শুধুই নির্বাচন নাকি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন?
Published: 13th, June 2025 GMT
গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয়। এবার বহু ত্যাগের বিনিময়ে একটা সুযোগ এসেছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের। বাংলাদেশে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ছাড়া সব কটি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের মতো নির্বাচন যেকোনো সময়েই অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব।
কিন্তু যেনতেন একটা নির্বাচন করলে কি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে?আবার একটা যেনতেন নির্বাচন করা হলে তা ‘জুলাই ২০২৪’ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। ১৯৯০ সালের তিন জোটের রূপরেখা ভেঙে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছিল পতিত সরকার। তারপর যে নির্বাচন করেছে, তা শেষ পর্যন্ত তাদের নির্লজ্জভাবে বিদায় নিতে বাধ্য করেছে।
এখন প্রশ্ন হলো, বর্তমানে কি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অনুকূল পরিস্থিতি আদৌ আছে? জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে ৪৫ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর প্রহরার ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্র সক্ষম কি না? গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে মানসিক অবস্থা, তাতে নির্বাচনের মতো একটি মহাযজ্ঞ সামাল দেওয়া তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তার মানে কি নির্বাচন হবে না? অবশ্যই হতে হবে; বরং একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও পুলিশ বাহিনীর বর্তমান সক্ষমতা বিবেচনায় না এনে নির্বাচন আয়োজন হবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাতে জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাবে। আর তা হলে সাধারণ জনগণের ভোটদান থেকে বিরত থাকার আশঙ্কা থেকে যাবে। এ অবস্থা কারোই কাম্য হতে পারে না। সে পরিস্থিতি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেই সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে কোনো ব্যতিক্রম হলে এর দায়ভার কে নেবে? তা নিতে হবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকেই। জনগণও এ পরিস্থিতি মনে রাখবে এবং সময়-সুযোগ এলে জবাবও দেবে। ১৯৯০ সালে সামরিক সরকার এরশাদের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্র’ উত্তরণের কালপর্ব হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিরপেক্ষ কোনো সরকারের অধীন ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
আরও পড়ুনপরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কতটা প্রস্তুত১১ জুন ২০২৫একটি গণজাগরণের পর যে নির্বাচন, তার ফলাফল অনেক সময় চমকপ্রদ হতে পারে, যেমন ১৯৯১ সালের নির্বাচন। সেই সময় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বিএনপি বড়জোর ১০টি আসন পেতে পারে। কিন্তু ফলাফল হলো, বিএনপি ১৪০টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করল। এর পেছনে কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ ছিল।
আশির দশকে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী, তাঁর নেতৃত্ব ছিল আপসহীন ও বলিষ্ঠ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসগুলোয় ছাত্রদলের তখন ছিল হিরোইক ইমেজ। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, সততা ইত্যাদি জনমনে একটি স্থায়ী প্রভাব তত দিনে দৃঢ় হয়েছে।
১৯৭২-৭৫ সময়ে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতা ও অরাজকতা মানুষ ভোলেনি। নির্বাচনে তা প্রভাব রেখেছিল। আবার উল্টো দিকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব পর্যায়ে অবাস্তব ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস তাদের মধ্যে শৈথিল্য এনেছিল। আর সক্রিয় কর্মীর উপস্থিতি মানেই যে তা সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা না-ও হতে পারে।
জনমনে এ ধারণা প্রবল যে বিএনপি আওয়ামী লীগের ব্যাপারে নমনীয়। আর একই নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা আছে, যা একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এসব চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে সামনের নির্বাচন মানেই বিএনপির জয়, বিষয়টি এত সরল না-ও হতে পারে।১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগের দিনও কেউ কল্পনা করেননি যে শেখ হাসিনা ঢাকা-১০ (রমনা-তেজগাঁও) আসনে মেজর মান্নানের কাছে এবং ঢাকা-৭ (কোতোয়ালি-সূত্রাপুর) আসনে সাদেক হোসেন খোকার কাছে পরাজিত হবেন। কিন্তু জনগণ তাঁদের নীরব রায় দিয়েছেন। আপাতদৃষ্টে দৃশ্যমান অধিকতর আওয়ামী লীগের সমর্থক থাকার পরও হয়েছে নীরব ভোটবিপ্লব।
২০০১ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত দেশে কোনো নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন হয়নি। ভোটাররাও তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। ২০০১ সালে যাঁদের বয়স ছিল ১৮ বছর, তাঁদের বয়স আজ ৪৩ বছর। ২০২৫ সালে কনিষ্ঠ ভোটারদের জন্মবর্ষ ছিল ২০০৭ সাল। এর মানে হচ্ছে ১৮ থেকে ৪৩ (জন্মবছর বয়স পর্যন্ত) যাঁদের বয়স, তাঁরা প্রথমবারের মতো একটি অবাধ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন।
১৯৮৩ থেকে ২০০৭ সাল, এই সময়ে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের ভোট সরল সমীকরণে বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ভাগাভাগি করলে তা তাত্ত্বিকভাবে ঠিক হবে, কিন্তু বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন হতে পারে।
১৮ থেকে ৪৩ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ৬৪ শতাংশের বেশি। সুষ্ঠু ভোট হলে এই ৬৪ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি ও তুলনামূলক বেশি হবে। ৪৩ বছরের বেশি বয়স্ক ভোটারের সংখ্যা মাত্র ৩৫ শতাংশ। তাঁরা অনেকটা স্থায়ী মতাদর্শের মানুষ। কিন্তু নির্বাচনে কারা জিতে আসবেন, তা নির্ভর করবে ১৮ থেকে ৪৩ বছর বয়সী ভোটারদের ওপর। এসব ভোটার আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের চিত্র সরাসরি দেখেছেন। অধিকন্তু আওয়ামী লীগের দলীয় রেজিস্ট্রেশন স্থগিত। তার মানে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অনেকটাই অনিশ্চিত।
একই সঙ্গে বিএনপির জন্যও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে বিএনপি রাজনীতির মাঠে কার্যকরভাবে সক্রিয় থাকতে পারেনি। শিক্ষাঙ্গনের ক্যাম্পাসে ছাত্রদল অনুপস্থিতি রয়েছে অনেক দিন ধরে। দলের চেয়ারপারসনের দীর্ঘ কারাবাস থেকে দল তাঁকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছিল। ভাইস চেয়ারম্যান বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে দেশের বাইরে ছিলেন, এখনো দেশে ফেরেননি। তৃণমূল পর্যায়ে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও নিজেদের মধ্যে হানাহানি এখনো সামলানো যায়নি। দেশজুড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলদারির অভিযোগ এখন ব্যাপক আলোচিত।
জনমনে এ ধারণা প্রবল যে বিএনপি আওয়ামী লীগের ব্যাপারে নমনীয়। আর একই নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা আছে, যা একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এসব চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে সামনের নির্বাচন মানেই বিএনপির জয়, বিষয়টি এত সরল না-ও হতে পারে।
তবে সবচেয়ে বড় কথা, নির্বাচনের আগেই যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে নির্বাচনের পর আবার সেই পারস্পরিক দোষারোপ তথা সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ চলতেই থাকবে।
মহসীন আহমেদ লেখক
[email protected]
*মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ৪৩ বছর র জন ত আওয় ম র বয়স সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে খাবেন কোন খাবার
তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সবার। তাপমাত্র বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে অস্বস্তিও বাড়ছে। ঘর থেকে বাইরে বের হলেই ঘামে ভিজে একাকার হতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকতে খাবারের তালিকায় এমন সব খাবার রাখা উচিত যা শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে। যেমন-
১. খাদ্যতালিকায় পানিসমৃদ্ধ শাকসবজি যুক্ত করুন। যেমন-পালংশাক, ঝিঙে, লাউ, ছাঁচিকুমড়া, চিচিঙ্গে, পটল ইত্যাদি। এসব খাবারে পানির পরিমোণ বেশি থাকে। খাদ্যতালিকায় নিয়মিত এসব খাবার যোগ করলে শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক থাকবে।
২. বাজারে এখন গ্রীষ্মের ফলের সমারোহ । প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শসা, তরমুজ, আম, জাম, জামরুল, তালশাঁসসহ গরমের বিভিন্ন রাখতে পারেন। শরীরকে ঠান্ডা রাখতে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তত একটি করে ফল রাখার চেষ্টা করুন।
৩. গরমে শরীর ঠান্ডা করতে দইয়ের তুলনা নেই। এটি যেমন পেট ভাল রাখে, তেমনই রোগপ্রতিরোধ শক্তিও বৃদ্ধি করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দই রাখা জরুরি।
৪. ডাবের পানি, ঘোল, পুদিনা পাতা দেওয়া পানি বা ছাতুর শরবত, তেঁতুলের পানি দেওয়া শরবতও পেট ঠান্ডা রাখে।
৫. রান্না করা খাবারের থেকে সালাদ বা রায়তা খেলেও শরীর ঠান্ডা থাকে। আবার পান্তা ভাতের মতো খাবারও শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে