যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ধরপাকড়ের প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভের পঞ্চম দিনে পুলিশ গণগ্রেপ্তার চালিয়েছে। সেই সঙ্গে শহরের কেন্দ্রে একটি এলাকায় নৈশকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভাঙচুর এড়াতে শহরের মেয়র কারেন ব্যাস এ সিদ্ধান্ত নেন। এ অবস্থায় শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। হেলিকপ্টারে টহল দিচ্ছে পুলিশ। তবে এসবের মধ্যেই স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে লস অ্যাঞ্জেলেসে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদে এসব বিক্ষোভ ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রাখার বার্তা দিয়ে বলেছেন, তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস শহরকে ‘মুক্ত’ করতে চান। এরই মধ্যে শহরটিতে সেনা মোতায়েন নিয়ে মেয়র কারেন ব্যাস ও গভর্নর গাভিন নিউসমের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন ট্রাম্প। গতকাল বুধবার বিবিসি জানায়, নিউসম ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘গণতন্ত্রের অবমাননা’ ও ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ বলে বর্ণনা করেছেন।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, শহরটিতে ৪ হাজার ন্যাশনাল গার্ডের সেনা ও ৭০০ মেরিন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত সঠিক। এটা তিনি করেছেন ‘বিদেশি শত্রুর হাতে’ শহর যাতে দখল না হয় সেজন্য। লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ বলছে, শহরটিতে এখনও বেশি কয়েকটি গ্রুপ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি এলাকায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট ছোড়ে। বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়নি। তবে মেয়র কারেন ব্যাস বলেছেন, কেবল মঙ্গলবারেই প্রায় ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগের দিন গ্রেপ্তার হন আরও কয়েক ডজন। 

লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি প্রসঙ্গে মেয়র কারেন ব্যাস বলেন, তিনি লুট ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে চান। বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠা এক কিলোমিটার এলাকায় এ কারফিউ বলবৎ থাকবে।  স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ কারফিউ বলবৎ থাকে। মেয়র জানান, সোমবার রাতে শহরের ২৩টি দোকানে লুট হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রে নথিপত্রহীনদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণা চালান ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে অনুযায়ী ক্ষমতায় গিয়ে অভিবাসনবিরোধী নানা পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেন। শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড়। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভকারীরা মূলত এ ধরপাকড়েরই বিরোধিতা করছেন। ডেমোক্র্যাটশাসিত অঙ্গরাজ্যটির বিক্ষোভ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। 

জর্জিয়ার আটলান্টায় শত শত মানুষ ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। সেখানে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। বিক্ষোভ হয়েছে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে। সেখানে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসেন। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সম্ভাব্য বিক্ষোভ মিছিলের আগাম খবর পেয়ে টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট ন্যাশনাল গার্ডের সেনাদের অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করেছেন। সেই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি বা কারও সম্পত্তির ক্ষতি করা হলে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে।

বিক্ষোভ হয়েছে শিকাগোতেও। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, শিকাগোর অভিবাসন আদালতের বাইরে লোকজন জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তবে সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের খবর মেলেনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র লস অ য ঞ জ ল স য ক তর ষ ট র এল ক য় কর ছ ন শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্রোহীদের গুলিতে জান্তার যুদ্ধবিমান ভূপাতিত

মিয়ানমারে জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির সাগাইং অঞ্চলের পালেতে জান্তা বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। কান ডাক পুলিশ ফাঁড়ির কাছে বোমা হামলার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে  বিমানটি কাছাকাছি একটি গ্রামের বৌদ্ধ মঠে বিধ্বস্ত হয়। ধ্বংসস্তূপ থেকে এক পাইলটের হেলমেট ও খুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।

এদিকে দেশটির উত্তর শান রাজ্যের নওংকিও শহর ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। শহরটি বর্তমানে জাতিগত ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জান্তা সেনারা এটি দখলের জন্য সামনে এগিয়ে আসছে। ম্যান্ডালে-লাশিও-মুসে বাণিজ্যপথে অবস্থিত এই শহরটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরের জুলাইয়ে টিএনএলএ শহরটি দখলের পর সেনা সরকার এটি পুনর্দখলের জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। লড়াই তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কায় শহর ও এর আশপাশের এলাকা থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা।

চীনের চাপের মুখে সম্প্রতি দেশটির কুনমিং শহরে বৈঠক করেছে জান্তা সরকার ও টিএনএলএর বিদ্রোহীরা। আগস্টে আবার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে নতুন করে হামলা জোরদার করেছে জান্তা বাহিনী।

চলমান এ অস্থিরতার মধ্যেই আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে জান্তা সরকার। তারা বলছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ২৬৭টি টাউনশিপে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। মিয়ানমারের প্রবাসী সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ বলছে, দেশের প্রায় ১৪৪টি টাউনশিপ বর্তমানে প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সরাসরি সংঘর্ষ চলছে ৭৯টি এলাকায়। তবে এই নির্বাচনে সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও কয়েকটি ছোট দল ছাড়া বড় কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না। 

এশিয়ার আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি মালয়েশিয়া জান্তা সরকারকে নির্বাচন বন্ধ করে সহিংসতা থামানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য মিত্র দেশগুলো তার নির্বাচনকে সমর্থন দিচ্ছে বলে দাবি করেছেন মিন অং হ্লাইং।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরাক-সিরিয়ার চেয়ে বেশি মার্কিন সেনা এখন লস অ্যাঞ্জেলেসে
  • ভাঙচুর–লুটপাট ঠেকাতে লস অ্যাঞ্জেলেসে আংশিক কারফিউ জারি
  • বিদ্রোহীদের গুলিতে জান্তার যুদ্ধবিমান ভূপাতিত