উৎমাছড়ায় পর্যটকদের যেতে বাধা, ভিডিও ভাইরাল
Published: 10th, June 2025 GMT
সিলেটে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে না যাওয়ার অনুরোধ করেছেন স্থানীয়রা। রোববার বিকেলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের চরারবাজার এলাকার ‘উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের বাধা দেওয়ার এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পরে মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার।
ভিডিওতে দেখা গেছে, স্থানীয় পরিচয়ে কয়েকজন বেড়াতে আসা পর্যটকদের চলে যেতে অনুরোধ জানাচ্ছেন। এ সময় পর্যটকদের এলাকার পরিবেশ নষ্ট না করা ও অশ্লীলতা না করার কথা বলা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- কোম্পানীগঞ্জের উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের উৎমা ছড়ায় ঈদের ছুটিতে অনেকে বেড়াতে যান। পাথরের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিরিবিলি পরিবেশের কারণে উৎমাছড়াকে বেছে নেন অনেক পর্যটক। গত রোববার বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের উপর হঠাৎ করে ‘ফরমান’ জারি করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুব জমিয়তের সহসভাপতি মুফতি রুহুল আমিন সিরাজী। দলীয় কর্মীদের নিয়ে তিনি সেখানে যান। তিনি বলেন, উৎমাছড়া কোনো পর্যটন কেন্দ্র নয়। কেউ ছবি আপলোড করবেন না। আরেকজন এসময় বলেন, এলাকার মুরব্বিরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যাতে এখানে কেউ না আসে। আমরা সম্মানের সাথে বলছি-আপনারা এখানে আসবেন না।
এ বিষয়ে রুহুল আমিন সিরাজী বলেন, কিছু মানুষ এলাকায় গিয়ে মদপান ও অশ্লীল কার্যক্রম করছেন। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় আলেম-ওলামা ও মুরব্বি–যুবকদের নিয়ে ঈদের আগে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা উৎমাছড়ায় গিয়ে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করেছেন।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখাও করেছেন নিষেধাজ্ঞা প্রদানকারী সংগঠন ছাত্র ও যুব জমিয়তের নেতাকর্মীরা।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উৎমাছড়ায় সরেজমিন যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার। তিনি সমকালকে জানিয়েছেন উৎমাছড়ায় পর্যটক গেলে স্থানীয়দের সমস্যা কোথায় এবং কেন তারা নিষেধ দিচ্ছেন তা জানতে সেখানে গিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলবেন।
উত্তর রণিখাই ইউপি চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমান সমকালকে জানান এলাকাটি সুন্দর হলেও সরকারিভাবে সেটি কোনো পর্যটন কেন্দ্র নয়। অনেকে বেড়াতে আসেন। রোববার যারা এসেছিলেন তাদের সরে যেতে অনুরোধ করেছেন যুবকরা। এ নিয়ে মঙ্গলবার উপজেলার প্রশাসনের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর যটক কর ছ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মব সহিংসতা বন্ধ করুন
ঈদুল আজহার ছুটির মধ্যে মব সহিংসতার মাধ্যমে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনে প্রতিবন্ধকতা তৈয়ার এবং সিলেটের উৎমাছড়া এলাকায় পর্যটকদের হেনস্তার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ইতোপূর্বে মব সহিংসতার ঘটনায় আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই সতর্ক করিয়াছিলাম।
দুঃখজনক হইলেও সত্য, উক্ত ক্রিয়াকলাপে যতি টানা হয় নাই। কালিহাতী উপজেলার আউলিয়াবাদ অডিটোরিয়ামে ‘তাণ্ডব’ নামক চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনীর এক মাসের অনুমতি থাকিলেও স্থানীয় ‘আলেম সমাজ’-এর প্রতিবন্ধকতার মুখে কয়েক দিন পরই উহা বন্ধ করা হয়।
সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঈদের পূর্বদিবস হইতেই স্থানীয় মসজিদ ও মাদ্রাসা হইতে মাইকে ‘তাণ্ডব’ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ করিতে বলা এবং পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়িয়া ফেলা হয়। প্রদর্শনীটির বিরুদ্ধে মিছিল করিয়া জনমনে যেই আতঙ্ক তৈয়ার করা হইয়াছিল, উহাতেই ষড়যন্ত্র স্পষ্ট। অথচ দেশে চলচ্চিত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ নহে এবং আরও বিস্ময়কর হইল, কর্তৃপক্ষ ঈদের পূর্বেই থানায় পুলিশি সহায়তা প্রার্থনা করিয়া আবেদন করিলেও আশাব্যঞ্জক সাড়া মেলে নাই। ইহাতে কর্তৃপক্ষ যদ্রূপ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হইয়াছে, তদ্রূপ মব সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হইয়াছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে উৎমাছড়ায় পর্যটক হেনস্তার বিষয়ও উদ্বেগজনক। গত রবিবার সেইখানে পর্যটকদের উপজেলা যুব জমিয়ত নামক সংগঠনের কর্মীরা কীসের ভিত্তিতে স্থান ত্যাগ করিতে আদেশ করিয়াছেন? দেশের যেই কোনো এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হইয়া পর্যটকরা সেইখানে গমন করিতেই পারেন। এই ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অজুহাতেই বাধা কিংবা হেনস্তা গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। ইহা স্পষ্টতই অপরাধমূলক তৎপরতা। এমনকি হেনস্তাকারীর বক্তব্য অনুযায়ী সেইখানে অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ড ঘটিলেও তজ্জন্য প্রশাসন বিদ্যমান। আইন স্বহস্তে তুলিয়া লইবার অবকাশ কাহারও নাই। এই ঘটনায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় যদ্রূপ সংকটের উদ্ভব হইবে, তদ্রূপ পর্যটন কেন্দ্ররূপে উৎমাছড়ার বিকাশও হইবে বাধাগ্রস্ত।
এই সকল ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের অত্যধিক বাড়বাড়ন্ত মব সহিংসতারই ইঙ্গিতবহ। ইতোপূর্বে আমরা প্রত্যক্ষ করিয়াছি, তথাকথিত তৌহিদি জনতার নামে বিবিধ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধাদান এবং বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ন্যায় অঘটন ঘটানো হইয়াছে।
গত জানুয়ারিতে আমরা প্রত্যক্ষ করিয়াছিলাম, একাদিক্রমে নারীকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানসমূহ বাতিল করা হইয়াছে। তৎপূর্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজারসমূহে হামলা চালানো হইয়াছে। আমরা মনে করি, পূর্বেকার মব সন্ত্রাসের উপযুক্ত বিচার না হইবার কারণেই সাম্প্রতিক মব সন্ত্রাস আশকারা পাইয়াছে। কেবল তাহাই নহে, ধর্মীয় বিতর্ককে কেন্দ্র করিয়া অপরকে হত্যার হুমকি দেওয়ার ন্যায় বিপজ্জনক ঘটনাও চলমান।
অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ হইতে এই প্রকার অঘটনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হইলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিতেছে না– উহা খতাইয়া দেখিবার আবশ্যকতা দাবি করে। নাগরিক মতপ্রকাশের পথে প্রতিবন্ধকরূপে আবির্ভূত হওয়া, সৃজনশীলতায় হস্তক্ষেপ এবং স্বাভাবিক চলাফেরাকে মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে সংকীর্ণ করিয়া তুলিবার পরিবেশ সামাজিক বিকাশের পথকে রুদ্ধ করে। সরকারকে মব সন্ত্রাস বন্ধে তজ্জন্য তৎপর হইতেই হইবে। কোনো গোষ্ঠীর প্ররোচনা কিংবা কতিপয় মানুষ দলবদ্ধ হইয়া বিরুদ্ধে অবস্থান লইলেই যদি সামাজিক স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করিয়া দিতে হয়, তাহাতে মব সন্ত্রাসই জয়ী হয়।