জাতীয় স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটের আলো তখন নিভে গেছে। খালি গ্যালারি, প্রায় শূন্য প্রেসবক্স। স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করছে ২-১ গোলে পরাজয়ের আক্ষেপ।

সেই পরাজয়ের ভার নিয়েই রাত ১০টার দিকে বাংলাদেশ দল ফিরে যায় শাহবাগের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। সিঙ্গাপুর ম্যাচ ঘিরে যতটা উন্মাদনা, শেষবেলায় ততটাই হতাশা। ম্যাচটা যদি অন্তত ড্র হতো, কিছুটা সান্ত্বনা মিলত, কিন্তু তা-ও হলো না।

হোটেলেও যেন ছিল স্টেডিয়ামের নিঃশব্দতা। পরিবেশটা যেন এক ভাঙা হাঁট। কেউ কথা বলছেন না, কেউ চুপচাপ ফোনে তাকিয়ে, কেউবা লাগেজ টেনে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। একটা লড়াইয়ের শেষ, এখন তো স্যুটকেস গুটিয়ে বাড়ি ফেরার পালা।

রাত ১১টায় বাংলাদেশ দলের হোটেলে ঢুকে প্রথমেই দেখা ডিফেন্ডার ঈসা ফয়সালের সঙ্গে। ভুটান ও সিঙ্গাপুর—কোনো ম্যাচেই মাঠে নামা হয়নি তাঁর। অনেকেই ভেবেছিলেন সিঙ্গাপুর ম্যাচে রাইট ব্যাক তাজ উদ্দিনের বদলে দেখা যাবে ঈসাকে। কোচ হাভিয়ের কাবরেরা আস্থা রেখেছেন শাকিল তপুর ওপর। হোটেল ছাড়ার মুখে ঈসার মুখে বিষাদের ছায়া, বললেন, ‘হারের পর আসলে কিছু বলার থাকে না। প্রথমার্ধটা আমাদের অত ভালো হয়নি, তবে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম।’

এরপর একে একে লবিতে নামলেন ইব্রাহিম, সুমন রেজা, ফাহিম। সবাই লাগেজ হাতে। বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে সবাইকে হোটেল ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আগেই।
এক ফাঁকে দেখা গেল বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল, সহসভাপতি ফাহাদ করিমসহ কর্মকর্তাদেরও হোটেল ত্যাগ করতে। তাঁরা ফুটবলারদের পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন। এই হারে ভেঙে পড়ার কিছু নেই, এমনটাই সভাপতি বলেছেন ফুটবলারদের।

আরও পড়ুনরাঙানো গেল না ‘বাঁকবদলের’ উপলক্ষ১২ ঘণ্টা আগে

হামজা চৌধুরী ও শমিত সোম আজ সকাল পৌনে সাতটায় ঢাকা ছেড়েছেন। টার্কিশ এয়ারলাইনসের একই ফ্লাইটে উঠেছেন দুজন। হামজার গন্তব্য ইংল্যান্ড, শমিতের কানাডা। সিঙ্গাপুর ম্যাচে অভিষিক্ত শমিত দারুণ খেলেছেন। দল হারলেও নিজেকে মেলে ধরার তৃপ্তি নিয়ে ভোর চারটার দিকে হামজার সঙ্গে হোটেল ত্যাগ করেন তিনি। হামজার বাবা-মাও আজ ঢাকা ছাড়বেন অন্য একটি ফ্লাইটে।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে হোটেলের লবিতে দেখা গেল টিম ম্যানেজার আমের খানকে। বললেন, ‘হামজা ও শমিতের জন্য পুলিশ কর্ডন নিশ্চিত করেছি। কারণ, ওদের তো একা ছাড়া যাবে না।’

অভিষেক ম্যাচ খেলার পর ভোরেই ঢাকা ছেড়েছেন শমিত সোম।.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী

আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।

রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ