শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি থাকা উচিত কি উচিত নয়, এ নিয়ে তর্ক কম হয়নি। এই তর্কের কোনো মীমাংসা হয়তো সম্ভবও নয়।
এর পক্ষে যেমন যুক্তি দেওয়া যায়, এর বিপক্ষেও তেমনি যুক্তি দাঁড় করানো যায়। তবে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে যত মতই থাকুক, এর সহিংস রূপকে নিশ্চয় কেউ সমর্থন করতে পারেন না।
সম্প্রতি আদালতের একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এগুলো দেখে শঙ্কা জাগে, ছাত্ররাজনীতি আগের পথেই হাঁটছে কি না।
যেকোনো ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাধিক পক্ষ তৈরি হতে পারে। এক পক্ষ এর সমর্থনে এবং অন্য পক্ষ এর প্রতিবাদে কর্মসূচিও দিতে পারে। কিন্তু পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি যেন কোনোভাবেই সহিংস হয়ে না ওঠে, সেদিকে সব পক্ষেরই খেয়াল রাখা দরকার।
আরও পড়ুনছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না২৮ আগস্ট ২০২৪জাতীয় রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আমরা তখনই আশা করতে পারব, যখন ছাত্ররাজনীতির গুণগত পরিবর্তন দেখা যাবে। নিজের মত প্রকাশ করা যেমন অধিকার, অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করা তেমনি দায়িত্ব।
বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের বক্তব্য ও কর্মসূচি দেখে প্রায়ই হতাশ হতে হয়। সেগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ অবলম্বন করে দেওয়া।
এই পক্ষাবলম্বন অনেক ক্ষেত্রেই সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীর অনুভূতি বা চাওয়ার সঙ্গে মেলে না। রাজনৈতিক দলের প্রতি ছাত্রনেতাদের ‘অন্ধ সমর্থনে’র বিশেষ কারণও থাকে। তাঁরা রাজনীতি করেন নিজেদের দলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য কিংবা ক্ষমতায় বসানোর জন্য। এর বিপরীতে তাঁরা অর্থ ও ক্ষমতার সুবিধা চান।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে প্রতিপক্ষকে রাজনীতি করার ন্যূনতম সুযোগটুকুও তারা দিতে চায় না। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই এমনটি দেখা যাচ্ছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের অনুসারী ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে আধিপত্য ও দখলদারি কায়েম করে।
আরও পড়ুনছাত্ররাজনীতি বলে এখন কি কিছু আছে?০৯ এপ্রিল ২০২৪একতরফা সমর্থনের বিনিময়ে নিজেদের অপকর্মের বৈধতা আদায় করে। এই দলীয় ‘লেজুড়বৃত্তি’ ছাত্ররাজনীতির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। ছাত্ররাজনীতির প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়েছে।
ছাত্রনেতারা শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলবেন, যৌক্তিক দাবিতে সোচ্চার হবেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষাসহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবেন—এমনটাই আশা করি আমরা। কিন্তু বরাবরই দেখা যায় যে ক্যাম্পাসগুলোয় রাজনীতির নামে অপরাজনীতি চলে।
টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, এমনকি ধর্ষণের মতো অপরাধের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী ছাত্রনেতারা জড়িত থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাঁদের প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়।
সাধারণ শিক্ষার্থীরাও নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হন। তাঁদের একরকম জোর করে মিটিং-মিছিলে নেওয়া হয়। প্রতিপক্ষের ওপর হামলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও তাঁদের ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। আবাসিক হলগুলোয় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
হল প্রশাসন অনেক কিছু বুঝেও প্রায় ক্ষেত্রেই নির্বিকার থাকে। কারণ, ক্ষমতালিপ্সু শিক্ষকরাজনীতি অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও রাজনৈতিক দলের ‘অন্ধ সমর্থক’ বানিয়ে তোলে। ফলে তাঁদের পক্ষে ছাত্রনেোদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।
বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বহু মতের ছাত্রসংগঠন থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো পক্ষেরই এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া উচিত নয় যা আক্রমণাত্মক এবং নিজেদের জন্য আত্মঘাতী। ছাত্রসংগঠনগুলো শিক্ষা ও তৎসংশ্লিষ্ট অধিকারের কথা বলবে, জাতীয় রাজনীতি ও ইস্যুতেও কথা বলতে পারে, কিন্তু কেবল যেন রাজনৈতিক দলের ধ্বজাধারী না হয়।অথচ এসব থেকে মুক্তির উপায় খুব জটিল ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল ও আন্তরিক হলে সবাইকে নিয়ে একটি সুন্দর শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস তৈরি করা সম্ভব।
বর্তমান বাস্তবতায় সেই সুযোগও তৈরি হয়েছে। এ জন্য সবার আগে দরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটেও ছাত্রসংসদ প্রতিনিধি থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবাধ ভোটে ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচন করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। এ জন্য ছাত্রসংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিয়মিত করা জরুরি। এভাবে ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন আনা সম্ভব।
বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বহু মতের ছাত্রসংগঠন থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো পক্ষেরই এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া উচিত নয় যা আক্রমণাত্মক এবং নিজেদের জন্য আত্মঘাতী।
ছাত্রসংগঠনগুলো শিক্ষা ও তৎসংশ্লিষ্ট অধিকারের কথা বলবে, জাতীয় রাজনীতি ও ইস্যুতেও কথা বলতে পারে, কিন্তু কেবল যেন রাজনৈতিক দলের ধ্বজাধারী না হয়।
তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত র য় র জন ত র জন য ছ ত রন ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
যে পরিকল্পনায় এগোচ্ছে ছাত্রসংগঠনগুলো, প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যাঁরা
গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ছয় বছর আগে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে বেশির ভাগ পদে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) প্যানেল থেকে জয় পেলেও সহসভাপতির (ভিপি) পদে জয়ী হয়েছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নূর।
সেই কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই গত বছর বাংলাদেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন ঘটে আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের একটি অংশ এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁরা বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে আছেন। তাই নতুন এই বাস্তবতায় ডাকসু নির্বাচনে কোন কোন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে এবং কারা সম্ভাব্য প্রার্থী, তা নিয়ে ক্যাম্পাসের রাজনীতিসচেতন শিক্ষার্থীদের কৌতূহল রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৯ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ আগস্ট। আর ভোট গ্রহণ হবে ৯ সেপ্টেম্বর।
থাকছে না বয়সের বাধা
সর্বশেষ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়স ছিল ৩০ বছর। তবে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়সসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হলেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তমতে, এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীরা। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থী হতে হলে শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হতে হবে, যিনি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা এমফিলে অধ্যয়নরত এবং কোনো আবাসিক হলে অবস্থানরত বা সংযুক্ত।
এ ছাড়া সান্ধ্যকালীন কোর্সের পাশাপাশি পেশাদার বা এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট ও ভাষা কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও সংযুক্ত কলেজ বা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
তা ছাড়া ছাত্রত্ব না থাকলে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। আইনি জটিলতা এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে গঠিত নির্বাচন কমিশন।
এবারের ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবি ছিল হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করা। সেই দাবি মেনে ডাকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কেন্দ্রগুলো হলো: এক. কার্জন হল কেন্দ্র (পরীক্ষার হল); ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল, অমর একুশে হল ও ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দেবেন। দুই. শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র; জগন্নাথ হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দেবেন। তিন. ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি); রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল ও কবি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দেবেন। চার. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্র; বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দেবেন। পাঁচ. সিনেট ভবন কেন্দ্র (অ্যালামনাই ফ্লোর, সেমিনার কক্ষ, ডাইনিংরুম); স্যার এ এফ রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দেবেন। ছয়. উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র; সূর্যসেন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কবি জসীমউদ্দীন হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দেবেন।
যে পরিকল্পনায় এগোচ্ছে ছাত্রসংগঠনগুলো
তফসিল ঘোষণার পর ছাত্রসংগঠনগুলোর নিজেদের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। কাকে কোন পদে প্রার্থী করলে জয় ছিনিয়ে আনা যাবে, চলছে সেসব বিশ্লেষণ। তবে অধিকাংশ ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার দলীয় প্যানেলের চেয়ে সম্মিলিত সাধারণ শিক্ষার্থী প্যানেলের কথা ভাবছে সংগঠনগুলো। নিজ সংগঠনের বাইরে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অনেক প্রার্থীকে তাঁরা নিজেদের প্যানেলে রাখতে চাচ্ছেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর হওয়া ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা অভ্যুত্থানে অবদান রাখা প্রার্থীদের কিছুটা এগিয়ে রাখবেন—এমনটা মনে করছে কিছু সংগঠন। এ ছাড়া নারী শিক্ষার্থী, বিজ্ঞান অনুষদগুলোর শিক্ষার্থী, আদিবাসী, সংখ্যালঘু ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট প্রার্থীদের জিতে আসার জন্য বড় ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল কেমন হবে, তা দলীয় সিদ্ধান্তের আলোকেই ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সম্মিলিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্যানেল করবে, এমন আলোচনা চলছে। বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর পাশাপাশি ইসলামী ছাত্রশিবিরও পৃথকভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে প্যানেল দিতে পারে এমন আলোচনা হচ্ছে।
প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যাঁরা
ডাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহসাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) এবার মোট ২৮টি পদের বিপরীতে লড়বেন প্রার্থীরা। ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবির মুখে এবার গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক; ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক; স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক নামে চারটি নতুন পদ তৈরি করা হয়েছে।
ছাত্রসংগঠনগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরিচিত কিছু মুখ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত হওয়া সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, সদস্যসচিব জাহিদ আহসান ও মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসির চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের প্রার্থী হতে পারেন। আলোচনায় রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদও।
ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান ও বি এম কাওসার, কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভীর বারী হামিম প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।
বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর জাবির আহমেদের নাম আলোচনায় রয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম ও বর্তমান সভাপতি এস এম ফরহাদ প্রার্থী হতে পারেন। এ ছাড়া ছাত্র অধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লার নামও আলোচনায় রয়েছে।
কে কী বলছেন
নির্বাচন আয়োজনে কালক্ষেপণের অভিযোগ ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এরপরও তফসিল ঘোষণায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছুটা তড়িঘড়ি করেছে বলে মনে করছেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন।
নাহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছিল নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হলে এবং শিক্ষার্থী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত চিহ্নিত ছাত্রলীগ কর্মী ও ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষকদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পর তফসিল ঘোষণা করা হবে। কিন্তু আমরা সেগুলোর কিছুই দেখিনি। ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের বিষয়েও কোনো প্রকার অগ্রগতি দেখিনি।’
শিক্ষার্থীদের সংস্কার প্রস্তাবের বেশির ভাগই উপেক্ষা করে আগের কাঠামোর মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের। সংগঠনটির একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ডাকসু সংস্কারের প্রস্তাব দেয়। অপরাপর সংগঠনগুলোও সংস্কারের দাবি জানায়। কিন্তু আমরা দেখি, শিক্ষার্থীদের সংস্কার প্রস্তাবের বেশির ভাগই উপেক্ষা করে আগের কাঠামোর মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করা হলো।’
এরপরও ডাকসু নির্বাচনকে সাধুবাদ জানিয়ে শিমুল বলেন, প্রতিবছর নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রত্যাশা করেন তাঁরা। ছাত্র ইউনিয়ন চায়, ডাকসু নির্বাচনে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং চব্বিশের জুলাইয়ে যাঁরা গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত, সেসব সংগঠন এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনকে বিতর্কিত না করুক।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে বলে মনে করছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এই উচ্ছ্বাস যেন আশাহত অবস্থায় রূপ না নেয়, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কুচক্রী মহলের ডাকসু বানচালের পাঁয়তারায় প্রশাসনের মধ্যে যেন জুজুর ভয় সঞ্চারিত না হয়, সেটাই আমাদের আহ্বান থাকবে।’
ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচন করা জুলাইয়ের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা। আমাদের দাবি থাকবে, অনতিবিলম্বে প্রতিটি ক্যাম্পাসেই যেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।’
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের (সবার জন্য সমান সুযোগ) ওপর প্রশাসনের জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিপুল অর্থ এবং পেশিশক্তির ব্যবহার করে যাতে কোনো গোষ্ঠী এই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন।’
আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর১৭ ঘণ্টা আগে