মদিনার মসজিদে নববির ছায়ায় একটি তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। ভেতরে রুফায়দা আল-আসলামিয়া (রা.) একজন আহত সাহাবির বাহু থেকে তির বের করছেন। এই তাঁবু ইসলামি ইতিহাসের প্রথম মোবাইল হাসপাতাল, শুধু চিকিৎসার স্থান নয়, বরং মুসলিম নারীদের সাহস ও দক্ষতার প্রতীক।
আধুনিক সময়ে অনেকে মনে করেন, ইসলামি ইতিহাসে নারীদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে তেমন অবদান নেই, কিন্তু এই ধারণা সত্য নয়। মুসলিম নারীরা চিকিৎসা, নার্সিং, ওষুধ তৈরি, এমনকি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এই প্রবন্ধে আমরা ইসলামি ইতিহাসে মুসলিম নারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ধর্মীয় ভিত্তি, তাদের বিশেষায়িত ভূমিকা এবং সমাজে তাদের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।
রুফায়দা আল-আসলামিয়া (রা.) তাঁর পিতা সাদ আল-আসলামির কাছ থেকে চিকিৎসা শিখে বদর ও খন্দকের যুদ্ধে আহতদের সেবা করেন। তাঁর তাঁবু ছিল ইসলামি ইতিহাসের প্রথম মোবাইল হাসপাতাল।
ধর্মীয় ভিত্তি: চিকিৎসার প্রতি ইসলামের গুরুত্ব
ইসলাম চিকিৎসাকে বিশেষ মর্যাদা দেয়। কোরআন বলে, ‘যখন আমি অসুস্থ হই, তিনিই আমাকে সুস্থ করেন।’ (সুরা শুয়ারা, আয়াত: ৮০)
নবীজি (সা.) চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা, চিকিৎসা গ্রহণ করো। কারণ, আল্লাহ যে রোগ দিয়েছেন, তার চিকিৎসাও দিয়েছেন, একটি রোগ ছাড়া।’ সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সেটি কী?’ তিনি বললেন, ‘বার্ধক্য।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৫৫)
এই শিক্ষা মুসলিমদের রোগের চিকিৎসা ও ওষুধের জ্ঞান অনুসন্ধানে উৎসাহিত করেছে।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে সমালোচনা মোকাবেলা করতেন০৯ মে ২০২৫প্রথম যুগের নারীরা বাবার থেকে চিকিৎসাবিদ্যা শিখতেনউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন
তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের।
দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত।
আরো পড়ুন:
রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন
টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়
প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।
তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।
গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে।
সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে।
২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে
ঢাকা/লিপি