Prothomalo:
2025-08-01@04:48:48 GMT

আমাদের পরিচয়ের সন্ধানে

Published: 13th, June 2025 GMT

‘বাঙালের’ পরিচয়-সূত্র যাঁরাই খোঁজ করেছেন, আজ অবধি তাঁদের কেউই সম্ভবত ইতিবাচক কিছু বলেননি বললেই চলে। কিন্তু কোনো জাতি সম্পর্কে একই জাতির মানুষ কিংবা বাইরের মানুষ যতই খারাপ কথা বলুন না কেন, জাতির স্বতন্ত্র অবস্থান তো আর বদলে ফেলা কিংবা বাতিল করে দেওয়া যায় না। বরং ভালো-মন্দ মিলিয়ে জাতির একটি পরিচয় নির্মিত হয়। সিরাজ সালেকীনের ভাটির দেশের বাঙাল এমনই একটি গ্রন্থ, যেখানে বাঙালির পরিচয়-সূত্র সম্পর্কে একটি বিচার-বিশ্লেষণমূলক ধারণা উপস্থাপন করা হয়েছে।

আকারে ক্ষীণকায় হলেও চিন্তাচর্চার ক্ষেত্রে এই গ্রন্থের ভার বিপুলই বলতে হবে। বাঙাল বা আরেকটু বাড়িয়ে বাঙালি সম্পর্কে যেকোনো প্রচলিত-প্রথাগত ধারণার বাইরে পাঠককে একটি স্পষ্ট ও চিন্তা–যুক্তিমূলক ভাবনার খোরাক জোগাবে এ বই।

ইংল্যান্ড যেভাবে একটি রাষ্ট্র এবং ইংরেজ যেভাবে একটি জাতি হয়ে উঠেছে—সেখানে নজর দিলে দেখা যাবে, ক্রমাগত বিচিত্র বিষয়চর্চার ভেতর দিয়ে ইংল্যান্ডের বর্বর গোষ্ঠীগুলোই একত্র হয়ে এ সময়কার আধুনিক ইংল্যান্ড রাষ্ট্রটি তৈরি করেছে। ইউরোপের অনেক আধুনিক-উন্নত রাষ্ট্র সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। কিন্তু জাতিরাষ্ট্র নির্মাণে তাদের পূর্বের ইতিহাস-ধারণাকে তারা খারিজ করে দেয়নি নিশ্চয়। বরং সেই ধারণাচর্চার ভেতর দিয়েই নতুন জাতি নির্মাণে ভূমিকা পালন করেছে। ভাটির দেশের বাঙাল গ্রন্থটি পাঠে পাঠক নিশ্চয় এ বোধটি সহজে উপলব্ধি করতে পারবেন।

গ্রন্থের প্রথমাংশ ‘গাবর-বাঙাল’ অংশে পূর্ব বাংলা সম্পর্কে পুরোনো যে ধারণা, সেসব নানা বইপত্র ঘেঁটে লেখক আমাদের সামনে হাজির করেছেন। দেখিয়েছেন, একটি অঞ্চল সম্পর্কে আরেকটি অঞ্চলের জ্ঞানচর্চার ক্ষমতা-আধিপত্য কীভাবে মাঝেমধ্যে খুব নিচু ধারণা পোষণ করে। বিষয়টি দৈহিকভাবে লাঞ্ছনা কিংবা নির্যাতনের বিষয় না হলেও মানসিক দিক বিবেচনায় তা গুরুতর নির্যাতনের সমান।

ভাটির দেশের বাঙাল—শিরোনাম দেখেই অনুমান করা যায়, এর গায়ে একার্থে নিন্দামূলক শব্দের গন্ধ লেগে আছে। স্বতন্ত্র আবহাওয়া, জলা-জঙ্গল আর বৃহৎ বদ্বীপের নদীমেখলা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য—সব মিলিয়ে ভাটির দেশ হিসেবে পূর্ব বাংলাকে ভিন্ন একটি অবস্থানে রেখেছিল সব সময়। তাই এ বাস্তবতার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করা মানুষের সমাজও নিশ্চয় অন্য রকম হবে! গ্রন্থে এসব বিষয় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে এনেছেন লেখক। তবে পূর্ব বাংলা সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থে যেসব বিষয় উঠে এসেছে তা আবার সামগ্রিকভাবে একেবারে মিথ্যাও নয়, তা–ও জানিয়ে রাখতে ভোলেনি তিনি। কিছু সত্য তো আছেই। এই অঞ্চলের স্বতন্ত্র ভূগোল-আবহাওয়া নৃতাত্ত্বিকভাবে এখানকার মানুষকে যে আচরণগত বৈশিষ্ট্য দান করেছে, তা নানা কারণে জাতিরাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সমস্যা নির্ধারণ না করতে পারলে তো সমাধান ব্যাপারটি আর সম্ভব হয় না। লেখক এ ধারণা প্রকাশেও সমর্থ হয়েছেন।

প্রাচীন ও মধ্যযুগে প্রান্তিক পূর্ব বাংলা সম্পর্কে কেন্দ্রের যে ধারণা ছিল, তা কি ইংরেজ আমলে বদলে গিয়েছিল? এর সরাসরি উত্তর হবে, না। বরং শাসনব্যবস্থা ও ক্ষমতাকাঠামোগত দিক থেকে পূর্ব বাংলা আরও বেশি শৃঙ্খলিত হয়ে পড়েছিল। এই যে কেন্দ্র বাঙালদের অন্য চোখে দেখছে, ইংরেজ আমলে, তা কি কেবল ইংরেজরাই দেখেছে? না, কলকাতার লোকজনও মেট্রোপলিটন মান-নির্মাণের মাধ্যমে এ কাজ করেছে।

লেখক এসব বিষয় নানান স্মৃতিমূলক লেখাপত্রের বরাতে বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে হাজির করেছেন। সচেতন পাঠকমাত্রই বিষয়টি বুঝতে পারবেন নিশ্চয়। ওপরের আলোচনাটি করলাম গ্রন্থটির দ্বিতীয়াংশ ‘কলকাতার চিত্ত’ ধরে।

আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থান বিবেচনায় বাংলা সব সময়ই অপর হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই অপরায়ণের রাজনীতি শুধু এ অঞ্চলের ক্ষমতা-ধারণাকেই প্রভাবিত করেনি, একই সঙ্গে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি বর্গকে প্রভাবিত করেছে। গ্রন্থের প্রথম দুটি অধ্যায় বা অংশ পাঠ করলে এ ধারণাই স্পষ্ট হয়।

গ্রন্থটির পরিশিষ্ট অংশও আকর্ষণীয়। এই অংশের লৌকিক প্রবাদ-প্রবচন আর নানা উক্তির একটি দারুণ সংকলন চোখে পড়ার মতো, কাজের তো বটেই। এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-সমাজ সম্পর্কে কৌতূহল জাগলে তা নিবারণের একটি ভালো দাওয়াই দিয়ে রেখেছেন লেখক গ্রন্থপঞ্জিতে। তবে পাঠক নিশ্চয় লেখকের কাছে এই আশা করতে পারেন, গ্রন্থটি আরও বিস্তৃত আকারে নতুন সংস্করণে বাজারে আসবে। আরেকটু হলেও নিবৃত্ত হবে তাঁদের কৌতূহল।

কেবল কোনো একটি নির্দিষ্ট জ্ঞানতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে না গিয়ে লেখক বরং বিচিত্রমুখী হয়েছেন। ঐতিহাসিক, সমাজতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক—প্রধানত এ তিনটি জ্ঞানতাত্ত্বিক ধারাপ্রবাহ এই গ্রন্থ রচনায় কার্যকর থেকেছে। বঙ্গ-পূর্ব বাংলা-পূর্ব পাকিস্তান-বাংলাদেশ—এই ঐতিহাসিক অভিযাত্রায় বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এবং ‘বাঙাল’দের ঐতিহাসিক-পরিচয় নির্মাণ পাঠে এই গ্রন্থকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া তাই কঠিনই বটে।

ভাটির দেশের বাঙাল

লেখক: সিরাজ সালেকীন

প্রকাশক: কথাপ্রকাশ

প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২২

মূল্য: ৩০০ টাকা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ রন থ র প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।

ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।

অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।

ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ