ফের রণক্ষেত্র মণিপুর, কারফিউ জারি-ইন্টারনেট বন্ধ
Published: 8th, June 2025 GMT
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে ফের অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার (৭ জুন) বিকেলের পর থেকেই রাজ্যটির পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। রাজধানী ইম্ফল ও আশপাশের এলাকাগুলোতে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং সহিংসতা এতটাই বাড়ে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনকে কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
শনিবার বিকেলে মেইতেই সম্প্রদায়ের পাঁচজন সদস্য—যারা আরামবাই টেংগোল গোষ্ঠীর বলে পরিচিত—তাদের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ্যে আসতেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা দাবি তোলে, অবিলম্বে ওই পাঁচজনকে মুক্তি দিতে হবে। এরপরই পশ্চিম ইম্ফলের কোয়াকেইথেল পুলিশ পোস্টে হামলা চালানো হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রাস্তায় গুলি, ধস্তাধস্তি, আহত সাংবাদিক—সব মিলিয়ে মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
রাজধানী ইম্ফলের রাস্তায় বিক্ষুব্ধ মেইতেই জনতা পুলিশের সঙ্গে প্রবল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। অভিযোগ, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে দুই সাংবাদিকসহ মোট তিনজন আহত হয়েছেন।
আরো পড়ুন:
ভারতে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন
কাশ্মীর সফরে গিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেন মোদি
হিন্দুস্তান টাইমস ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অশান্তির লাগাম টানতে মণিপুর প্রশাসন জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্যের ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, থৌবল, কাকচিঙের মতো জেলাগুলোতে জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মণিপুর পুলিশ প্রশাসন পাঁচ বা তার বেশি লোকের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
মণিপুরের কমিশনার এবং স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মণিপুরের ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, থৌবল, কাকচিং এবং বিষ্ণুপুর জেলাগুলোর বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে কিছু ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জনগণের আবেগকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, হিংসাত্মক বক্তব্য এবং ভিডিও ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন বলে মনে হচ্ছে। এতে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। এনিয়ে আগামী পাঁচ দিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, আরামবাই টেংগোলের প্রধান নেতা কানন সিংয়ের মুক্তির দাবিতে একদল যুবক নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলেছে। তার মুক্তি না দিলে তারা নিজেকে জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়েছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট মইরাংথেম অমিতের বাড়িতে হামলা এবং পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে অপহরণের ঘটনায় কানন সিং প্রধান সন্দেহভাজনকারী।
উল্লেখ্য, মণিপুরে কুকি ও মেইতেই গোষ্ঠীর সমস্যা বহু পুরোনো। কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘কুকি লিবারেশন আর্মি’ (কেএলও) এবং মেইতেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর (ইউএনএলএফ) মধ্যে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। গত বছরের মে মাসে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে সরব হয় মেইতেই গোষ্ঠী। তাদের দাবি, মণিপুরে সংঘর্ষের মূলে রয়েছে কুকিরাই। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সংঘর্ষবিরতি বাতিল করার আবেদন জানিয়েছিল মেইতেই গোষ্ঠী।
গত দেড় বছরে মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষে ২৬০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মণিপুরবাসী।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত মণ প র স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
বান্দরবানের রুমা ও থানচি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার থেকে রুমায় বগা লেক পর্যন্ত এবং থানচিতে তুমাতুঙ্গি ও তিন্দু পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাবে। নির্দেশিত স্থান ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া যাবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জেলা প্রশাসক শামীম আরা আংশিক প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসকের গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৩ জুন জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির রক্ষা ও সমন্বয়–সংক্রান্ত কোর কমিটির সভার সিদ্ধান্তে ও সেনাবাহিনীর বান্দরবান ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের বৃহস্পতিবারের চিঠির আলোকে দুই উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণ–সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা শর্তসাপেক্ষে বাতিল করা হলো। থানচি উপজেলা সদর থেকে মদক অভিমুখে তিন্দুমুখ ও বাকলাই অভিমুখে তুমাতুঙ্গি পর্যন্ত পর্যটকেরা যেতে পারবেন। রুমায় রুমা বাজার থেকে মুনলাইপাড়া হয়ে বগা লেক পর্যন্ত যাওয়া যাবে।
দুই উপজেলায় নির্দেশিত স্থান ভ্রমণে যাওয়ার জন্য তিনটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলো হচ্ছে, প্রথমত, নির্দেশিত স্থানগুলোর বাইরে কোথাও যাওয়া যাবে না; দ্বিতীয়ত, প্রশাসনের নিবন্ধিত ট্যুরিস্ট গাইড সঙ্গে নিতে হবে এবং পর্যটন সেবাকেন্দ্রে ও চেকপোস্ট চাহিত তথ্য (জাতীয় পরিচয়পত্রের ছায়ালিপি, মুঠোফোন নম্বর) দিতে হবে।
রুমায় ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর থেকে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। মাঝে কিছুদিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এরপর গত বছরে পুরো জেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এক মাস পর ৬ নভেম্বর থেকে বান্দরবান সদর, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়। চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রোয়াংছড়ির দেবতাখুম থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় পর্যটকেরা বর্তমানে সেখানে ভ্রমণ করতে পারেন।
রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি দুর্গমে নতুন আত্মপ্রকাশ হওয়া সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তৎপরতা শুরু হয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়। কেএনএফের সঙ্গে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া নামের একটি জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতার ব্যাপারেও অভিযোগ উঠেছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই বছরের ৯ অক্টোবর থেকে কেএনএফ ও শারক্কীয়া জঙ্গিদের দমনে সমন্বিত অভিযান শুরু করে। অভিযানে নিরাপত্তা বিবেচনায় ২০ অক্টোবর থেকে রুমা ও রোয়াংছড়িতে পর্যটক ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পাহাড় ধসের আশঙ্কায় লামা উপজেলা প্রশাসন ১ জুন থেকে লামা মিরিঞ্জা পাহাড়ে পর্যটনকেন্দ্র ও আবাসিক হোটেল বন্ধ ঘোষণা করে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সেগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুনবান্দরবানের তিন উপজেলায় ভ্রমণে আবারও নিষেধাজ্ঞা১৫ মার্চ ২০২৩