চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সড়ক পারাপারের সময় কাভার্ড ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ছয়টায় উপজেলার বারিয়ারহাট পৌর বাজারে পদচারী–সেতুর দক্ষিণ পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম প্রদীপ কুমার দে (৬৮)। তিনি মিরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মৃত শ্যামা প্রসাদ দের ছেলে। মিরসরাইয়ের বারিয়ারহাট পৌর বাজারে চা–পাতার পাইকারি ব্যবসা ছিল তাঁর। আজ বিকেলে পারিবারিক শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

প্রদীপ কুমারের ভাতিজা রাজীব দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকালে তিনি ব্যবসায়িক কাজে চট্টগ্রাম শহরে যাচ্ছিলেন। ভোরে পৌর বাজারের পদচারী–সেতুর দক্ষিণ পাশে রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি কাভার্ড ভ্যান তাঁকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি।’

জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছি আমরা। আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহত ব্যক্তির লাশ তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত কাভার্ড ভ্যানটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তবে দুর্ঘটনার পর গাড়ির চালক পালিয়ে গেছেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস ম রসর

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান কীভাবে প্রতিশোধ নিতে পারে

প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল ইরানের ওপর বোমা হামলা চালানোর পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রও সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে। তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হেনেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে। এই প্রতিক্রিয়া খুব শিগগির আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন হামলার পর ইরানি টেলিভিশনের এক উপস্থাপক মন্তব্য করেছেন, ‘মি. ট্রাম্প, আপনি শুরু করেছেন, শেষ করবে আমরা।’

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইরান কীভাবে প্রতিশোধ নিতে পারে? সবচেয়ে সম্ভাব্য যে জবাবটি আসতে পারে, তা হলো অসামরিক যুদ্ধ কৌশল। এর মধ্যে থাকতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ বা ইরানের মিত্রগোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোতে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও সন্ত্রাসী হামলা।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা চালিয়ে একটি ‘খুব বড় লাল সীমা’ অতিক্রম করেছে। এখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যদি কোনো প্রতিক্রিয়া না জানান, তাহলে তিনি কট্টরপন্থী মহলের সমর্থন হারাতে পারেন। তাই ইরান যে পাল্টা আঘাত হানবে, সেটি অনেকটাই নিশ্চিত। তবে তা কখন হবে, তা এখনো অস্পষ্ট।

সবচেয়ে সহজ ও প্রত্যাশিত লক্ষ্য হবে মধ্যপ্রাচ্যের যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি, যেখানে হাজার হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছেন। বাহরাইন, ইরাক, জর্ডান, কাতার, সিরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি রয়েছে।

এ ছাড়া দূতাবাস, কূটনৈতিক ভবন ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্বার্থও হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব স্থাপনায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হতে পারে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী বা ইরাকের শিয়া–মিলিশিয়ার মতো ইরানের মিত্রগোষ্ঠীগুলোও সেসব জায়গায় হামলা চালাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ইসরায়েলে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে। ইরাক ও লেবাননের দূতাবাসগুলো বাড়তি মার্কিন কর্মীদের দেশ ছাড়তে বলেছে।

সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে ইরাকে ইরান–সমর্থিত কাতাইব হিজবুল্লাহ। এই শিয়া–মিলিশিয়া গোষ্ঠী এর আগে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। তারা আবারও তাই করতে পারে। কাতাইব হিজবুল্লাহর নেতা আবু হুসেইন আল-হামিদাওয়ি এক সপ্তাহ আগে বলেছিলেন, ‘আমেরিকা যদি এই যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে, আমরা তাদের স্বার্থ ও ঘাঁটিগুলোতে সরাসরি আঘাত হানব।’

পারস্য উপসাগরের অন্যান্য দেশগুলোও ইরানের নিশানায় থাকতে পারে। যেমন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার সময় হুতিরা সৌদি আরবের দুটি তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। এর কিছু আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলে তেল ট্যাংকারে হামলা হয়েছিল। এবারও ইরান ও তার মিত্ররা উপসাগর ও হরমুজ প্রণালিতে হামলা করতে পারে। সমুদ্র মাইন বসানো, তেল ট্যাংকার বা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারকে অস্থির করে তোলা হতে পারে তাদের কৌশল।

গত ২০ মাসে ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তাদের সামরিক ক্ষমতা পুরোপুরি শেষ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়ানোয় এখন ইরান এই নেটওয়ার্ক সক্রিয় করতে পারে।

অতীতে হিজবুল্লাহ লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপে ইসরায়েলি ও ইহুদি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। নব্বইয়ের দশকে আর্জেন্টিনায় ইসরায়েলি ও ইহুদি কেন্দ্রগুলোতে হামলায় শতাধিক মানুষ মারা যান। ২০১২ সালে বুলগেরিয়ার বুরগাসে এক বাস বোমা হামলায় পাঁচজন ইসরায়েলি পর্যটক নিহত হন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিজবুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রেও হামলার পরিকল্পনা করেছে। ২০১৭ সালে নিউইয়র্কে দুটি সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা স্থাপনায় নজরদারির অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৩ সালে নিউ জার্সির এক বাসিন্দা ১২ বছরের কারাদণ্ড পান।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের কোনো হামলা ঘটেনি, তবু ইরান বেশ কয়েকটি গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে ছিল জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন, মাইক পম্পেও এবং এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা।

ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। এফবিআইয়ের পরিচালক কাশ প্যাটেল সম্প্রতি হিজবুল্লাহর স্লিপিং সেলগুলোর ওপর নজরদারি বাড়িয়েছেন।

সামরিক দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা ইরানের ভেতরে ঢুকে ইরানি পরমাণুবিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে নিয়মিত টার্গেট কিলিং করছে, যা থেকে এটা স্পষ্ট বোঝা যায়।

তবে অসামরিক বা সন্ত্রাসী হামলাই ইরানের প্রকৃত শক্তি। ১৯৮৩ সালে লেবাননে ইউএস মেরিন ব্যারাকে বোমা হামলায় ২৪১ মার্কিন সেনা নিহত হন। ১৯৯৬ সালে খোবার টাওয়ার বোমা হামলায় ১৯ জন মার্কিন বিমানবাহিনীর সদস্য নিহত হন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগের মেয়াদে তিনি কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইরান তখন প্রতিশোধ হিসেবে কয়েক মাস ধরে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল। আমেরিকার বোমা হামলার পর ইরান এবারও তীব্র ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।

কলিন পি  ক্লার্ক নিউইয়র্ক সিটির গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দ্য সউফান গ্রুপের গবেষণা পরিচালক

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ