে। এটা একটা ভয়ংকর ব্যাপার।

পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের ভাষ্য, বাগানে আম পুরাট (পরিপক্ব) হয়েছে।  বাগান মালিকরা তাঁকে ডেকে আম বিক্রির কথা বলেন। তাই তাদের কাছ থেকে তিনি আম কিনছেন।  

শুধু কদমতলা বাজারই নয়, হাঁড়িভাঙা আমের প্রধান উৎপাদন এলাকা খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ বাজার, পাইকাড়ের হাটসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। সর্বত্রই আম বিক্রি করার ধুম চলছে। 

স্থানীয় বাগান মালিক আবু তাহের জানান, কিছু কিছু গাছে আম পাকা শুরু হয়েছে। তবে পাইকারিভাবে (গণহারে) আম পাড়া ঠিক হচ্ছে না। তিনি এখনও আম পাড়া শুরু করেননি। অনেকে টাকার লোভে অপরিপক্ব আম পেড়ে বিক্রি করছে, এটা ঠিক নয়। এতে হাঁড়িভাঙার সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। 

এ ব্যাপারে মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন বলেন, প্রশাসন থেকে এখনও হাঁড়িভাঙা আম গাছ থেকে সংগ্রহের তারিখ নির্ধারণ হয়নি। তবে প্রতি বছর জুনের ১৫ থেকে ২০ তারিখে আম পাড়া হয়। এর আগে আম পাড়া ও বিক্রি করা অন্যায়। কোথাও আগে হাঁড়িভাঙা আম পাড়া হলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুলতামিস বিল্লাহ সমকালকে বলেন, অপরিপক্ব আম পাড়া ও ফরমালিন মেশানোর ব্যাপারে কোনো অভিযোগ কেউ দেয়নি। কোথাও এটা করে থাকলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ভ ন ন এল ক য় ব যবস য় আম প ড়

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত