খুদে বার্তা পাঠানোর নানা মাধ্যম ও তাদের সঠিক ব্যবহার

একসময় আমরা খুদে বার্তা পাঠানোর জন্য ই-মেইল বা এসএমএস শুধু ব্যবহার করতাম। এখন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম মেসেজ, ই-মেইলসহ নানা ধরনের বার্তা পাঠানোর মাধ্যম আমরা ব্যবহার করি। দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগের জন্য নতুন নতুন মাধ্যম এখন দেখা যায়। প্রতিটি মাধ্যমের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, খুদে বার্তা পাঠানোর জন্য অনেক টুল থাকলেও নির্দিষ্ট কাজের জন্য আদর্শ মাধ্যম ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। আগামীকাল অফিসের কোন মিটিংয়ের সংবাদ ফেসবুক মেসেঞ্জারে দিলে তা প্রাপকের নজরে আসার সম্ভাবনা কম। আবার কাল সকালে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে যাবেন, তার তথ্য ই-মেইল করলে সেই বার্তা আপনার বন্ধু না–ও পড়তে পারে। যোগাযোগের টুলস অনেক হলেও কখন কোনটি ব্যবহার করবেন, তা জানা জরুরি। বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যম আমরা মূলত ব্যক্তিগত, আধা আনুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক টুল হিসেবে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। এদের বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে।

হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিন দ্রুতগতিতে ও তাৎক্ষণিকভাবে

হোয়াটসঅ্যাপে সব ধরনের বার্তা পাঠানো যাবে না। ব্যক্তিগত ও আধা আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ সবচেয়ে জনপ্রিয়। পরিবার, বন্ধুবান্ধবসহ দলগত কাজের জন্যও এটি আদর্শ। এই টুলের এনক্রিপশন সুবিধা, গ্রুপ চ্যাট, ভয়েস আর ভিডিও কলিংয়ের সুবিধার জন্য ব্যবহার অনেক জনপ্রিয়। প্রতিদিন কোটি কোটি বার্তা আদান-প্রদান হয় এই মাধ্যমে। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালে সাধারণত দ্রুত প্রতিক্রিয়া আশা করা হয়। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জলদি বা দ্রুত উত্তর দেওয়া-নেওয়া করা হয়। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানোর ক্ষেত্রে জবাবের জন্য ১০ মিনিট থেকে ৪০-৫০ মিনিটের মধ্যে সাধারণ সময় ধরে নেওয়া হয়।

ফেসবুক মেসেঞ্জার ও ইনস্টাগ্রামে বার্তা দিন দ্রুতগতিতে, উত্তর আসবে কিছুটা ধীরগতিতে

একইভাবে ফেসবুক মেসেঞ্জার মূলত ব্যক্তিগত ও সামাজিক যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। ফেসবুক প্রোফাইলের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় বন্ধুবান্ধব বা পরিচিতদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের জন্য এটি সুবিধাজনক। হোয়াটসঅ্যাপের চেয়ে মেসেঞ্জারের খুদে বার্তায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় না। মেসেঞ্জারে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত উত্তরের জন্য সময় ধরে নেওয়া হয়। অন্যদিকে ইনস্টাগ্রাম মেসেজ ছবি ও ভিডিওকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। এই প্ল্যাটফর্মের মেসেজিং ফিচারটি মূলত ব্যক্তিগত বা পরিচিতদের সঙ্গে দ্রুত সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানেও প্রতিক্রিয়া আদান-প্রদান দ্রুত হয় না বলা যায়। বার্তা পাঠানোর পরে কয়েক ঘণ্টা থেকে দিন পেরিয়ে যায় উত্তর পেতে।

সিগন্যাল ও টেলিগ্রামে উত্তর আসবে ধীরগতিতে

সিগন্যাল ও টেলিগ্রামহ অন্যান্য খুদে বার্তা পাঠানোর ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বেশ মেনে চলা হয়। বড় গ্রুপ চ্যাটের জন্য টেলিগ্রাম বিশেষ পরিচিত। ব্যক্তিগত ও আধা আনুষ্ঠানিক কাজের জন্য এই অ্যাপ বেশ ব্যবহৃত হয়। নিরাপত্তার কারণে টেলিগ্রামে প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিক না-ও হতে পারে।

এসএমএসে বার্তা দিন দ্রুতগতিতে, উত্তর না-ও আসতে পারে

একটা মজার বিষয় হচ্ছে মোবাইল এসএমএস এখনো মৌলিক ও সর্বজনীন যোগাযোগ মাধ্যম। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও বার্তা পাঠানো যায়। জরুরি বার্তা, ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড বা সীমিত অক্ষরের তথ্যের জন্য এটি আদর্শ। ব্যক্তিগত ও আধা আনুষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার থাকলেও ব্যবহার বেশ কমে গেছে। এসএমএসের প্রতিক্রিয়া ক্ষেত্রবিশেষে বেশ ধীর হতে পারে।

ই-মেইলে উত্তর আসবে ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে

এক যুগের বেশি সময় ধরে আমরা ই-মেইল আনুষ্ঠানিক ও পেশাগত যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করছি। কোনো বক্তব্য বা জিজ্ঞাসাসহ চুক্তিপত্র, অফিশিয়াল ঘোষণা, দীর্ঘ আলোচনা বা যেকোনো বার্তার জন্য ই-মেইল ব্যবহার করা হয়। আনুষ্ঠানিকতা ও লিখিত প্রমাণের জন্য ই-মেইল জনপ্রিয়। ই-মেইলের প্রতিক্রিয়া সাধারণত ধীর হয়। তাৎক্ষণিক উত্তরের আশা করা যাবে না। সাধারণত সময় ও স্থানভেদে ২৪-৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় দেওয়া উচিত প্রাপকের কাছ থেকে উত্তরের জন্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ সব ক ম স ঞ জ র য গ য গ র জন য র জন য ব যবহ হ য় টসঅ য প ব যবহ র কর ইনস ট

এছাড়াও পড়ুন:

১০টির বেশি সিম থাকলে এসএমএস-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধ হবে ধাপে ধাপে

সরকারের নতুন নিয়ম হলো, জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১০টি নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করা যাবে। যাঁদের কাছে ১০টির বেশি নিবন্ধিত সিম আছে, তাঁদের অতিরিক্ত সিম ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তবে তার আগে নিজের অপ্রয়োজনীয় সিমের নিবন্ধন বাতিল করার সুযোগ পাবেন ব্যবহারকারীরা। পুরো প্রক্রিয়া আগামী নভেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গত মে মাসে একজন ব্যবহারকারীর সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। জাতীয় নিরাপত্তা, অপারেটরদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক অনুশীলন চর্চা বিবেচনায় নিয়ে একজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সিমের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০টি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে। বিটিআরসির ২৯৬তম কমিশন সভায় সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনার পুরো প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়। সংস্থাটি বলছে, সর্বোচ্চ ১০টি সিম নিবন্ধনের সুযোগ বেঁধে দিলে ২৬ লাখ ব্যবহারকারীর ৬৭ লাখ সিম বন্ধ হয়ে যাবে।

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত প্রকৃত সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৫। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ৩২ শতাংশ ব্যবহারকারীর নামে ৫টি বা তার কম সিম রয়েছে। ৬ থেকে ১০টি সিম রয়েছে ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ ব্যবহারকারীর কাছে। ১১ থেকে ১৫টি সিম ব্যবহারকারী মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে। বিটিআরসির ২৯৬তম কমিশন সভায় সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনার পুরো প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়। সংস্থাটি বলছে, সর্বোচ্চ ১০টি সিম নিবন্ধনের সুযোগ বেঁধে দিলে ২৬ লাখ ব্যবহারকারীর ৬৭ লাখ সিম বন্ধ হয়ে যাবে।

বিটিআরসি শুরুতে জানিয়েছিল, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে মোবাইল অপারেটররা জানায়, তারা এখনো কোনো নির্দেশনা পায়নি।

যেসব ব্যবহারকারীর নামে ১০টির বেশি সিম রয়েছে, শুরুতে তাঁদের নামের তালিকা করা হবে। এ কাজ করবে বিটিআরসির নিয়োগ করা সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্মের ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান। পরে এসব ব্যবহারকারীর নিবন্ধিত সিমের নম্বরগুলো নিজ নিজ অপারেটরকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

অপারেটররা এ তালিকা অনুযায়ী গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তাঁর নামে নিবন্ধিত সিম ১০টিতে নামিয়ে আনার বিষয়ে অনুরোধ জানাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীকে অপারেটররা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি করে এসএমএস দিয়ে সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়ে অনুরোধ জানাবে।

পাশাপাশি অপারেটররা তাদের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রচার করবে। এ ছাড়া বিটিআরসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক বা অনলাইন সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে গ্রাহকদের অবহিত করা হবে।

১০টির বেশি নিবন্ধিত সিম থাকা ব্যবহারকারীদের তালিকা অপারেটররা নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হবে।

ব্যবহারকারীরা *১৬০০১# নম্বরে ডায়াল করে তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে কতটি সিম নিবন্ধিত আছে, সেটার সংখ্যা ও নম্বর জানতে পারবেন। অতিরিক্ত সিম থাকলে তা ‘ট্রান্সফার অব ওনারশিপ’ করতে পারবেন।

এ ধাপের কার্যক্রম ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা শুরুতে জানানো হয়েছিল। অবশ্য বিটিআরসির সূত্র জানায়, এ সময়সীমা ১৫ অক্টোবর থেকে পিছিয়ে ৩০ অক্টোবর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ সময়ের পরও যেসব ব্যবহারকারীর নামে ১০টির বেশি সিম থাকবে, ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের তালিকা করে অপারেটরদের জানিয়ে দেওয়া হবে। অপারেটররা সেই তালিকার ভিত্তিতে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য পৃথক তালিকা প্রস্তুত করবে।

সে ক্ষেত্রে সিমগুলো থেকে রাজস্ব আহরণের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। সর্বশেষ ছয় মাসে সর্বোচ্চ রাজস্বের সিমটি শুরুতে থাকবে এবং কম রাজস্বের সিমটি শেষে থাকবে। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর যে সিম নিয়মিত সচল থাকে এবং বেশি ব্যবহৃত হয়, সেটাকে প্রথমে রাখা হবে। পাশাপাশি এমএফএসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকলে সেসব সিমের কথা তালিকায় উল্লেখ করতে হবে।

আরও পড়ুনব্যক্তি পর্যায়ে মুঠোফোন সিমের ব্যবহার আরও কমাচ্ছে সরকার২৪ জুন ২০২৫

অপারটেরদের কাছ থেকে পাওয়া এই তালিকার ভিত্তিতে বিটিআরসির ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীর জন্য ১০টি সিম নির্ধারণ করবে। ব্যবহারকারীর যতগুলো অপারেটরের সিম রয়েছে, তাদের সবার যেন অন্তত একটি সিম থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হবে। নিজ নিজ অপারেটরের জন্য ব্যবহারকারীর সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণের সিম হতে হবে। প্রয়োজনে অপারেটরদের বিশেষ পছন্দের দুটি সিম প্রাধান্য পেতে পারে।

ব্যবহারকারীদের ১০টি সিমের তালিকা তৈরি হয়ে গেলে বাকি সিমগুলোর নিবন্ধন বাতিলের জন্য অপারেটরদের পাঠানো হবে। এ প্রক্রিয়া আগামী নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি।

আরও পড়ুনএক ব্যক্তির নামে ১০টির বেশি মুঠােফোন সিম দেওয়া হবে না২৫ মে ২০২৫

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, ১০টির বেশি সিম বন্ধের এ প্রক্রিয়ায় কোনো গ্রাহকের প্রয়োজনীয় সিম যদি বাতিল হয়ে যায়, তবে অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুনরায় তা নিবন্ধন করে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এমদাদ উল বারী প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের ভোগান্তি যেন না হয়, তাই সময় নিয়ে কাজটি করতে হবে। আগামী ১ আগস্ট থেকে গ্রাহকদের ৩ মাসের জন্য সময় দেওয়া হবে নিজ উদ্যোগে ১০টির বেশি সিম থাকলে তা বাতিল করার জন্য। এরপর বিটিআরসি বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাড়তি সিমগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে ৫ থেকে ৬ মাস সময় লাগবে।

আরও পড়ুনদেশে নিবন্ধিত মোবাইল সিমের ৪২% নিষ্ক্রিয়২৪ জুন ২০২৪আরও পড়ুনমুঠোফোন নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সুযোগ, কিন্তু জনপ্রিয় হয়নি কেন৩১ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০টির বেশি সিম থাকলে এসএমএস-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধ হবে ধাপে ধাপে