বিতর্কিত কেন্দ্রে ত্রাণের আশায় গিয়ে প্রাণ গেল আরও ৪০ ফিলিস্তিনির
Published: 12th, June 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় দুটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৪০ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ২০০ জন। দুটি ত্রাণকেন্দ্রই পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)। এ নিয়ে বিতর্কিত সংস্থাটির ত্রাণ নিতে গিয়ে দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার জরুরি পরিষেবা বিভাগ ‘সিভিল ডিফেন্সের’ বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। এতে ৩১ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় ২০০ জন। মধ্য গাজার ‘নেতজারিম করিডর’ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘আমেরিকান সাহায্য কেন্দ্র থেকে খাবার নিতে যাওয়ার সময় কয়েক হাজার নাগরিকের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী ট্যাংক ও ড্রোন হামলা চালায়। এ ঘটনায় আমরা শহীদ অন্তত ৩১ জনের মরদেহ এবং প্রায় ২০০ জন আহতকে উদ্ধার করেছি।’
মাহমুদ বাসাল বলেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত খাবার বিতরণকেন্দ্রের কাছে জড়ো হতে শুরু করেন কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি। কয়েক দফা ইসরায়েলি ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়। একপর্যায়ে ভোর সাড়ে পাঁচ গোলাবর্ষণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে ড্রোন ব্যবহার করেও বেসামরিক লোকজনের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়।
এ ছাড়া গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা এলাকায় ত্রাণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে আল–জাজিরা জানিয়েছে। নাসের হাসপাতালের বরাত দিয়ে এ কথা জানানো হয়।
গুলিবর্ষণে কথা স্বীকার করে বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে একটি বিবৃতি দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এতে বলা হয়, নেতজারিম করিডর এলাকায় রাতে সেনারা ‘সতর্কতামূলক গুলি’ চালিয়েছে।
মার্কিন দূতের বিতর্কিত প্রস্তাব
ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে বিতর্কিত প্রস্তাব দিয়েছেন ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে মুসলিম দেশগুলোর নিজেদের কিছু ভূমি ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মুসলিম দেশগুলোর কাছে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত ভূমির চেয়ে ৬৪৪ গুণ বেশি জমি রয়েছে।
কট্টর ইহুদিবাদী কূটনীতিক হাকাবি আগে থেকেই ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ধারণার প্রবল সমর্থক। তিনি অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলেরস্থায়ী কর্তৃত্ব চান এবং পশ্চিম তীরকে বর্ণনা করতে বাইবেলের ‘জুদিয়া ও সামারিয়া’ শব্দযুগল ব্যবহার করেন।
এই মার্কিন কূটনীতিকের কিছু বক্তব্য ইসরায়েলের কিছু গোষ্ঠীগুলোর মতোই যারা দাবি করে, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে আরব বা মুসলিম দেশগুলোয় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ব তর ক ত ইসর য় ল সমর থ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ত্রাণ বিতরণে ইসরায়েলের ওপরই ভরসা ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, গাজায় খাবার বিতরণকেন্দ্রগুলো ইসরায়েলই পরিচালনা করবে। গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন।
সমালোচকেরা বলছেন, এমন পদক্ষেপ নেওয়া হলে গাজায় ইসরায়েলি দখলদারি আরও দৃঢ় হবে ও ত্রাণপ্রত্যাশীদের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হবে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গাজায় বিতরণ করা খাদ্যসহায়তা চুরি করে বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে ইসরায়েল। গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প এ অভিযোগকেই নতুন করে সামনে আনেন। বলেন, হামাস গাজায় বিতরণ করা খাদ্যসহায়তা চুরি করে।
তবে বিভিন্ন মানবিক সহায়তা সংস্থা ও জাতিসংঘ কর্মকর্তারা আগেই ইসরায়েলের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এমনকি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ইসরায়েলি কর্মকর্তাও নিউইয়র্ক টাইমসের মতো সংবাদমাধ্যমগুলোকে বলেছেন, খাদ্যসহায়তা হামাসের কাছে পৌঁছাচ্ছে বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কোথায় ও কখন এ কেন্দ্রগুলো তৈরি হবে, সেটা নিশ্চিত নয়। ইসরায়েল সেগুলো সরাসরি চালাবে, নাকি জিএইচএফ নামের ত্রাণ সংস্থার মাধ্যমে পরিচালনা করবে, তা–ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত বিতর্কিত সংস্থা জিএইচএফের বিরুদ্ধে গাজায় অনিরাপদ কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ আছে।গতকাল এয়ারফোর্স ওয়ানে বসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, অনেক কিছুই চুরি হয়ে গেছে। তারা টাকা পাঠায়, খাবার পাঠায়। আর হামাস সেগুলো চুরি করে। এ এক ছলচাতুরীর খেলা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ বিতরণকে ইসরায়েল যেভাবে সামলাচ্ছে, সে ব্যাপারে তিনি আস্থা রাখেন। যদিও এ কার্যক্রম এতটা বিশৃঙ্খল যে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছেন ইসরায়েলি সেনারা।
আরও পড়ুনগাজায় কেউ না খেয়ে নেই—দাবি নেতানিয়াহুর, দ্বিমত ট্রাম্পের১৮ ঘণ্টা আগেট্রাম্প বলেন, ‘আমরা (নতুন বিতরণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায়) ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করতে চলেছি। আমরা বিশ্বাস করি, তারা এটাকে ভালোভাবে সামাল দেবে। তারা খাবার বিতরণকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করতে চায়, যেন খাবার যথাযথভাবে বিতরণ হয়।’
আমরা (নতুন বিতরণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায়) ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করতে চলেছি। আমরা বিশ্বাস করি, তারা এটাকে ভালোভাবে সামাল দেবে। তারা খাবার বিতরণকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করতে চায়, যেন খাবার যথাযথভাবে বিতরণ হয়।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টকোথায় ও কখন এসব কেন্দ্র তৈরি হবে, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইসরায়েল সেগুলো সরাসরি চালাবে, নাকি জিএইচএফ নামের বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থার মাধ্যমে পরিচালনা করবে, তা–ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত জিএইচএফের বিরুদ্ধে গাজায় অনিরাপদ কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ আছে।
ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, গাজায় জাতিসংঘ ও তাদের সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে আবারও ত্রাণসহায়তা বিতরণ শুরু করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো প্রস্তুত নয়।
আরও পড়ুনগাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: বলছে ইসরায়েলভিত্তিক দুই মানবাধিকার সংস্থা২৮ জুলাই ২০২৫ইসরায়েল গত মে মাস থেকে গাজায় অবরোধ আরও কঠোর করেছে। এখন সেখানে শুধু জিএইচএফের মাধ্যমে কিছু খাদ্য ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে সংস্থাটির চারটি বিতরণকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতে বা সেখান থেকে বের হতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কয়েক শ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর মরিচের গুঁড়া ছুড়লেন ইসরায়েলি সেনারা২১ জুলাই ২০২৫এ অবরোধের কারণে গাজায় ইসরায়েল আরোপিত নজিরবিহীন খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে। ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ইতিমধ্যে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সমালোচকেরা বলছেন, খাবার বিতরণের কাজ ইসরায়েলি সেনাদের হাতে দিলে ত্রাণপ্রত্যাশীরা আরও বেশি করে নৃশংসতার শিকার হতে পারেন।
ইসরায়েল গত মে মাস থেকে গাজায় অবরোধ আরও কঠোর করেছে। এখন সেখানে শুধু জিএইচএফের মাধ্যমে কিছু খাদ্য ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে সংস্থাটির চারটি বিতরণকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতে বা সেখান থেকে বের হতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কয়েক শ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।ইসরায়েল দাবি করছে, গাজায় আসলে কোনো অনাহার বা দুর্ভিক্ষ নেই। এসব কথা হামাসের মিথ্যা প্রচারণা। অথচ বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সেখানে মানুষ না খেয়ে আছে। গাজার কঙ্কালসার শিশুদের ছবিও এখন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে।
গত সোমবার ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে গাজায় সত্যিই মানুষ না খেয়ে আছেন। তবে তিনি ইসরায়েলের কোনো সমালোচনা করেননি। বরং মঙ্গলবার তিনি আবারও বলেন, খাবার দেওয়ার দায়িত্ব ইসরায়েলের হাতেই থাকা উচিত।
আরও পড়ুনগাজায় অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ১ লাখ শিশু: ‘৯ মাসে একটিও ডিম খাইনি’২৭ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনইসরায়েল যেসব শর্ত না মানলে সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য১০ ঘণ্টা আগে