নদী, পাহাড় ও ঝরনা দেখতে পর্যটকদের পছন্দের জায়গা খাগড়াছড়ি। রাঙামাটির সাজেকে যেতে হয় খাগড়াছড়ি দিয়েই। সাজেকে যাওয়ার পর্যটক যথেষ্ট থাকলেও খাগড়াছড়ির হোটেল-মোটেলগুলো প্রায় খালি পড়ে আছে। এর ফলে হোটেল-মোটেলমালিকসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। বাইরে থেকে পর্যটক না আসায় পিকআপ আর চান্দের গাড়ির বুকিং নেই বললেই চলে।

জিপ মালিক সমিতির লাইনম্যান সৈকত চাকমা বলেন, আজ রোববার সকালে সাজেকে গাড়ি গেছে মাত্র ২১টি। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা বেশ কম। আগামীকাল সোমবার বুকিং আছে ৭০টি গাড়ির। গত ঈদের ছুটিতে পাঁচ শর বেশি গাড়ি বুকিং ছিল।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫টি হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউস আছে। দুই–তিনটা হোটেল-মোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হলেও বাদবাকিগুলোয় এখনো কোনো বুকিং নেই।

শহরের শাপলা চত্বরের পাশে গ্রিন ভ্যালি হোটেলের ব্যবস্থাপক রহিত ত্রিপুরা বলেন, তাদের হোটেলে ১০০টি কক্ষ আছে, তবে বুকিং হয়েছে মাত্র ২০টি।

খাগড়াছড়ি হোটেল গাইরিংয়ের ব্যবস্থাপক প্রান্ত ত্রিপুরা বলেন, তাদের সব কটি কক্ষ ১৫ জুন পর্যন্ত বুকিং আছে।

হোটেল অরণ্য বিলাসের ব্যবস্থাপক আহম্মদ রশিদ বলেন, তাঁদের ৪০ শতাংশ বুকিং আছে। বাকি কক্ষগুলো খালি অবস্থায় আছে। পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলেই ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছেন তাঁরা। মূলত খাগড়াছড়িতে বেড়ানোর জায়গা কম হওয়ায় পর্যটকেরা আসেন না।

হোটেলগুলোয় বুকিং না থাকলেও খাগড়াছড়ির পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় ভিড় দেখা গেছে। আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সোহেল ত্রিপুরা বলেন, ঈদের দিন দেড় হাজারের মতো দর্শনার্থী এসেছিলেন। তবে বেশির ভাগই স্থানীয় লোকজন। আজ দর্শনার্থী আরও বাড়তে পারে।

মাটিরাঙ্গা থেকে পরিবার–পরিজন নিয়ে বেড়াতে এসেছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন সবাই বেড়াতে যেতে চাই। যেহেতু বয়স্ক ও ছোট ছোট বাচ্চা আছে, দুটি পিকআপ ভাড়া করে ৩১ জন দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরতে এসেছি।’

খাগড়াছড়ি শহরের স্বপ্নচূড়া রেস্টুরেন্টের মালিক নেইম্রা মারমা বলেন, অনেকে ক্রেতা আসছেন। ক্রেতা সামলাতে তাঁদের হিমশিম অবস্থা। খাগড়াছড়ির অন্যতম রেস্তোরাঁ সিস্টেমের কর্মচারী আচিং মারমা বলেন, তাঁদের রেস্টুরেন্টে ঈদের দিন থেকে পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজনের ভিড় আছে। আগামী কয়েক দিনের অর্ডার আছে। তাঁদের রেস্তোরাঁয় পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা আছে। অগ্রিম অর্ডার দিলে যেকোনো ধরনের খাবার রান্না করে দেন তাঁরা।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যটন স্পটগুলোয় ২৪ ঘণ্টাই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সিলেটে পাথরবাহী ট্রাক্টরচাপায় পর্যটক নিহত, আহত ৫
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা