ইরাক-সিরিয়ার চেয়ে বেশি মার্কিন সেনা এখন লস অ্যাঞ্জেলেসে
Published: 12th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে সহিংস বিক্ষোভের জেরে শহরটিতে এখন ইরাক ও সিরিয়ার চেয়ে বেশি মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছেন।
মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি নিউজের বরাতে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে বর্তমানে ৪ হাজার ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সদস্য মোতায়েন আছেন। অন্যদিকে ইরাক ও সিরিয়ায় মোতায়েন রয়েছেন যথাক্রমে আড়াই ও দেড় হাজার মার্কিন সেনা।
এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস। তিনি বলেন, ‘খবরে জানা গেছে, মোতায়েনের জন্য নির্ধারিত সেনাসংখ্যা বর্তমানে ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনাসংখ্যার চেয়ে বেশি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর জন্য খরচ হচ্ছে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার। অথচ এই বিপুল অর্থ আমাদের দেশের শহরগুলো ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারত।’
গতকাল বুধবার ‘টাস্ক ফোর্স ৫১’-এর কমান্ডার মেজর জেনারেল স্কট শারম্যান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, লস অ্যাঞ্জেলেসে মোতায়েন সেনাদের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করার আগপর্যন্ত তাঁরা লোকজনকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন। টানা ছয় দিন ধরে চলা বিক্ষোভে উত্তাল শহরটিতে আরও কয়েক শ মেরিন সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযানের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরেও। আগামী শনিবার সারা দেশে শতাধিক স্থানে কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
মেজর জেনারেল স্কট শারম্যান বলেন, অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ন্যাশনাল গার্ডের সেনারা কিছু বিক্ষোভকারীকে সাময়িকভাবে আটক করেছেন। পরে দ্রুতই তাঁদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
৪ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড ও ৭০০ মেরিন সেনার সমন্বয়ে গঠিত ‘টাস্ক ফোর্স ৫১’–এর এই কমান্ডার এপিকে আরও বলেন, প্রায় ৫০০ গার্ড সেনাকে অভিবাসনবিরোধী অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে ন্যাশনাল গার্ড সেনারা আইসিই কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন—ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত কয়েকটি ছবিতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
সেনাবাহিনীর সরবরাহ করা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে এক ব্যক্তিকে আটক করছেন পুলিশ সদস্যরা। ১০ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ ল স
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।
শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।
পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।
শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।