‘আইনত আমি মেয়র’, জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন করে বললেন ইশরাক
Published: 6th, June 2025 GMT
নিজেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র দাবি করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, ‘স্পষ্টত বলে দিয়েছি, আইনত আমি এখনো মেয়র। আগামী মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত। তারা শপথ গ্রহণ করাল নাকি করাল না, এটি তাদের সমস্যা।’
আজ শুক্রবার সকালে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাতের জন্য জাতীয় ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন ।
এ সময় ইশরাক হোসেন বলেন, ‘নগর ভবনে কোনো প্রশাসক বসবে না, কোনো উপদেষ্টা বসবে না। সেখানে যদি কোনো ধরনের প্রশাসনিক সমস্যা হয়, তখন আমরা ৭৫ ওয়ার্ড থেকে যারা সাবেক কমিশনার ও কাউন্সিলর ছিলাম, ভোটার, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপালদের নিয়ে প্রয়োজনে “বিপ্লবী ঢাকা কাউন্সিল” টাইপের (ধরন) কিছু করে সেখানে সাময়িকভাবে নিয়োগ দিয়ে নগর ভবন চালাব। কিন্তু এখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। হার মানার কোনো সুযোগ নেই।’
নির্বাচন কমিশনেও শপথ পড়ানোর ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে মনে করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘শপথরুম একটি নির্বাচন কমিশনেও থাকতে পারত। সেটি (শপথ) নির্বাচন কমিশনেই পড়া যেত। কিন্তু আইনে সেই এখতিয়ার তাদের দেওয়া নেই। এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা দরকার রয়েছে ভবিষ্যতে।’
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শনের বিষয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরে ঘোষিত মেয়র হিসেবে এখানে এসেছি। এটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আগামীকালও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে মাঠে থাকব।
অনেকেই তাঁর বিষয়ে ভুল ধারণা করছেন উল্লেখ করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আজ অনেকটা ভুল বোঝা হচ্ছে আমাকে। কিন্তু রাজনীতি এমন একটি জিনিস, এখানে যখন মাঠের বাস্তবতা চলে আসে এবং আপনি যখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করবেন, তখন আর আপনার রাজনৈতিকভাবে কর্মসূচি পালন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। যার কারণে কিছু জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমিও (মেয়রের চেয়ারে) বসতে পারতাম, যদি তাদের (উপদেষ্টা) সঙ্গে আলোচনায় বসে কোনো একটা কম্প্রোমাইজে (আপসে) যেতাম। যেটির সম্ভাবনাও আমার কাছে নিয়ে আসা হয়েছিল। স্পষ্ট বলে দিয়েছি, এ ধরনের শপথ আমার বাসার সামনে এসে নিচে দাঁড়িয়ে থাকলেও আমি পড়ব না। আমি দেশ, জনগণ ও দলের সঙ্গে বেইমানি করব না। যেটা নিয়ম, সেটি আইনিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি দিতে তাদের অসুবিধা কোথায়? এমনও তো হতে পারত, আমি ওখানে গিয়ে এক ঘণ্টা পর নিজেই ছেড়ে দিতাম।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে ভিলেন বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে দাবি করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘এখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার জাতীয় ভিলেনে পরিণত হয়ে গিয়েছি আমি একপ্রকার। কিন্তু আমার বিশ্বাস, একদিন সাধারণ জনগণ আমার পদক্ষেপ বা ভূমিকাটা বুঝতে পারবে যে কেন আমি আজ এই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ তাঁদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে দাবি করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেন, এই পরিষদ বহাল থাকা অবস্থায় কোনোভাবেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। উপদেষ্টাদের যদি রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে পদত্যাগ করে রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেটে আগের আমলের ছাপ পরিলক্ষিত হয়েছে: গণ অধিকার পরিষদ
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ সংবিধান–পরিপন্থী, বৈষম্যমূলক। এ বাজেটে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এতে আগের আমলের ছাপ পরিলক্ষিত হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানাতে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন গণ অধিকার পরিষদের নেতারা।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, এনবিআর রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য ঠিক করেছে, তা পূরণে নতুন কোনো প্রস্তাব নেই। গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন নিয়ে টানাপোড়েন, দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্বের কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা আরও বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
গণ অধিকার পরিষদ জানায়, গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার কর্মসংস্থান নিয়ে বিশদ পরিকল্পনা প্রকাশ করবে বলে সবার ধারণা ছিল। কারণ, চাকরিতে কোটা সংস্কার বা বৈষম্য দূরীকরণের আন্দোলন থেকেই গণ–অভ্যুত্থান রচিত হয়। কিন্তু বেকারদের জন্য আলাদা কোনো ঘোষণা নেই।
দলটি আরও জানিয়েছে, মানুষের আয় ও ব্যয়ের তারতম্য কমানো বা বেকারত্ব-দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে বাজেটে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সন্তুষ্ট করতে তাঁদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এতে ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য ও মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সমাজ ও রাষ্ট্রে সাম্য প্রতিষ্ঠায় সরকারের চিন্তা এই বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।
শিক্ষা ও চিকিৎসা খাত নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চিন্তা আওয়ামী সরকারের চিন্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে দলটি। তারা বলেছে, বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ সংবিধান পরিপন্থী ও বৈষম্যমূলক। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার এমন নীতি–বিবর্জিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ভাতা এখনো ‘অপর্যাপ্ত’ উল্লেখ করে গণ অধিকার পরিষদ বলেছে, বাজেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণোদনা নেই। বিশেষ করে শেয়ারবাজারে একের পর এক লোকসান অনেককে পথে বসিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা দরকার ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, আব্দুজ জাহের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিলু খান, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন প্রমুখ।