গাজার বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য উপত্যকাটিতে আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাসকে অবিলম্বে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। আব্বাসের এক চিঠির বরাতে আজ মঙ্গলবার ফ্রান্সের পক্ষ থেকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে গতকাল সোমবার লেখা চিঠিতে এ কথা বলেন আব্বাস। ওই চিঠিতে গাজায় সহিংসতা বন্ধে প্রধান কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মনে করেন, ওই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হলে যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরবে।

চিঠিতে আব্বাস লেখেন, হামাস আর গাজা শাসন করতে পারবে না। ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে তাদের অস্ত্র এবং সামরিক সক্ষমতা সমর্পণ করতে হবে। এ ছাড়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ম্যান্ডেট অনুযায়ী সুরক্ষা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গাজায় আরব বা আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানাতে প্রস্তুত রয়েছেন তিনি।

এদিকে চলতি মাসেই জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একটি সম্মেলনে নেতৃত্ব দেবেন মোহাম্মদ বিন সালমান। সেখানে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। আব্বাসের চিঠির পর এক বিবৃতিতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে কথা বলেছে ফ্রান্সও। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাখোঁ বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে দৃঢ় সংকল্প।

তবে কিছু শর্তও দিয়েছেন মাখোঁ। এর মধ্যে রয়েছে হামাসের ‘নিরস্ত্রীকরণ’। দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে বহু আগে থেকেই সোচ্চার ফ্রান্স। এমনটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পরও ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার কথা বলছে দেশটি। ফিলিস্তিনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হবে ফ্রান্সের নীতিতে বড় বদল। এতে দেশটির সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কও খারাপ হতে পারে।

ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত ১৭

৭ অক্টোবর হামাসের ওই হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত হন। দেশটি থেকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় ২৫১ জনকে। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। নৃশংস এ হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় সোয়া এক লাখ মানুষ। হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় ব্যাপক খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। ১১ সপ্তাহ পুরোপুরি অবরোধের পর গত মাস থেকে সেখানে সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালনায় গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি সংস্থা। তবে তাদের ত্রাণের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে জাতিসংঘ।

আরও পড়ুনইসরায়েলি মন্ত্রী স্মোট্রিচ ও বেন-গভিরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাজ্য৩৫ মিনিট আগে

এরই মধ্যে আজ মধ্য গাজায় জিএইচএফের ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে অন্তত ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন। স্থানীয় চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের আল–আদওয়া হাসপাতাল ও আল–কুদস হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের ওপর ওই গুলি সতর্কতা হিসেবে চালানো হয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।

এদিকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম মোয়ামেন মোহাম্মদ আবু আল-আউফ। গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তিনি ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন। এর মধ্য দিয়ে উপত্যকাটিতে সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় মোট ২২৭ সাংবাদিক নিহত হলেন।

ফিলিস্তিনিদের ‘নিশ্চিহ্ন’ করতে চায় ইসরায়েল

গাজার স্কুল, ধর্মীয় স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক স্থাপনায় ইসরায়েলে হামলা যুদ্ধাপরাধের সমান বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের স্বাধীন একটি তদন্ত কমিশন। দখল করা ফিলিস্তিন অঞ্চল নিয়ে এক তদন্ত প্রতিবেদনে কমিশন বলেছে, এ হামলার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে ইসরায়েল।

এ ছাড়া আলাদা এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের ওই কমিশনের চেয়ারম্যান নাভি পিল্লাই বলেছেন, ‘আমরা আরও বেশি ইঙ্গিত পাচ্ছি যে গাজায় ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েল সমবেতভাবে অভিযান চালাচ্ছে। গাজার শিশুরা তাদের শৈশব হারিয়েছে। হামলা, অনিশ্চয়তা, অনাহার ও জীবনযাপনের মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে টিকে থাকার চিন্তা করার জন্য তাদের বাধ্য করা হচ্ছে।’

ইসরায়েলের দখল করা ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোয় মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে স্বাধীন ওই কমিশন গঠন করেছিল জাতিসংঘ। এর আগে গত মাসে গাজায় ‘জাতিগত নিধন ঠেকাতে’ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার। তবে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের পরও গাজায় জাতিগত নিধনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইসরায়েল।

আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরেক সাংবাদিক নিহত, সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২২৭৯ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য় ইসর য় ল ইসর য় ল র আহ ব ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত সামরিক স্থাপনাগুলোতে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ ‍জুন) বিকেলে চালানো এ হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার ডেপুটি হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন।

রবিবার রাতে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

ইরানে আবারো হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরো জানিয়েছে, তেহরানে ইসরায়েলের নতুন হামলায় আইআরজিসির তৃতীয় ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহসেন বাঘেরিও নিহত হয়েছেন।

এর আগে, শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের প্রথম হামলায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসির কমান্ডার হোসেইন সালামিসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ছয় জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল ইরান। 

রবিবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার ইরানজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ জন। হতাহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ জন নারী এবং বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ