আলফাডাঙ্গায় সড়ক কার্পেটিংয়ের পরদিন উঠে গেল বিটুমিন, এলাকাবাসীর ক্ষোভে কাজ বন্ধ
Published: 17th, June 2025 GMT
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় সড়কে কার্পেটিংয়ের পরদিন বিটুমিন উঠে গেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকাবাসী। উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা থেকে বেড়িরহাট বাজার সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিটুমিনসহ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কার্পেটিং করায় এ ঘটনা ঘটেছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, গুণগত মান বজায় রেখেই কাজ করা হচ্ছে। সাধারণত কার্পেটিংয়ের পর ৭২ ঘণ্টা সময় দিতে হয়। এলাকাবাসী ভুল বুঝে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করছেন।
এলজিইডির উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা থেকে বেড়িরহাট পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়কটি মেরামতে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কাজটি পায় মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি জুন মাসের শুরুর দিকে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত শনিবার সড়কটির ভেন্নাতলা এলাকায় ১৫০ মিটার অংশে কার্পেটিং করা হয়। পরদিন দুপুরে সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় এক মোটরসাইকেলচালক পড়ে গিয়ে আহত হন। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে টান দিলে কার্পেটিং উঠে যায়। তখন সেখানে থাকা সহকারী প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারের লোকজনের কাছে বিষয়টি এলাকাবাসী জানতে চান। পরে শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে তাঁদের অবরুদ্ধ করে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী রহমত আলী বলেন, শুরু থেকে নিম্নমানের কাজ করা হচ্ছিল। বিভিন্ন সময় ঠিকাদারকে বিষয়টি বললেও তাঁরা শোনেননি। শনিবার বিকেলে কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়। রোববার দুপুরে সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক চলাচল করলে বিভিন্ন জায়গায় দেবে গিয়ে কার্পেটিং উঠে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদি হাসান বলেন, ঘটনার সময় এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের লোক ছিলেন। বিষয়টি তাঁদের কাছে জানতে গেলে স্থানীয় লোকজনের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে কয়েক শ লোক জড়ো হয়ে তাঁদের অবরুদ্ধ করে কাজ বন্ধ করে দেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সহকারী প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারের লোকজন দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, সড়কের কার্পেটিংয়ের অধিকাংশ কাজ এখনো বাকি। শুরুতেই নিম্নমানের কাজ করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মাহমুদ বলেন, শিডিউল অনুযায়ী সড়কের নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ সঠিক নয়। এলাকাবাসী বিষয়টি বুঝতে না পারায় ভুল–বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। মূলত রাস্তার কার্পেটিং করার ৭২ ঘণ্টা সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী হয় না। ২৪ ঘণ্টা পরই কার্পেটিং তুলে এলাকাবাসী এ ধরনের অভিযোগ করছেন।
এলজিইডির আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী রাহাত ইসলাম বলেন, গুণগত মান বজায় রেখেই কাজটি করা হচ্ছে। স্থানীয় কিছু লোক বিষয়টি বুঝতে না পেরে ক্ষুব্ধ হন। পরে সোমবার দুপুরে তিনি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, কার্পেটিং করার পর ৭২ ঘণ্টা সময় দিতে হয়। কিন্তু সড়কটি বেশি প্রশস্ত না হওয়ায় এক পাশ দিয়ে কাজ করে অন্য পাশে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, কাজের আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটি পুরো আটকে দিলেও এলাকাবাসী তা মানেননি। বিষয়টি স্থানীয় লোকজনকে বুঝিয়ে বললে তাঁরা ভুল বুঝতে পারেন। তিনি বলেন, আবহাওয়া ভালো হলেই আবার কাজ শুরু করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ন য় ল কজন ক জ বন ধ এল ক ব স ক জ কর প রক শ ব ষয়ট উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
৯ কিলোমিটার সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ
ঝালকাঠি সদর উপজেলার সংগ্রামনীল পুলিশ বক্স থেকে সারেঙ্গল বাজার পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে খানাখন্দে তৈরি হয়ে চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় পুরো সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। কোথাও কোথাও পিচ উঠে গিয়ে মাটি বেরিয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে কাদা-পানিতে পরিণত হয় সেসব স্থান। এতে প্রতিনিয়ত এই সড়ক দিয়ে চলচলকারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, সড়কটির আইডি নম্বর ৫৪২৪৩০১১। ২০০১-২০০২ অর্থবছরে আরডিপি-১৯ প্রকল্পের আওতায় সড়কের প্রথম চার কিলোমিটার নির্মাণ করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে আরও কিছু অংশ নির্মাণ হলেও সর্বশেষ ২০১৮ সালে জিওবি মেইনটেনেন্স প্রকল্পে মাত্র এক কিলোমিটার সংস্কার করা হয়। তারপর থেকে আর কোনো সংস্কার কাজ হয়নি।
বেহাল এই সড়ক দিয়ে একটি ইউনিয়ন পরিষদ, একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন যাতায়াত করেন। বর্ষা মৌসুমে এই দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে।
সারেঙ্গল এলাকায় বাসিন্দা মো. রেজা জানান, সংগ্রামনীল থেকে সারেঙ্গল বাজার পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তা খানাখন্দ ও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। এই সড়কে একটি ঝুঁকিপূর্ণ কালভার্ট রয়েছে। যার উপর বর্তমানে কাঠের পাটাতন দেওয়া রয়েছে। এই স্থানে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
তারুলী গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম রাসেল বলেন, “সড়কে একটি কালভার্ট রয়েছে যা এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, এর ওপর দিয়ে স্বাভাবিকভাবে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। স্থানীয়দের সহায়তায় আমরা মোটা কাঠের তক্তা দিয়ে অস্থায়ীভাবে ব্যবস্থা করেছি, যেন বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।”
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সালাউদ্দিন সোহাগ বলেন, “স্কুলগামী শিশুদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। কেউ পড়ে গিয়ে আহত হয়, কেউ আবার ভিজে স্কুলে আসে। এই সড়ক শুধু সংস্কার করলেই হবে না, পুনঃনির্মাণ করতে হবে।”
ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক শাহাজাহান মুন্সী বলেন, “কোরবানি ঈদের আগের দিন আমি এই রাস্তায় যাত্রী নিয়ে এসে দুর্ঘটনায় পড়ি। গাড়িতে থাকা বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছে। অল্পের জন্য এই যাত্রায় বেঁচে গেছি। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার না করা হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
এ বিষয়ে ৪নং কেওড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হেমায়েত উদ্দিন হিমু বলেন, “বিষয়টি আমরা বহুবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার। আশা করছি, দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
ঝালকাঠি এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী শিপলু কর্মকার বলেন, “সড়কটি সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে।”
ঢাকা/অলোক/এস