খাগড়াছড়িতে হোটেল-মোটেল খালি, ভিড় রেস্তোরাঁ ও পর্যটনকেন্দ্রে
Published: 8th, June 2025 GMT
নদী, পাহাড় ও ঝরনা দেখতে পর্যটকদের পছন্দের জায়গা খাগড়াছড়ি। রাঙামাটির সাজেকে যেতে হয় খাগড়াছড়ি দিয়েই। সাজেকে যাওয়ার পর্যটক যথেষ্ট থাকলেও খাগড়াছড়ির হোটেল-মোটেলগুলো প্রায় খালি পড়ে আছে। এর ফলে হোটেল-মোটেলমালিকসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। বাইরে থেকে পর্যটক না আসায় পিকআপ আর চান্দের গাড়ির বুকিং নেই বললেই চলে।
জিপ মালিক সমিতির লাইনম্যান সৈকত চাকমা বলেন, আজ রোববার সকালে সাজেকে গাড়ি গেছে মাত্র ২১টি। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা বেশ কম। আগামীকাল সোমবার বুকিং আছে ৭০টি গাড়ির। গত ঈদের ছুটিতে পাঁচ শর বেশি গাড়ি বুকিং ছিল।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫টি হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউস আছে। দুই–তিনটা হোটেল-মোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হলেও বাদবাকিগুলোয় এখনো কোনো বুকিং নেই।
শহরের শাপলা চত্বরের পাশে গ্রিন ভ্যালি হোটেলের ব্যবস্থাপক রহিত ত্রিপুরা বলেন, তাদের হোটেলে ১০০টি কক্ষ আছে, তবে বুকিং হয়েছে মাত্র ২০টি।
খাগড়াছড়ি হোটেল গাইরিংয়ের ব্যবস্থাপক প্রান্ত ত্রিপুরা বলেন, তাদের সব কটি কক্ষ ১৫ জুন পর্যন্ত বুকিং আছে।
হোটেল অরণ্য বিলাসের ব্যবস্থাপক আহম্মদ রশিদ বলেন, তাঁদের ৪০ শতাংশ বুকিং আছে। বাকি কক্ষগুলো খালি অবস্থায় আছে। পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলেই ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছেন তাঁরা। মূলত খাগড়াছড়িতে বেড়ানোর জায়গা কম হওয়ায় পর্যটকেরা আসেন না।
হোটেলগুলোয় বুকিং না থাকলেও খাগড়াছড়ির পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় ভিড় দেখা গেছে। আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সোহেল ত্রিপুরা বলেন, ঈদের দিন দেড় হাজারের মতো দর্শনার্থী এসেছিলেন। তবে বেশির ভাগই স্থানীয় লোকজন। আজ দর্শনার্থী আরও বাড়তে পারে।
মাটিরাঙ্গা থেকে পরিবার–পরিজন নিয়ে বেড়াতে এসেছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন সবাই বেড়াতে যেতে চাই। যেহেতু বয়স্ক ও ছোট ছোট বাচ্চা আছে, দুটি পিকআপ ভাড়া করে ৩১ জন দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরতে এসেছি।’
খাগড়াছড়ি শহরের স্বপ্নচূড়া রেস্টুরেন্টের মালিক নেইম্রা মারমা বলেন, অনেকে ক্রেতা আসছেন। ক্রেতা সামলাতে তাঁদের হিমশিম অবস্থা। খাগড়াছড়ির অন্যতম রেস্তোরাঁ সিস্টেমের কর্মচারী আচিং মারমা বলেন, তাঁদের রেস্টুরেন্টে ঈদের দিন থেকে পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজনের ভিড় আছে। আগামী কয়েক দিনের অর্ডার আছে। তাঁদের রেস্তোরাঁয় পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা আছে। অগ্রিম অর্ডার দিলে যেকোনো ধরনের খাবার রান্না করে দেন তাঁরা।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যটন স্পটগুলোয় ২৪ ঘণ্টাই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মব সহিংসতা বন্ধ করুন
ঈদুল আজহার ছুটির মধ্যে মব সহিংসতার মাধ্যমে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনে প্রতিবন্ধকতা তৈয়ার এবং সিলেটের উৎমাছড়া এলাকায় পর্যটকদের হেনস্তার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ইতোপূর্বে মব সহিংসতার ঘটনায় আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই সতর্ক করিয়াছিলাম।
দুঃখজনক হইলেও সত্য, উক্ত ক্রিয়াকলাপে যতি টানা হয় নাই। কালিহাতী উপজেলার আউলিয়াবাদ অডিটোরিয়ামে ‘তাণ্ডব’ নামক চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনীর এক মাসের অনুমতি থাকিলেও স্থানীয় ‘আলেম সমাজ’-এর প্রতিবন্ধকতার মুখে কয়েক দিন পরই উহা বন্ধ করা হয়।
সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঈদের পূর্বদিবস হইতেই স্থানীয় মসজিদ ও মাদ্রাসা হইতে মাইকে ‘তাণ্ডব’ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ করিতে বলা এবং পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়িয়া ফেলা হয়। প্রদর্শনীটির বিরুদ্ধে মিছিল করিয়া জনমনে যেই আতঙ্ক তৈয়ার করা হইয়াছিল, উহাতেই ষড়যন্ত্র স্পষ্ট। অথচ দেশে চলচ্চিত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ নহে এবং আরও বিস্ময়কর হইল, কর্তৃপক্ষ ঈদের পূর্বেই থানায় পুলিশি সহায়তা প্রার্থনা করিয়া আবেদন করিলেও আশাব্যঞ্জক সাড়া মেলে নাই। ইহাতে কর্তৃপক্ষ যদ্রূপ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হইয়াছে, তদ্রূপ মব সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হইয়াছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে উৎমাছড়ায় পর্যটক হেনস্তার বিষয়ও উদ্বেগজনক। গত রবিবার সেইখানে পর্যটকদের উপজেলা যুব জমিয়ত নামক সংগঠনের কর্মীরা কীসের ভিত্তিতে স্থান ত্যাগ করিতে আদেশ করিয়াছেন? দেশের যেই কোনো এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হইয়া পর্যটকরা সেইখানে গমন করিতেই পারেন। এই ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অজুহাতেই বাধা কিংবা হেনস্তা গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। ইহা স্পষ্টতই অপরাধমূলক তৎপরতা। এমনকি হেনস্তাকারীর বক্তব্য অনুযায়ী সেইখানে অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ড ঘটিলেও তজ্জন্য প্রশাসন বিদ্যমান। আইন স্বহস্তে তুলিয়া লইবার অবকাশ কাহারও নাই। এই ঘটনায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় যদ্রূপ সংকটের উদ্ভব হইবে, তদ্রূপ পর্যটন কেন্দ্ররূপে উৎমাছড়ার বিকাশও হইবে বাধাগ্রস্ত।
এই সকল ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের অত্যধিক বাড়বাড়ন্ত মব সহিংসতারই ইঙ্গিতবহ। ইতোপূর্বে আমরা প্রত্যক্ষ করিয়াছি, তথাকথিত তৌহিদি জনতার নামে বিবিধ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধাদান এবং বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ন্যায় অঘটন ঘটানো হইয়াছে।
গত জানুয়ারিতে আমরা প্রত্যক্ষ করিয়াছিলাম, একাদিক্রমে নারীকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানসমূহ বাতিল করা হইয়াছে। তৎপূর্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজারসমূহে হামলা চালানো হইয়াছে। আমরা মনে করি, পূর্বেকার মব সন্ত্রাসের উপযুক্ত বিচার না হইবার কারণেই সাম্প্রতিক মব সন্ত্রাস আশকারা পাইয়াছে। কেবল তাহাই নহে, ধর্মীয় বিতর্ককে কেন্দ্র করিয়া অপরকে হত্যার হুমকি দেওয়ার ন্যায় বিপজ্জনক ঘটনাও চলমান।
অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ হইতে এই প্রকার অঘটনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হইলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিতেছে না– উহা খতাইয়া দেখিবার আবশ্যকতা দাবি করে। নাগরিক মতপ্রকাশের পথে প্রতিবন্ধকরূপে আবির্ভূত হওয়া, সৃজনশীলতায় হস্তক্ষেপ এবং স্বাভাবিক চলাফেরাকে মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে সংকীর্ণ করিয়া তুলিবার পরিবেশ সামাজিক বিকাশের পথকে রুদ্ধ করে। সরকারকে মব সন্ত্রাস বন্ধে তজ্জন্য তৎপর হইতেই হইবে। কোনো গোষ্ঠীর প্ররোচনা কিংবা কতিপয় মানুষ দলবদ্ধ হইয়া বিরুদ্ধে অবস্থান লইলেই যদি সামাজিক স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করিয়া দিতে হয়, তাহাতে মব সন্ত্রাসই জয়ী হয়।