ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমেনি, চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়: রিজভী
Published: 6th, June 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিমুক্ত থেকে শান্তিতে ঈদযাত্রা করার যে আশা করেছিল, তেমনটি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, এবারের ঈদেও রাজধানী ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী গাড়িগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে ৫ থেকে ১০ ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে। মহাসড়কেই অনেক যানবাহন দীর্ঘ সময় ধরে আটকে আছে। এর ওপর চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ঘরমুখী মানুষের কাছ থেকে। এখনো চারদিকে ফ্যাসিস্ট আমলের দখলদার আর চাঁদাবাজদের বৈচিত্র্যময় বিন্যাস দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
আজ শুক্রবার বেলা তিনটায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতিশীল হয়েছে দাবি করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সারা দেশে ডাকাতি, ছিনতাই, দস্যুতা ও অপহরণের মতো ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ঢাকা মহানগরীও যেন ছিনতাইয়ের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে অপরাধ দমনে পুলিশি তৎপরতা অত্যন্ত শিথিল। পুলিশ এখনো সক্রিয় হয়নি।
সাধারণ মানুষকে নিরাপদ ও শঙ্কামুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ নেই বলে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘মব ভায়োলেন্সের’ মাত্রা কোনোভাবেই কমছে না। এই ঈদেও মানুষের মন থেকে চুরি-ডাকাতির আতঙ্ক দূর হচ্ছে না। মানুষকে নিরাপদ ও শঙ্কামুক্ত করতে সরকারের ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ নেই। এ জন্য বিএনপি দ্রুত জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।
বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ভারত পুশ ইনসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের এক নতুন বিবর্তিত রূপ দেখা যাচ্ছে। অসংখ্য ভারতীয় নাগরিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হচ্ছে। ভারত দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবাসন চুক্তি না মেনে ভারতীয় নাগরিকদের গায়ের জোরে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের নীতির পরিপন্থী কাজ।
সুদূরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবেই এই পুশ ইন করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধা নেই। এক সুদূরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবেই ভারতের নাগরিকদের বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের সরকার এ বিষয়ে কেন জোরালো ভূমিকা নিতে পারছে না। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
রিজভী আরও বলেন, ঈদের এক দিন আগেও অনেক কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়নি। সরকারের দায়িত্ব ছিল এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অথচ এ বিষয়ে সরকার নির্বিকার ও উদাসীন। তিনি বিএনপির পক্ষ থেকে বঞ্চিত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস মিটিয়ে দেওয়ার জোর আহ্বান জানান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন: মিন্টু
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, “নির্বাচনে ফেনীর ইতিহাস সবাই জানে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ইনশাআল্লাহ এখানে বিএনপি জয়লাভ করবে। আমাদের দলের নেত্রীও (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করবেন। তিনি এখন সুস্থ আছেন। নির্বাচন নিয়ে ফেনীতে কোনো চিন্তা নেই।”
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ফেনী শহরের গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “লন্ডনে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। আমরা সেটিতে আস্থা রাখতে চাই যে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। তবে, দেশের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় তার আগেও নির্বাচন হয়ে যেতে পারে। হয়তো জানুয়ারিতেও হয়ে যেতে পারে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টে কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে একটি মামলা চলমান আছে। যদি কেয়ারটেকার সরকার পুনঃপ্রবর্তন হয়, তাহলে এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেয়ারটেকার হবে না। কেয়ারটেকার সরকারে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলা আছে।”
আরো পড়ুন:
প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে আমরা কাজ করছি: প্রধান উপদেষ্টা
সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকলে ভালো কাজ করবে না, উল্লেখ করে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “বিগত ১৯ বছর আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি। কেউ যদি বলে, আমরা হঠাৎ করে নির্বাচন চাচ্ছি, বিষয়টি সঠিক নয়। বরং, ২০০৬ সাল থেকে আমরা নির্বাচন চেয়ে আসছি। একটি দেশের সরকার যদি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকে, তাহলে তারা কখনো ভালো কাজ করবে না। তাই, আমরা চাচ্ছি নির্বাচন হোক।”
বিএনপির এ সিনিয়র নেতা আরো বলেন, “আমরা বলে আসছি, ২০০৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছে, সেটি অবাধ ও সুষ্ঠ হয়নি। ২০০৬ সাল থেকে দেশে কোনো নির্বাচনকালীন সরকার নেই। দুই যুগ ধরে যদি নির্বাচিত সরকার না থাকে, তাহলে মানুষের অর্থনৈতিক বা জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে না। নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত থাকে একটি সরকার, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে।”
ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/রফিক