যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্যকে প্রকাশ্যে দেখা গেছে। আজ মঙ্গলবার লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন তাঁরা।

লন্ডনে প্রকাশ্যে আসা আওয়ামী লীগের এই দুই নেতা হলেন সুনামগঞ্জ–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত সরকার এবং হবিগঞ্জ–৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো.

আবু জাহির। এ সময় তাঁদের সঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সরকারকেও প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা যায়।

চার দিনের যুক্তরাজ্য সফরে আজ লন্ডনে পৌঁছেছেন অধ্যাপক ইউনূস। তাঁর এ সফরকে কেন্দ্র করেই ডরচেস্টার হোটেলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন লন্ডনে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। প্রধান উপদেষ্টার লন্ডনে অবস্থানের পুরোটা সময় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

বিক্ষোভে সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহির (প্রথম সারির ডান থেকে চতুর্থ)

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক শ য আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

হবিগঞ্জে কনসার্টে বিশৃঙ্খলার পর নারীদের হেনস্তা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ

হবিগঞ্জ শহরের জালাল স্টেডিয়ামে গত শনিবার রাতে আয়োজিত এক কনসার্টে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। সে সময় ভিড়ের মধ্যে নারী দর্শকদের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে‌ছে। ত‌বে পু‌লিশ বল‌ছে, নারী‌দের হেনস্তার বিষ‌য়টি সত‌্য নয়। আ‌য়োজক‌দের ম‌ধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাঁদের এক‌টি পক্ষ অপপ্রচা‌রে নে‌মে‌ছে।

পু‌লিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহরের জালাল স্টে‌ডিয়া‌মে বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত শনিবার দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই রজতজয়ন্তীর কনসার্টে সন্ধ্যার পর থেকেই বিপুল দর্শকের ভিড় জমে। রাত আটটার দিকে মঞ্চে প্রথমে কণ্ঠশিল্পী আশিক, বাঁধন ও ইপা গান পরিবেশন করেন। এরপর জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘লালন’ চারটি গান পরিবেশন করে। এর কিছুক্ষণ পরেই সাউন্ড সিস্টেমের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সাউন্ড ঠিক করার আগেই উৎসুক দর্শকদের মধ্যে থেকে এক তরুণ একটি বোতল ছুড়ে মারেন মঞ্চের দিকে। সেই বোতল মঞ্চে না গিয়ে অপর এক দর্শকের মাথায় লাগে। এ ঘটনায় একপর্যায়ে দর্শকসারিতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। চেয়ার ভাঙচুর, বোতল নিক্ষেপ, ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যান অনেকে। এই সুযোগে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী কিছু নারীর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ, গলার চেইন ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃন্দাবন সরকারি ক‌লে‌জের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা গান শুনতে গিয়েছিলাম, ভয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছি।’

কলেজের আরেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ‘আমরা পরিবারসহ অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ভয়ানক অবস্থা হয়। ভিড়ের মধ্যে কয়েকজন আমার গলার চেইন ছিঁড়ে নেয়। আমি চিৎকার করেও কাউকে পাইনি।’

মেয়েদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ছিল না অভিযোগ করে এক শিক্ষার্থী বলেন, যখন দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়, তখন সবাই প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দেন। সে সময় অনেক মেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

চেয়ারের ধাক্কা ও ভিড়ে পিষ্ট হওয়া অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে চি‌কিৎসা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হ‌বিগঞ্জ জেলা হাসপাতা‌লের চিকিৎসকেরা।

এ ঘটনার পর হবিগঞ্জে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। বেশির ভাগ মানুষ বলছেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আনন্দের জায়গা, ভয়ের নয়। তাঁরা ভবিষ্যতে বড় কোনো আয়োজনে যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা, নারী দর্শকদের জন্য পৃথক প্রবেশপথ ও সিসিটিভি মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন।

ফেসবুকে শরীফ আহ‌মেদ না‌মের এক ব‌্যক্তি লি‌খেছেন, এ দায় এড়ানো যায় না। যত বড় আয়োজনই হোক, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে অনুষ্ঠান করে একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প‌রিচয় দি‌য়ে‌ছেন আ‌য়োজকেরা।

সুকোমল রায় না‌মে আরেকজন ফেসবুকে লি‌খেন, জালাল স্টেডিয়ামের কনসার্টে নারীদের প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের এই ঘটনা সামাজিকভাবে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় প্রশাসনের তদন্ত ক‌রে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা উচিত।

আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক শাহ রাজীব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দর্শকদের মাঝখান থেকে একজন বোতল ছুড়ে মারেন মঞ্চের দিকে। সেই বোতল এক দর্শকের ওপর পড়লে এ বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। কোনো নারী হেনস্তার শিকার হননি। এক‌টি পক্ষ অনুষ্ঠা‌নের সফলতা নষ্ট কর‌তে নানা অপপ্রচার চালা‌চ্ছে। বাস্তবতার স‌ঙ্গে যার মিল নেই ব‌লে তি‌নি দা‌বি ক‌রেন।

হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শাহবুদ্দীন শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, আ‌য়োজক‌দের ম‌ধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাঁদের এক‌টি পক্ষ এ অপপ্রচা‌র করছে। নারী‌দের হেনস্তার বিষ‌য়টি সত‌্য নয়। পু‌রো এলাকা পু‌লিশ ঘি‌রে ছিল। মাঠ থে‌কে তাড়াহুড়া ক‌রে বের হ‌তে গি‌য়ে অনে‌কেই আহত হ‌ন। ‌পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখেছে, সামা‌জিক যোগা‌যোগমা‌ধ্যমে যা প্রচার করা হ‌চ্ছে, তা ভুয়া, কোনো সত‌্যতা নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ