ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠক হবে ‘টার্নিং পয়েন্ট’
Published: 11th, June 2025 GMT
চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎ ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি বড় ইভেন্ট। যদি সবকিছু সঠিকভাবে চলে, তাহলে নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।
কয়েক দিন ধরেই আলোচনা চলছে, ড.
বৈঠকের স্থান ও সময়ের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী শুক্রবার লন্ডন সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে বৈঠকটি হবে। লন্ডন সফরকালে তিনি (ইউনূস) যে হোটেলে উঠেছেন, সেখানেই বৈঠকটি হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে বৈঠকটিকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও বৈঠকটির গুরুত্ব অনেক বেশি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বহু আলোচনা চলছে। এর মধ্যে এই বৈঠক হলে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। অনেক কিছু সহজ হয়ে আসতে পারে। নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে, সম্ভাবনাও অনেক। এখন এটি নির্ভর করবে আমাদের নেতাদের (ইউনূস ও তারেক রহমান) ওপর, তারা কীভাবে সেই সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাবেন। আমরা দলের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সম্পূর্ণ অথরিটি দিয়েছি। তাঁর সাফল্য প্রার্থনা করেছি।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডন সফরে ড. ইউনূসের বৈঠকের বিষয়ে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে যোগাযোগও করা হয়। প্রথম দিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকের ব্যাপারে ততটা আগ্রহ ছিল না। তবে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে, সে ভাবনা থেকে দলটি শেষ পর্যন্ত বৈঠকে সম্মতি দেয়।
এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তো বলেছি, আপনি যদি ইলেকশন কালকে করতে পারেন, আমরা কালকেই রেডি। আমরা কোনো বিপ্লবী দল নই, আমরা নির্বাচন করেই জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চাই। যখন সবাই চাইবে, একমত হবে, তখন নির্বাচন হবে, অসুবিধা নেই।
এপ্রিলে নির্বাচন হতে পারে– জামায়াতে ইসলামীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে পরস্পরের ভিন্নমত থাকবে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু তাই বলে একে অপরকে শত্রু, দেশদ্রোহী বা গণতন্ত্রবিরোধী মনে করা যাবে না।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে (এপ্রিলে নির্বাচন) আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিইনি। আশা করছি, সরকার বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এটি বিবেচনা করবে। সময়টা (এপ্রিল) নির্বাচনের জন্য ঠিক নয়। রোজা (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) শেষে ঈদের কয়েক দিন পর নির্বাচন। রোজায় প্রার্থী ও কর্মীদের কী অবস্থা হবে? আমি নিজেই এখন চিন্তিত, প্রতিদিনই আমাকে ইফতার পার্টি করতে হবে। ইটস নো জোক, এটি বিরাট ব্যাপার। প্রার্থীদের ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। আমরা চিৎকার করি– অর্থ ব্যয় কমাতে হবে। কিন্তু ওই সময় নির্বাচন হলে তো ব্যয় বাড়বে। শুধু তাই নয়, ওই সময় প্রচণ্ড গরম থাকবে, ঝড়বৃষ্টি আছে। ফলে দিনের বেলা নির্বাচনী জনসভায় লোকজন আনাই মুশকিল হবে। রোদের মধ্যে কে আসবে? রাতে মিটিংগুলো করতে হবে। এ দেশে বেশির ভাগ নির্বাচন নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে হয়েছে। দু’বার বোধ হয় হয়েছে ভিন্ন সময়ে, দুই ইলেকশনই ঝামেলা ছিল।
তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনটা বেশি প্রয়োজন। অনেকে আবার আমাকে ভুল বুঝবেন, সংস্কার চাই না, নির্বাচন চাই। এই যে আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ও অপপ্রচার, এর কোনো যুক্তি নেই। আমরা তো বহু আগেই সংস্কারের কথা বলেছি। ব্যবস্থার পরিবর্তনে খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ দিয়েছেন। আমরা ২৭ দফা দিয়েছিলাম। সব শেষে যুগপৎ আন্দোলনের রাজনৈতিক শরিকদের সঙ্গে কথা বলে ৩১ দফা দিয়েছি।
নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী নন বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। শরিকদের আসন ছাড়-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি তো সংসদীয় রাজনীতিতে খুবই স্বাভাবিক। এটিই হওয়া উচিত। আমরা আগে থেকে কমিটেড, নির্বাচনের পর আমরা একটি জাতীয় সরকার করব।
জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকেও সমঝোতায় আসন দেওয়া হবে– রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন আলোচনার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে রাজনীতি ও সংসদীয় গণতন্ত্রে শেষ কথা বলতে কিছু নেই।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে কিনা– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তো নেই। জাতীয় পার্টির বিষয়ে বিএনপির কী অবস্থান– এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে দলগুলোর কথা বলছেন, সেগুলোর সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিরোধ বিএনপির। আওয়ামী লীগ আমলে অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন ও ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী বিএনপি। একইভাবে জাতীয় পার্টির কাছেও আমরা ৯ বছর নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছি। আমরা তো একমত হয়েছি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে। আমরা বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রকে গণতন্ত্রের মতো চলতে দেওয়া উচিত।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারেক রহমান নিশ্চয়ই দেশে ফিরবেন, শিগগির ফিরবেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি আগের চেয়ে শারীরিক দিক থেকে বেশ ভালো বলে মনে হয়। ডাক্তাররাও তাই বলেছেন।
এদিকে, ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের বিষয়ে গতকাল লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৩ জুন অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা নেই। তারেক রহমান এ মুহূর্তে বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলের নেতা এবং ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। উনারা যখন বসবেন, তখন দেশের যে কোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচনায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন, জুলাই চার্টার (জুলাই সনদ) এগুলোর যে কোনো বিষয়ে আলাপ হতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ইউন স ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন র গণতন ত র র জন ত ক ব এনপ র ন র জন ব ঠকট ইউন স সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব