শিক্ষার্থীর মৃত্যু, দেরিতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর অভিযোগে চিকিৎসাকেন্দ্র ঘেরাও
Published: 22nd, June 2025 GMT
চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসাইন মারা গেছেন। আজ রোববার সকালে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান। এর আগে গতকাল শনিবার তাঁর জন্য দেরিতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছেন, এমন অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র ঘেরাও করেছেন একদল শিক্ষার্থী।
রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান ফটক আটকে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি শুরু করেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, জুবায়ের শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। পরে তিনি ক্যাম্পাসে ফেরার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে যোগাযোগ করেন। তবে চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে জানানো হয়, অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট, ঢাকা পাঠানো যাবে না। এর চার ঘণ্টা পর জুবায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে ক্যাম্পাসে ফেরেন। রোববার ভোররাতে তাঁর পেটে আবার ব্যথা শুরু হলে তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেলে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে তিনি মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ইতিহাস বিভাগের সাকিল আলী বলেন, শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে জুবায়ের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁকে কল দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, তাঁর বুকে প্রচণ্ড ব্যথা করছে, তিনি ক্যাম্পাসে ফিরতে চান। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অনেক বার কল দিয়েও লাভ হচ্ছে না। দায়িত্বরত চিকিৎসা কর্মকর্তা তাঁকে বলেছেন, অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট, ঢাকায় পাঠানো যাবে না। অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে কল দিলে তিনিও নানা অজুহাত দেখান। এভাবে তাঁকে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়েছে বলে তাঁকে জানান জুবায়ের।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, ক্যাম্পাসে অনেক শিক্ষার্থী সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে অকালে মারা গেছেন। মেডিকেলে পর্যাপ্ত জনবল নেই। বছরের পর বছর মেডিকেল সেন্টার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চললেও তাতে কোনো ফল আসে না। তাই তাঁরা অতি দ্রুত মেডিকেল সেন্টারের কার্যকর সংস্কার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা মো.
জোবায়ের হোসাইনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান। আজ দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘জোবায়ের হোসাইনের অকালমৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে হারাল। তাঁর পরিবারের জন্য এ ক্ষতি অপূরণীয়।’ তিনি জোবায়ের হোসাইনের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
এ ছাড়া জোবায়ের হোসাইনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র হ স ইন র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
হয়তো মেয়েকে জড়িয়ে সাহস দিতে চেয়েছিলেন ইরানি মা, তখনই পড়ল ইসরায়েলি বোমা
১৭ বছর বয়সী কিশোরী মেয়েকে বাসায় রেখে কাজে যেতেন ইরানি মা তাবাসসুম পাক। ইসরায়েলের চালানো বোমা ও বিমান হামলার শব্দে ভয় পেত মেয়ে। এ কারণে ১৫ জুন কাজ শেষে দ্রুত বাসায় ফিরছিলেন ৪৫ বছর বয়সী তাবাসসুম। হয়তো ভেবেছিলেন, বাসায় ফিরে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলবেন, যুদ্ধের শব্দে ভয় পেয়ো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা আর হলো না। বাসায় ফেরার পথে ইসরায়েলি হামলায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
১৫ জুন রাজধানী তেহরানের সাবুনচি স্ট্রিট–সংলগ্ন নিজের বাসার কাছেই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন তাবাসসুম।
সংবাদ সংস্থা রোকনা বলেছে, বাসায় ফেরার আগে তাবাসসুম তাঁর এক স্বজনকে ফোনে জানিয়েছিলেন, তিনি বাসার দিকে রওনা দিয়েছেন। তাই দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এর পর থেকে তিনি আর ফোন ধরেননি।
তাবাসসুমের স্বজন সারা বলেন, বারবার ফোন করে সাড়া না পাওয়ায় তাঁর ভাই মুঠোফোনে লোকেশন ট্র্যাক করে দেখেন, তাঁদের বাসার পাশের গলিতে তাবাসসুমের গাড়ি থেমে আছে। পরে পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়ে দেখেন, বোমার আঘাতে ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে তাঁর গাড়ি আটকে আছে।
আরও পড়ুনতেহরান ছেড়ে যাচ্ছে ওরা, কোথায় তা জানা নেই২২ ঘণ্টা আগে১৫ জুন প্রথম দিকের উদ্ধার হওয়া নিহত মানুষের মধ্যে একজন। তাবাসসুম সেদিন ওই গলি ধরে পার্কিংয়ের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। যেন গাড়ি দ্রুত পার্ক করে তিনি মেয়ের কাছে যেতে পারেন।
সারার ভাষ্য, ১৫ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত তাঁর পরিবার হাসপাতাল ও কাহরিজাকের ফরেনসিক ভবনে তাবাসসুমের মরদেহ খুঁজেছে। শেষ পর্যন্ত ১৭ জুন কাহরিজাকেই তাঁর মরদেহ শনাক্ত করা হয়।
ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানির বলেন, ইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়া অন্তত ৩০ জন নারী ও শিশুর মধ্যে তাবাসসুম একজন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ জুন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত ও ১ হাজার ২৭৭ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১২০ জনই নারী ও শিশু।