চাকরির জন্য ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি, ফেনীতে ‘সমন্বয়কের’ বিরুদ্ধে মামলা
Published: 21st, June 2025 GMT
ফেনীতে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষার আগে এক চাকরি প্রার্থীর কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি ‘সমন্বয়ক’ নাহিদ রাব্বির বিরুদ্ধে মামলা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে অভিযুক্ত নাহিদ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দাবি করছেন, অডিওটি তাঁর নয়, এটি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে তৈরি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ইফতেখার হাসান ভূঁইয়া বাদী হয়ে পরশুরাম মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন ঘুষ দাবি করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ নাহিদ রাব্বি ও চাকরিপ্রত্যাশী আবদুল কাদের। তাঁদের মধ্যে নাহিদ পরশুরাম পৌর এলাকার কোলাপাড়া গ্রামের নুরুন্নবীর ছেলে। আর কাদের অনন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম বেলাল হোসেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও মো.
পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল হাকিম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এজাহারভুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নাহিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নাহিদ দাবি করেছেন, ফাঁস হওয়া অডিওটি এসআই দিয়ে তৈরি। তিনি এমন ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
তবে অডিওটির কথোপকথনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী যুবক আবদুল কাদের। যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী নাহিদ আগে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের আগে তিনি আন্দোলন–সংগ্রামে না থেকেও বিভিন্ন সময় নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করে এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। মূলত তাঁর মুখোশ উন্মোচন করতে তিনি এমন কৌশল বেছে নিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেনী জেলার সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমান ছাত্র প্রতিনিধি মুহাইমিন তাজিম বলেন, ফেনী জেলাসহ ছয় উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কমিটি নেই। কোথাও কোনো সমন্বয়কও নেই। তবে জেলাসহ প্রতিটি উপজেলায় ছাত্র প্রতিনিধি আছে একাধিক জন। পরশুরামের নাহিদ রাব্বি একজন ছাত্র প্রতিনিধি। রাব্বি একজন ভালো মানের সংগঠক, তিনি এমন কাজ করতে পারেন, তা বিশ্বাস হচ্ছে না।
ফেনী জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ রুবাইয়েত বিন করিম বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। যাঁরা লেনদেন করতে চাইছেন, তাঁরা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও মেধার ভিত্তিতে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে।’
ঘুষ লেনদেনের অডিও ফাঁস হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো হয়েছে। তাঁরা এ বিষয়ে কাজ করছেন।’
ফেনীতে স্বাস্থ্য বিভাগের ১১৫টি শূন্য পদের বিপরীতে ১২ হাজার আবেদন জমা পড়ে। গত শুক্রবার সকালে আবেদনকৃত প্রার্থীর অর্ধেক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ক দ র পরশ র ম পর ক ষ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
এক বিপুল ব্যয়ের পরও কেন ত্রুটিপূর্ণ স্থাপনা
প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি, বিশ্বেও অন্যতম শীর্ষে। এরপরও মেট্রোরেলের পথে ৪৫টি ত্রুটি ও ঘাটতি থাকাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এসব ত্রুটি ও ঘাটতির কারণে চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৩০-৪০ বার মেট্রোরেল বন্ধ রাখতে হয়েছে।
গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে পথচারীর মৃত্যুর পর আধুনিক এই জনপরিবহনব্যবস্থার নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়েও বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল) অবশ্যই জননিরাপত্তাকে কেন্দ্রে রেখে মেট্রোরেলের ত্রুটি ও ঘাটতিগুলোকে জরুরি উদ্যোগ নিয়ে কাটিয়ে উঠতে হবে। না হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে নাগরিক আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা মেট্রোরেল নিয়েও জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই মতিঝিল-উত্তরা পর্যন্ত পথে যে ৪৫টি ত্রুটি ও ঘাটতি পেয়েছে, তার বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এর মধ্যে সংকেত ও টেলিযোগাযোগ কাজে ১০টি, বৈদ্যুতিক কাজে ১৬ ধরনের, পুরকৌশল কাজে ১০ ধরনের এবং ট্রেন ও এর সঙ্গে যুক্ত ব্যবস্থাপনায় ৯ ধরনের ত্রুটি ও ঘাটতি রয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ১৬টি স্টেশনের অন্তত ৮৯টি জায়গায় বৃষ্টির পানি ঢোকে। স্টেশনের ছাদের ফাঁক এমনভাবে তৈরি করা যে লাইনের পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মেও পানি পড়ে। যাত্রীরাও অভিযোগ করেছেন, বৃষ্টির সময় প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষার সময় ভিজে যেতে হয়। অনেক স্টেশনে ট্রেন নির্দিষ্ট জায়গায় না থেমে কিছুটা আগে-পরে থামছে।
তিন বছরের কম সময় আগে চালু হওয়া মেট্রোরেলের কিছু যন্ত্রাংশে কেন মরিচা পড়বে কিংবা শীতাতপনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কেন মাঝেমধ্যে অকার্যকর থাকবে। স্টেশনের লিফট ও এস্কেলেটরেও কেন অসংগতি থাকবে? চালুর একেবারে শুরু থেকেই টিকিট কাটার যন্ত্র ও স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায়ের ব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত মানের না হওয়ায় যাত্রীদের নানা সময়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত সমাধান না মেলাটা দুঃখজনক।
ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব ত্রুটি ও ঘাটতির কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই। যেখানে বিয়ারিং প্যাড মাথায় পড়ে নাগরিকের মৃত্যু হতে পারে, সেখানে এই ভাষ্য কতটা আশ্বস্ত করতে পারে? এসব ত্রুটির কারণে হুটহাট মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকা এবং এর ফলে যে জনদুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতি হয়, সেটাও তো বিবেচনায় নিতে হবে।
মেট্রোরেলে এসব ত্রুটি ও ঘাটতি থাকার কারণ হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজগুলো ঠিকঠাকভাবে করেনি কিংবা চুক্তি অনুযায়ী যতটুকু কাজ করার কথা ছিল, সেটা তারা করেনি। মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় শুধু পাঁচ গুণ বেশি ব্যয়ই হয়নি, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পেছনেও যে ব্যয় করা হয়েছে, সেটাও অস্বাভাবিক। এরপরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে বারবার করে চিঠি দেওয়ার পরও চাহিদামতো সমাধান না পাওয়াটা দুঃখজনক।
মেট্রোরেল নির্মাণে যে বিপুল ব্যয় হয়েছে, তাতে ঋণ পরিশোধ করতে এমনিতেই চাপের মুখে পড়তে হবে। এরপর যদি ত্রুটিপূর্ণ স্থাপনার কারণে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়ে যায়, সেটা হবে ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’। ঠিকাদার ও পরামর্শকের দিক থেকে বিয়ারিং প্যাডের ৫ শতাংশ বিচ্যুতি সহনীয় বলে আশ্বস্ত করা হলেও বাস্তবে সেটা ঘটেনি। আমরা মনে করি, শুধু চিঠি দেওয়াটাই সমাধান নয়, ত্রুটিপূর্ণ স্থাপনার জন্য ঠিকাদার ও পরামর্শককে জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন। এত বিপুল ব্যয়ের পরও কেন এমন ত্রুটিপূর্ণ মেট্রোরেল?