ফেনীতে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষার আগে এক চাকরি প্রার্থীর কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি ‘সমন্বয়ক’ নাহিদ রাব্বির বিরুদ্ধে মামলা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে অভিযুক্ত নাহিদ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দাবি করছেন, অডিওটি তাঁর নয়, এটি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে তৈরি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ইফতেখার হাসান ভূঁইয়া বাদী হয়ে পরশুরাম মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন ঘুষ দাবি করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ নাহিদ রাব্বি ও চাকরিপ্রত্যাশী আবদুল কাদের। তাঁদের মধ্যে নাহিদ পরশুরাম পৌর এলাকার কোলাপাড়া গ্রামের নুরুন্নবীর ছেলে। আর কাদের অনন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম বেলাল হোসেন।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও মো.

ইফতেখার হাসান ভূঞা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিও শুনেছেন। ওই অডিওতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ নাহিদ রাব্বি আবদুল কাদের নামের এক চাকরিপ্রত্যাশীর কাছে ঘুষ দাবি করেছেন। ২ মিনিট ২১ সেকেন্ডের অডিওতে নাহিদ রাব্বি ফেনী সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অফিস সহকারী–কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে আবদুল কাদেরকে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এমন ঘটনায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল হাকিম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এজাহারভুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নাহিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নাহিদ দাবি করেছেন, ফাঁস হওয়া অডিওটি এসআই দিয়ে তৈরি। তিনি এমন ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

তবে অডিওটির কথোপকথনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী যুবক আবদুল কাদের। যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী নাহিদ আগে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের আগে তিনি আন্দোলন–সংগ্রামে না থেকেও বিভিন্ন সময় নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করে এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। মূলত তাঁর মুখোশ উন্মোচন করতে তিনি এমন কৌশল বেছে নিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেনী জেলার সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমান ছাত্র প্রতিনিধি মুহাইমিন তাজিম বলেন, ফেনী জেলাসহ ছয় উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কমিটি নেই। কোথাও কোনো সমন্বয়কও নেই। তবে জেলাসহ প্রতিটি উপজেলায় ছাত্র প্রতিনিধি আছে একাধিক জন। পরশুরামের নাহিদ রাব্বি একজন ছাত্র প্রতিনিধি। রাব্বি একজন ভালো মানের সংগঠক, তিনি এমন কাজ করতে পারেন, তা বিশ্বাস হচ্ছে না।

ফেনী জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ রুবাইয়েত বিন করিম বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। যাঁরা লেনদেন করতে চাইছেন, তাঁরা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও মেধার ভিত্তিতে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে।’

ঘুষ লেনদেনের অডিও ফাঁস হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো হয়েছে। তাঁরা এ বিষয়ে কাজ করছেন।’

ফেনীতে স্বাস্থ্য বিভাগের ১১৫টি শূন্য পদের বিপরীতে ১২ হাজার আবেদন জমা পড়ে। গত শুক্রবার সকালে আবেদনকৃত প্রার্থীর অর্ধেক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ক দ র পরশ র ম পর ক ষ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব

বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের প্রেক্ষাপটে প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যগত ইস্যু। এটি এখন আর কেবল শহরকেন্দ্রিক কোনো সমস্যা নয়, বরং দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া একটি বাস্তবতা। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নগরায়ণ এবং ভোক্তা অভ্যাসের পরিবর্তনের ফলে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে, যার পরিণতিতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এই বর্জ্য যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা না করা হলে ভবিষ্যতে তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের জন্য কতটা বিপজ্জনক, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যখন দেখা যায় এই বর্জ্য জলাশয়, নদনদী, খাল-বিল এমনকি সাগরেও গিয়ে পৌঁছায়। এটি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, জলজ প্রাণীর জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং সামগ্রিকভাবে বাস্তুসংস্থান বিপর্যস্ত হয়। শহরাঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে ফেলা প্লাস্টিক বর্জ্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে বর্ষাকালে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। একদিকে এটি যেমন জনদুর্ভোগ বাড়ায়, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে।
প্লাস্টিক বর্জ্যের আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, এটি পরিবেশে শত বছর পর্যন্ত থেকে যেতে পারে এবং সহজে পচে না। ফলে এটি মাটির উর্বরতা নষ্ট করে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, যখন এই বর্জ্য পোড়ানো হয়, তখন তা থেকে বায়ুতে বিষাক্ত রাসায়নিক, যেমন– ডাইঅক্সিন ও ফিউরান ছড়িয়ে পড়ে, যা মানুষের শ্বাসযন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে। খাদ্য ও পানির মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করা মাইক্রোপ্লাস্টিক ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন পরিবেশগত চাপে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্লাস্টিক বর্জ্য যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করা হয়, তাহলে তা পরিবেশগত দুর্যোগকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। আজকের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবেশগত সুরক্ষা ও পরিবেশগত বিধিমালা মেনে চলা বিশ্বব্যাপী রপ্তানি বাজারে প্রবেশাধিকার, মানসম্পন্ন মূলধন এবং ভোক্তাদের আস্থায় প্রবেশের জন্য অত্যাবশ্যক পূর্বশর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আগামী দিনে বাংলাদেশের রপ্তানি ও বিনিয়োগ প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হয়ে উঠবে। পরিবেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে তাই টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, সঠিক কাঠামো ও বাস্তবভিত্তিক কৌশল না থাকায় দেশে এখন পর্যন্ত একটি সমন্বিত প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই সংকট নিরসনে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে কার্যকর ও পরীক্ষিত ব্যবসায়িক মডেল গ্রহণ করা বিস্তৃত বেসরকারি খাতের জন্য সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হবে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকেই ২০২২ সালে ইউনিলিভার, ইপসা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার লক্ষ্য ছিল চট্টগ্রাম নগরীতে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। এই উদ্যোগটি একটি সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথক্‌করণ, রিসাইক্লিং এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় জনসাধারণ, বর্জ্য সংগ্রহকারীদের এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারকে সম্পৃক্ত করে প্রকল্পটি একদিকে যেমন প্লাস্টিক বর্জ্য কমাচ্ছে, অন্যদিকে বর্জ্য সংগ্রহকারীদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
জুন ২০২২ থেকে এপ্রিল ২০২৫ সময়ে প্রকল্পটি প্রায় ২৪ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৬ হাজার ৮০ টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (এসইউপি) এবং ৭,৯২০ টন রিসাইকেলযোগ্য রিজিট প্লাস্টিক। এই উদ্যোগ দেখিয়েছে, একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রয়াস থাকলে বাংলাদেশেও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সফলতা অর্জন সম্ভব। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সার্কুলার বা চক্রাকার ইকোনমি মডেল গ্রহণের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করে পুনর্ব্যবহার ও পুনঃচক্রায়নের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব, যা পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ